X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

আস্থার সংকটে ভুগবে না পুলিশের ‘কমিউনিটি ব্যাংক’

জামাল উদ্দিন
২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৫:০৩আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৫:৪৩

বাংলাদেশ পুলিশ পুলিশ সদস্যদের কল্যাণেই করা হচ্ছে পুলিশের ব্যাংক ‘কমিউনিটি ব্যাংক’। স্বল্প সুদে পুলিশ সদস্যদের ঋণ দেওয়াসহ কর্মক্ষেত্রে হতাহতদের আর্থিক সহায়তা, চিকিৎসা ও শিক্ষায় সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে এই ব্যাংকে। এছাড়াও পুলিশ পরিবারের যোগ্য সদস্যদের কর্মসংস্থানের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। এ ব্যাংকের লভ্যাংশ যাবে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টে। দেশের অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে মানুষের আস্থার সংকট থাকলেও পুলিশের ‘কমিউনিটি ব্যাংক’ নিয়ে এরকম কিছু হবে না বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হবে ‘কমিউনিটি ব্যাংক’। আগামী আগস্টের মধ্যেই ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে ৬ থেকে ১০টি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাংক স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী তাদের জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী ৪০০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করতে পারলে ব্যাংকের অনুমোদন দিতে সরকারের কোনও আপত্তি নেই। এরপরই পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ড পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়। সিভিল স্টাফ ছাড়াও আইজিপি থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৬৬ হাজার পুলিশ সদস্যের প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে অবশ্য আরও দুই হাজার বাড়িয়ে ২৭ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। এরইমধ্যে ৪৩০ কোটি টাকার বেশি মূলধন সংগ্রহ করা হয়েছে। শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে ৪০০ কোটি টাকার মূলধন হস্তান্তর করা হবে। বাড়তি টাকা দিয়ে ব্যাংকের প্রাথমিক ব্যয় চালানো হবে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কল্যাণ ট্রাস্টের আয় বৃদ্ধি হলে পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসায় এবং কর্মক্ষেত্রে হতাহতদের আর্থিক সহায়তা বাড়ানো হবে। পুলিশ সদস্যদের অবসর সুবিধা, তাদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি ও ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হবে। এই ব্যাংকের মাধ্যমেই এখন থেকে পুলিশ সদস্যদের বেতন-ভাতা দেওয়া হবে। এছাড়া, পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে গুলশানের পুলিশ প্লাজায় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। মিডল্যান্ড ব্যাংকের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মশিহুল হক চৌধুরীকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ব্যাংক স্থাপনের ক্ষেত্রে সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হকের উদ্যোগ ছিল বেশি। এত বাণিজ্যিক ব্যাংক থাকতে পুলিশ ব্যাংকের কেন প্রয়োজন হলো জানতে চাইলে শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংকের আয় থেকে পুলিশ সদস্যরা যাতে একটু সুযোগ -সুবিধা পান সেজন্য এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্যাংকের লভ্যাংশ তো পুলিশের কল্যাণ ট্রাস্টে যাবে। সেখান থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে। এতে তারা কিছু সুযোগ-সুবিধা পাবেন। চাকরিতে থাকা অবস্থায় কিংবা অবসরে গেলেও তারা উপকৃত হবেন। পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।’

সাবেক আইজিপি শহীদুল হক বলেন, ‘কর্তব্যরত অবস্থায় কোনও পুলিশ সদস্য মারা গেলে তার পরিবারের জন্য আমরা কিছুই করতে পারি না। এখন তার পরিবারের কোনও সদস্য যদি যোগ্য থাকেন, তাহলে তাকে চাকরি দিতে পারবো। বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। তাছাড়া, এটা একটা বাহিনীর ব্যাংক, সেহেতু এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিটি নীতিমালা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে। ব্যাংকে যেন কোনও ক্রাইসিস না হয় সেদিকে নজর থাকবে। আইজিপি থাকবেন এ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের প্রধান। ব্যাংকের নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা সবকিছুই থাকবে। তাই এ ব্যাংকটির প্রতি মানুষের আস্থার সংকট হবে না।’

পুলিশ সদর দফতরের এস্টেট ডিভিশনে কর্মরত অতিরিক্ত ডিআইজি ড. শোয়েব রিয়াজ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশের কল্যাণেই কমিউনিটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে মূলধন সংগ্রহ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে সেই মূলধন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ব্যাংকের লভ্যাংশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টে জমা হবে। সেখান থেকে কর্মক্ষেত্রে হতাহতদের সহায়তা ছাড়াও পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা ও সন্তানদের শিক্ষা সহায়তা দেওয়া হবে। বাহিনীর ব্যাংক হিসেবে এর প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে বেশি। আগামী আগস্টের মধ্যেই এর কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি চলছে।’

কমিউনিটি ব্যাংকে সদ্য নিয়োগ পাওয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিহুল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী আগস্টের মধ্যেই ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করার জন্য কাজ চলছে। ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে ৬ থেকে ১০টি শাখা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হবে। তবে শুরুতে কোথায় কোথায় শাখা প্রতিষ্ঠা করা হবে, সে ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নিয়ম মেনেই এই ব্যাংকের কার্যক্রম চলবে। গ্রাহকদের সেবা দিয়ে এটাকে এক নম্বর ব্যাংক হিসাবে গড়ে তোলা হবে।’

উল্লেখ্য, কোনও বাহিনীর ব্যাংক হিসেবে প্রথম ১৯৯৫ সালে ‘আনসার-ভিডিপি ব্যাংক’ চালু হয়। এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনা কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে ১৯৯৯ সালে চালু হয় ‘ট্রাস্ট ব্যাংক’। ২০১৬ সালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের উদ্যোগে চালু হয় ‘সীমান্ত ব্যাংক’। এবার চালু হচ্ছে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে ‘কমিউনিটি ব্যাংক’।

/জেইউ/এফএস/ এপিএইচ/টিএন/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একান্ত আলাপে অস্কারজয়ীর মুখে লালন ফকির থেকে শেখ হাসিনা...
কান উৎসব ২০২৪সোনার বাংলা, আই ওয়ান্ট টু ভালোবাসি: এ আর রাহমান
প্রবাসীর স্বর্ণ ছিনতাই: পুলিশের এসআইসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
প্রবাসীর স্বর্ণ ছিনতাই: পুলিশের এসআইসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এক এজেন্সির ২৬০ হজযাত্রীর কারও ভিসা হয়নি, কারণ দর্শানো নির্দেশ
এক এজেন্সির ২৬০ হজযাত্রীর কারও ভিসা হয়নি, কারণ দর্শানো নির্দেশ
‘দরিদ্ররা সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ২০ শতাংশও ভোগ করতে পারে না’
‘দরিদ্ররা সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ২০ শতাংশও ভোগ করতে পারে না’
সর্বাধিক পঠিত
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ