X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘উদ্বাস্তুদের সংখ্যা কমাতে সমন্বিতভাবে কাজ করা জরুরি’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২০ জুন ২০১৮, ১১:৫৯আপডেট : ২০ জুন ২০১৮, ১৩:১৪

ঢাকার কড়াইল বস্তি (ছবি-সংগৃহীত)

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বাড়ছে উদ্বাস্তু সংখ্যা। এই সংখ্যা কমাতে জাতীয় নীতিগত অবস্থান শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি একটি সমন্বিত নীতিমালার মাধ্যমে সেটি বাস্তবায়নে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সরকারকে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে বর্তমানে নথিভুক্ত উদ্বাস্তু রয়েছে প্রায় ৫ কোটি মানুষ, যারা বাধ্য হয়েছে নিজেদের দেশ ছেড়ে যেতে। আর প্রায় আড়াই কোটি মানুষ নিজেদের দেশের ভেতরেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছে—যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ।

এদিকে প্রতিবছর বাংলাদেশে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ৮ মিলিমিটার করে বাড়ছে—যা বিশ্বের গড় বৃদ্ধির দ্বিগুণ। ২০৮০ সাল নাগাদ এই অঞ্চলে পানির উচ্চতা ২ ফুট বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই যদি হয়, তাহলে বাংলাদেশের ৪০ ভাগ এলাকা লবণ পানিতে তলিয়ে যাবে। আর এই ৪০ ভাগ এলাকায় প্রায় ৫ কোটি মানুষের বসবাস। এর ফলে ফসলি জমি নষ্ট হবে, কৃষক-জেলে তাদের পেশা হারাবে। তারা হারাবে তাদের আশ্রয় বা আবাস।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন বলেন, জলবায়ু উদ্বাস্তু কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানি কম খরচ করে আমাদের সমগ্র শিল্প কারখানা, পরিবহন, আবাসিক বিদ্যুৎ এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। এই কাজ এক রাতে হওয়া সম্ভব নয়। তবে এই বিষয়টি সরকারকে অগ্রধিকার দিতে হবে। এখনই যদি উদ্যোগ না নেওয়া হয় তাহলে আগামী বিশ বছর পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। কাজেই আমরা উদ্বাস্তু তৈরির কাজ না করি।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী ভাঙছে, উদ্বাস্তু হচ্ছে মানুষ

তিনি বলেন, উদ্বাস্তু তখনই বাড়বে যখন নদীর পানি বাড়বে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়বে, বন্যা বাড়বে, পাহাড় ধ্স হবে, বরফ গলবে। তিনি বলেন, নদীর পানির ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে । কারণ, দেশের ভেতরের বিলগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এজন্য সরকারকে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পুরো জাতিকে উৎসাহিত করতে হবে। কিন্তু দেশে এখন উল্টো অবস্থা হচ্ছে। শিল্প মালিক, পরিবহন, দখলদারদের সরকার কিছুই বলে না। বললেও তা সিরিয়াসলি বলে না। দেখে মনে হয় সরকার তাদের সমর্থক। মনে হয় তাদের উৎসাহিত করাই সরকারের কাজ।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকারের নিজেকে সৎ প্রমাণ করতে হবে। তাহলে দাতা সংস্থাও এগিয়ে আসবে। সুতরাং নীতিগত বিভ্রান্তি থেকে বের হয়ে এসে সরকারকে সঠিক নীতি অবলম্বন করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে। তাহলেই একমাত্র জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা কমানো সম্ভব।

পরিবেশ ও পরিবেশের সমস্যা সম্পর্কে বিগত সময়ে আমাদের সচেতনতা যেমন বেড়েছে, তেমনি বিভ্রান্তিও কম নয়। সাধারণভাবে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি এবং স্বল্পমেয়াদি পরিবর্তন যা প্রাকৃতিকভাবে ঘটে তাকে বোঝায়। মনুষ্যসৃষ্ট দূষণের কারণে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া হতে পারে এ আশঙ্কা থেকে জলবায়ুর পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মানুষের অন্যান্য কর্মকাণ্ডের ফলেও জলবায়ু পরিবর্তন ঘটতে পারে। প্রতি বছর বাংলাদেশের উপকূলে ১৪ মিলিমিটার করে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গত ২০ বছরে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ সেন্টিমিটার। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যেমন- সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফের সমুদ্র উপকূলের পানি মেপে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। গবেষকদের ধারণা, ২০২০-২০২৫ সালের মধ্যে পানির উচ্চতা আরও বেড়ে যাবে। পানির উচ্চতা যদি এ গতিতে বাড়তে থাকে তবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চরম হুমকির মুখে পড়বে। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে ৪৫ জনের মধ্যে ১ জন জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। ফলে সেখানে প্রতি ৭ জনে ১ জন উদ্বাস্তু হবে। উদ্বেগজনক তথ্য এই, ১৭ ভাগ এলাকা সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে কুতুবদিয়া এলাকার ২০ হাজার মানুষ মূল ভূখণ্ড ত্যাগ করে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।

কখনও কখনও এমন খরাও উদ্বাস্তু করে মানুষকে (ছবিটি ভারতের একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে নেওয়া)

এ বিষয়ে নদী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘বাংলাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ তিনটি কারণে দেশান্তরি হচ্ছেন। প্রথমত, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে লবণাক্ততা বাড়ছে; দ্বিতীয়ত, আইলা-সিডরের কারণেও লবণাক্ততা বাড়ছে; তৃতীয়ত, উজান থেকে মিঠা পানি না আসার কারণেও লবণাক্ততা বাড়ছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাঁধগুলোর উচ্চতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি মিঠা পানির প্রবাহ বাড়াতে গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প প্রয়োজন হবে। তবে এসব করার পরও এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ নেই। এটি অব্যাহতভাবে ঘটতেই থাকবে।

 

/এসএনএস/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু