করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে দেশ কার্যত লকডাউন। এর প্রভাব পড়েছে নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের উপর। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা গ্রামের মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে এসেছেন, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল না থাকায় অধিকাংশকেই টিউশনি করে কিংবা বিভিন্ন জায়গায় খণ্ডকালীন কাজ করে নিজেদের খরচ চালাতে হয়। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাবেক ও বর্তমান অনেক শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একটু ভিন্নভাবে কাজ করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা।
তারা ফেসবুকে নিজেদের একটি গ্রুপের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে ‘অ্যা টিম অব ট্রু সোউল’ স্লোগান নিয়ে এই পরিস্থিতিতে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকায় মেসে বা বাসায় থাকা শিক্ষার্থীদেরকে বাজার খরচ পৌঁছে দিয়েছেন তারা।
উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে পঞ্চম ব্যাচের এই উদ্যোগের উদ্যোক্তারা বলেন, ‘আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ও এই করোনা পরিস্থিতিতে বিপদগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছি সম্পূর্ণ মানবিকতার জায়গা থেকে। আমরা যেহেতু ব্যাচের বন্ধুরা মিলে একটি প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাতে পেরেছি, সেহেতু আমরা শুধু এই করোনা পরিস্থিতি না, ভবিষ্যতে দেশের যেকোনও ক্রান্তিলগ্নে এক হয়ে কাজ করবো।’
ফান্ড কালেকশনের দায়িত্বে থাকা আরেকজন উদ্যোক্তা ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের ব্যাচের যেসব বন্ধুদের সাথে আমরা যোগাযোগ করতে পেরেছি, সকল বন্ধুই এই উদ্যোগে বিভিন্নভাবে আমাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে।’
কার্যক্রমের বর্তমান ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে নৃবিজ্ঞান বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী রিয়াজ আহমেদ সজল বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব ফান্ড থেকে দেড়শ জনেরও বেশি মানুষের বাজার নিশ্চিত করতে পেরেছি। এছাড়া আমাদের অন্যান্য উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় জবি’র ৫০ এরও অধিক বিপদগ্রস্ত শিক্ষার্থীর বাসায় কিংবা মেসে সরকারি ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পেরেছি। শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের পরিচয় গোপন রাখছি যেন তারা লজ্জাবোধ না করে।’
কোন ধরনের প্রচারণা ছাড়া কিভাবে এই বিপদগ্রস্তদের খুঁজে পাচ্ছেন সেই বিষয়ে উদ্যোক্তারা বলেন, ‘আমরা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের বন্ধুরা মিলেই কাজ করছি, তাই এখানে প্রত্যেকেই এর উদ্যোক্তা। সবাই নিজ নিজ বিভাগের শিক্ষক ও বিভিন্ন ব্যাচের ব্যাচ প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করে বিপদগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের কাছে উপহার পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষকরাও ব্যক্তিগতভাবে আমাদের এই ব্যাপারে সাহায্য করেছেন।’
এদিকে এই উদ্যোগ সম্পর্কে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমার বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমাকে তাদের এই উদ্যোগের ব্যাপারে জানানো হয়। এমন উদ্যোগে অবশ্যই আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে চাই। তারা যে মানবিক উদ্যোগ নিয়েছে, এর থেকে বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীরাও অনেক কিছু শিখতে পারবে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দিন মাহী বলেন, ‘আমি পঞ্চম ব্যাচের এই উদ্যোগের কথা জেনে তাদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি এবং আমি বিপদগ্রস্তদেরকে পঞ্চম ব্যাচের এসকল উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছি। তারা এই ধরনের মানবিক যেকোনও কর্মকাণ্ডে শিক্ষকদের পাশে পাবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা কামাল বলেন, ‘পঞ্চম ব্যাচের এই সাবেক শিক্ষার্থীরা তাদের এই উদ্যোগ সম্পর্কে আমাকে যখন অবহিত করেছে, আমি সাথে সাথেই তাদেরকে এটার জন্যে ধন্যবাদ জানিয়েছি এবং পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছি। এভাবে সবাই চিন্তা করলে অনেক কিছুই সুন্দর হতে পারে।’