X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘বঙ্গবন্ধু’র নামে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ চায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা প্রতিনিধি
১২ নভেম্বর ২০২০, ১৬:০৫আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২০, ১৬:০৫

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

আগামী একশ বছরের একাডেমিক ও অবকাঠামাগত চাহিদা মাথায় রেখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য বর্তমানের ১০৬ একর জমির সঙ্গে ক্যাম্পাস সংলগ্ন আরও ২০৩ একর খালি বা পতিত জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়টির সম্প্রসারিত এই নতুন ক্যাম্পাস করা হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নামে। নাম হবে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু ক্যাম্পাস’।  জমি অধিগ্রহণের ব্যাপার খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে এরইমধ্যে পত্র দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং একই মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও এ ব্যাপার অবগতির জন্য পত্র দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তাবিত এলাকায় কোনও বাড়িঘর নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন না দেওয়া বা ওই জমিতে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) কর্তৃক কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে ওই কর্তৃপক্ষের চেয়ারমানের কাছেও এরইমধ্যে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এসব উদ্যোগের বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, নতুন এই ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করে এতে আগামী দিনের চাহিদার আলোকে যুগোপযোগী শিক্ষা, গবেষণাসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন নতুন বিষয় খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সামুদ্রিকসম্পদ বিকাশ, আহরণ, সংরক্ষণের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির বিকাশ, জলবায়ু ও উপকূলীয় পরিবেশ ও প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, সুন্দরবন নিয়ে অধিকতর গবেষণা, মহাকাশ বিজ্ঞানসহ নতুন নতুন কারিগরি ও প্রযুক্তিগত বিষয়, সামাজিক ও মানবিক বিদ্যার নতুন নতুন শাখায় উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ওপর আগামী দিন জোর দেওয়া হবে।

জানা গেছে, ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হচ্ছে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বধ্যভূমির ওপর।  ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠালগ্নে বাংলাদশ বেতারের পতিত ১০৩ একর জমির ওপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ১৯৯০-৯১ সালে শিক্ষা কার্যক্রমের শুরুতে ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) সংখ্যা ছিল মাত্র ৪টি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৮০ জন। বর্তমানে ডিসিপ্লিনের সংখ্যা ২৯টি এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। এছাড়াও রয়েছে দুটি ইনস্টিটিউট, ২টি সেন্টার ও একাধিক সহশিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নতুন করে তেমন কোনও জমি অধিগ্রহণ হয়নি। তবে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমেরও ৩০ বছর পার হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ওই জমির ওপর ৩টি একাডেমিক ভবন, ৫টি আবাসিক হল, একটি সুপরিসর লাইব্রেরি ভবন, একটি গবেষণাগার, ফিটনেস সেন্টার, ২টি মসজিদ. ১টি মন্দির, দুটি প্রশাসনিক ভবন, একটি গেস্ট হাউজ, ৬টি আবাসিক কোয়ার্টার, একটি খেলার মাঠসহ আরও ৭টি ডিসিপ্লিনের প্রয়োজনের তুলনায় খুব ছোট আকারে মাঠ ও গবেষণাগার তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব ডিসিপ্লিনের মাঠ-গবেষণার করার জন্য আরও জমি প্রয়োজন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (সংগৃহীত ছবি)

এছাড়া চলতি উন্নয়ন পরিকল্পনায় আরও একটি দশতলা একাডমিক ভবন (জয়বাংলা ভবন), লালন সাঁই মিলনায়তন (টিএসসি) সুলতানা কামাল জিমনেসিয়াম ভবন. শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী মেডিকেল সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি বড় ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলতি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এসব ভবনের কাজ আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে শেষ হলে ক্যাম্পাস আর কোনও খালি জায়গা থাকবে না। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী একশ’ বছরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা চিন্তা করে কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সংলগ্ন আর মাত্র ২০৩ একর জায়গা রয়েছে, যেখান কোনও কৃষি ফসল হচ্ছে না। এখানে জমির প্লট করে বা ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু ঘর-বাড়ি নির্মাণ হয়েছে, যা এখনও সংখ্যায় সীমিত। এসব বাড়ি-ঘর নির্মাণে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কোনও অনুমোদন দেয়নি। 

দেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের রপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের অভিলক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাস সংযুক্ত উত্তর-পশ্চিম-পূর্ব এলাকার ২০৩.০৩ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য গত ৪ ফেব্রুয়ারি খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয় বলে জানা যায়। এতে বলা হয়, এসব জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকে বিদ্যমান সড়ক-মহাসড়ক হবে (দক্ষিণে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক, পশ্চিমে রপসা বাইপাস সড়ক, উত্তর সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়ক এবং পূর্ব গল্লামারী লিনিয়ার পার্ক ওয়াপদা সড়ক) বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা। ফলে বিদ্যমান ও ভবিষ্যৎ প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপরিকল্পিত সম্প্রসারণ সম্ভব হবে। অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত ওই এলাকাটিকে এরইমধ্যে বঙ্গবন্ধু ক্যাম্পাস হিসেবে নামকরণ করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে কানা বদ্ধ জলাশয় হিসেবে বিবেচনা করলে চলবে না। যুগের চাহিদা অনুযায়ী জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে নিরন্তর গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। একইসঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে এবং সকল ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়। তাই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বেদী (সংগৃহীত ছবি)

তিনি বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির প্রধান অন্তরায় হচ্ছে জায়গার অভাব। এই এলাকাটি ডোবা (নরম) মাটির হওয়ার পরও আমরা বহুতল ভবন নির্মাণের দিকে এগুচ্ছি। কিন্তু, তারপরও আগামী পাঁচ-দশ বছর পর এখানে জায়গার সংকট তীব্র হয়ে দেখা দেবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যদি আগামী পঞ্চাশ বা একশ বছরের ভবিষ্যৎ চিন্তা বা পরিকল্পনার কথা ভাবা হয় তা হলে বর্তমান ক্যাম্পাস সংলগ ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণ খুবই জরুরি। তা না হলে এসব জায়গায় অসংখ্য ঘরবাড়ি নির্মিত হলে ভবিষ্যতে নানাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা সার্বিক বিষয় চিন্তা করে সংলগ্ন ২০৩ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে অধিগ্রহণের প্রস্তাব করেছি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস আমরা বঙ্গবন্ধুর নামে করতে চাই। এর কারণ  মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমিতে গড়ে ওঠা একমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয় যতদিন থাকবে বঙ্গবন্ধুর নাম ও স্মৃতি ততদিন অম্লান হয়ে থাকবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ আপামর মানুষ অনুপ্রাণিত হবে। একইসঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষের অসংখ্য সন্তান এখান থেকে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ লাভ করে দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়াজিত হতে পারবে, যা ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। দেশে উচ্চশিক্ষার বিকাশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম আগ্রহ ও অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের জন্য জমিসহ পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী যে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী একশ বছরের ভবিষ্যৎ প্রয়োজনও অনুভব করবেন এবং প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দিয়ে খুলনাবাসী তথা এতদাঞ্চলের মানুষের নতুন এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বার উন্মোচন করবেন।”

এ ব্যাপার বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ জামান বলেন,‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের উদ্যাগকে আমরা স্বাগত জানাই। এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। কারণ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এতদাঞ্চলের আপামর মানুষের প্রাণের দাবিতে এবং দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৩০ বছরে এর একাডমিক কার্যক্রম দেশ-বিদেশে সুনাম ও ভাবমূর্তি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। আমরা বৃহত্তর খুলনাবাসী অত্যন্ত খুশি। এখন এ বিশ্ববিদ্যালয় আগামী একশ বছরের প্রয়োজনকে সামনে রেখে  সম্প্রসারণের জন্য বর্তমান ক্যাম্পাস সংলগ্ন জমি অধিগ্রহণের যে প্রস্তাব করেছে তা খুবই যুক্তিযুক্ত। তাই বৃহত্তর স্বার্থে সরকার এ জমি অধিগ্রহণে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার পথকে সুগম করবে বলে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী এবং একইসঙ্গে আমরা এ ব্যাপারে দাবিও জানাই।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বেড়েছে
দারুল ইহসানের বৈধ সনদধারীদের এমপিওতে বাধা নেই
সর্বশেষ খবর
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি