X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন লবিংয়ে ব্যস্ত: রাষ্ট্রপতি

রাবি প্রতিনিধি
৩০ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:১১আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ২০:৫২

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশ সমাবর্তনে বক্তব্য দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ (ছবি: রাজশাহী প্রতিনিধি) সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষককে আদর্শ ও ন্যায়-নীতির প্রতীক হতে হয়। কিন্তু, সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে প্রকাশিত খবর আচার্য হিসেবে আমাকে মর্মাহত করে। আজকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকরা প্রশাসনের বিভিন্ন পদ-পদবি পাওয়ার লোভে লবিংয়ে ব্যস্ত।’ শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একাদশ সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।

এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অনেক শিক্ষক নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেও পিছপা হন না। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেনদেনে সম্পৃক্ত হন। এটি অত্যন্ত অসম্মানের ও অমর্যাদাকর। সাধারণ মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদার উচ্চাসনেই দেখতে চান। তাই ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্য নীতি ও আদর্শের সঙ্গে আপস করবেন না।’

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও অন্য অতিথিরা (ছবি: রাজশাহী প্রতিনিধি) সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঘটা কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা উন্নত জাতি তৈরির মহান কারিগর। শিক্ষকের কথা কেবল বক্তৃতা নয়, তা বাণী। বাণী শ্রোতার বুদ্ধি ও বিবেককে জাগ্রত করে। বাণী শ্রোতার অন্তরে জ্ঞানের মশাল প্রজ্বলিত করে। বিশ্ববিদ্যালয় মূলত জ্ঞানচর্চা, মুক্তচিন্তা ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশের ক্ষেত্র। এখানে নিরন্তর গবেষণার মধ্য দিয়ে নবতর জ্ঞান ও বহুমুখী সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মননে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কিছু কিছু ঘটনা এই মূল্যবোধের বিকাশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা যেন এ ব্যাপারে বিশেষভাবে সচেতন থাকি এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানচর্চা, মুক্তচিন্তা ও মানবিক মূল্যবোধের পীঠস্থান হিসেবে সমুন্নত রাখি।’

গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বলেন, ‘তোমরা দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে ও অগ্রগতি নির্ভর করছে তোমাদের ওপর। তোমাদের তারুণ্য, জ্ঞান, মেধা ও প্রজ্ঞা হবে দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে একজন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সব সময় সত্য ও ন্যায়কে সমুন্নত রাখবে। নৈতিকতা ও দৃঢ়তা দিয়ে দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত ইতিহাসের কথা মনে রেখে উন্নত বাংলাদেশ গঠনে গ্র্যাজুয়েটরা নিজেদের নিয়োজিত করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বক্তব্যের শুরুতে রাষ্ট্রপতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধসহ স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের স্মরণ করেন।

সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ (ছবি: রাজশাহী প্রতিনিধি) অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারে সমাবর্তন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সমাবর্তনকে কমেন্সমেন্ট বলা হয়। কারণ, তোমরা তোমাদের অর্জিত শিক্ষাকে সমাজের কল্যাণের উদ্দেশ্যে আজ নতুন যাত্রা সূচনা করছো। প্রার্থনা করি, তোমরা দেশের প্রতি তোমাদের কর্তব্য সম্পূর্ণভাবে অনুধাবন করবে। সর্বোপরি সমগ্র বিশ্বকে আমাদের সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্ষেত্র রূপে গড়ে তুলতে সদর্থক ভূমিকা পালন করবে।’

সমাবর্তনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার উচ্চশিক্ষার প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে এবং তা বাস্তবায়নে কাজ করছে। গবেষণা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, যা মোটেও কাম্য নয়। নিত্যনতুন গবেষণায় দেশ এগিয়ে যাবে, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে। এটিই আমাদের সবার কাম্য। উচ্চশিক্ষাকে আরও গতিশীল করার জন্যে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণা কার্যক্রমে আরও মনোযোগী হওয়া দরকার।’

এর আগে, বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে রাষ্ট্রপতি সমাবর্তন মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। সাড়ে ৩টায় জাতীয় সঙ্গীত এবং পরে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। রাষ্ট্রপতি সমাবর্তনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পরে রাষ্ট্রপতি গ্র্যাজুয়েটদের ডিগ্রি প্রদান করেন। 

/এমএএ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুজিবনগর দিবস পালনের নির্দেশ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই ধাপে কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ পালনের নির্দেশ
টেস্ট পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি নিলে ব্যবস্থা
সর্বশেষ খবর
ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করলো ইরান, তদন্ত চলছে
ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করলো ইরান, তদন্ত চলছে
শিল্পী সমিতির নির্বাচন, মিশা-ডিপজলে কুপোকাত কলি-নিপুণ
শিল্পী সমিতির নির্বাচন, মিশা-ডিপজলে কুপোকাত কলি-নিপুণ
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া