X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৪ মার্চ ২০২২, ২২:২৫আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২২, ২২:২৫

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তারে ‍সুন্দর জীবনের লক্ষ্যে তৈরি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না। বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ মাথা উচুঁ করে বিশ্বের দরবারে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। বিজয়ী জাতি হিসেবে সবসময় মাথা উঁচু করে চলবো।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েন অব ব্যাংক-বিএবিএ’র উদ্যোগে ‘জয় বাংলা’ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর হোটেল শেরাটনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জয় বাংলা স্লোগান আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তি সংগ্রামের স্লোগান। এই স্লোগান আত্মত্যাগ ও অর্জনের স্লোগান। এই স্লোগানের মধ্যদিয়েই আমরা বিজয় অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধু ৬ দফা ঘোষণার সময় থেকেই জয় বাংলা স্লোগানকে মাঠে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি ছাত্রলীগকেই এই নির্দেশ দিয়েছিলেন।’

বঙ্গবন্ধু প্রতিটি পদক্ষেপ সুপরিকল্পিতভাবে গ্রহণ করেছিলেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এই স্লোগানের অন্তর্নিহিত অর্থ ছিল— সংগ্রামের মধ্যদিয়ে মানুষের মাঝে স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করা ও স্বাধীনতায় উদ্বুদ্ধ করা। এই স্লোগানের মধ্যদিয়েই আমাদের সংগ্রাম। সংগ্রাম থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় অর্জন। যার কারণে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি, মর্যাদা পেয়েছি।’

জয় বাংলা স্লোগান এক সময় বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়ে গিযেছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ যারা করি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসীরা ধরে রেখেছি, মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী তারা এটাকে ধরে রেখেছিল। বাধা এসেছে। অনেক সময় অনেক কটূক্তি শুনতে হয়েছে। নানা ধরনের সমালোচনা শুনতে হয়েছে। তারপরও এই সত্যটাকে ধরে রাখতে পেরেছি বলেই আজকে এটা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।’

জয় বাংলা উৎসব আয়োজনের জন্য ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘স্বীকৃতি পাওয়ার পর সব থেকে আগে এগিয়ে এসেছেন, আপনারা ব্যবসায়ীরা, শুধু দুর্যোগেই আপনারা মানুষের পাশে আসেন না। জয় বাংলা স্লোগান আজকে আমাদের সকলের হয়েছে। এই জয় বাংলার মধ্যদিয়ে আমরা বিশ্বের মানুষের কাছে এটা পৌঁছাতে চাই— আমরা বিজয়ী জাতি, আমরা বিজয় অর্জন করেছি। মাথা নত করে আমরা চলি না। মাথা নত করে চলবো না। বিজয়ের বেশে মাথা উচুঁ করে প্রতিটি বাঙালি মাথা উঁচু করে চলবে।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সময় যেমন অপপ্রচার ছিল, স্বাধীনতা অর্জনের পরেও সেটা থেমে থাকেনি। স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্ত সবসময় ছিল। অনেক ষড়যন্ত্র করেও যখন মানুষের হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছতে পারেনি, তখনই চরম আঘাত এলো ৭৫-এর ১৫ আগস্ট। সেদিন শুধু জাতির পিতাকে হত্যা করেনি, আমার মা ও ভাইসহ গোটা পরিবারকে হত্যা করা হয়। সেই হত্যার পর থেকে এই জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ হয়ে গেলো। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা শত্রুর মোকাবিলা করতো এই জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে। যে স্লোগান দেশের মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে,  এই স্লোগান মুক্তিযোদ্ধাদের এত শক্তি দিয়েছে যে, শত্রুকে গুলি করতে এক সেকেন্ডও দ্বিধা করেনি। জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বিজয়ের পথ সৃষ্টি করেছে এদেশের মানুষ। দুর্ভাগ্য আমাদের সেই বিজয়ের অনুপ্রেরণা দেওয়া স্লোগানটি নিষিদ্ধ হয়ে গেলো!’

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট আমরা আপনজন হারিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ কী হারিয়েছিল, সেটা আপনারা মর্মে মর্মে বুঝতে পারবেন। ৭৫ এর পর ২১ বছর আমরা কী দেখেছি? বিশ্ব যখন প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে আমরা পিছিয়ে আছি। শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে আছি। বাংলাদেশ মানে অন্যের কাছে ভিক্ষা চেয়ে খাদ্য সংগ্রহ করা। বাংলাদেশের নাম কী— দুর্ভিক্ষ, ঘর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি ইত্যাদি। বিশ্বের মানুষের কাছে মাথা নিচু করে চলা। অসম্মানের  সঙ্গে চলা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরে তো সেই অবস্থা ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের পরে তো আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে মাথা উচুঁ করে চলতে শিখেছিলাম। কিন্তু ১৫ আগস্টের চরম আঘাতের পরে সব কেমন যেন পাল্টে গেল। বিদেশে রিফিউজি হিসেবে থেকেছি। কত কষ্ট করেছি। তারপর দেশে ফিরে আমাদের কত কথা শুনতে হয়েছে। জয় বাংলা স্লোগান দিতে গিয়ে আমাদের কত কর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণ বাজাতে গিয়ে অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। আমাদের অর্জন যা হারিয়ে যেতে বসছিল, ২১ বছর পর চেষ্টা করেছি— সেই হারানো গৌরবটাকে ফিরিয়ে আনার। পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে দেশের উন্নতির ব্যবস্থা নেওয়ার।’

৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তাদের কাছে ক্ষমতা ভোগের বস্তু ছিল। কিন্তু মানুষের কল্যাণের জন্য ছিল না, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকারে এসে প্রতিটি সেক্টরকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেই। বেসরকারিকরণের সময় অনেক বাধা এসেছে। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা বলেছে— না বাংলাদেশে এত বেসরকারি ব্যাংক দিয়ে কী হবে? ব্যাংক তো লাভজনক হয় না। বরং সরকারি ব্যাংকের শাখা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ধরনের পরামর্শও কিন্তু বাংলাদেশে দেওয়া হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন ও বীজ গবেষণায়ও বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি আমাদের সরকারি বাস চলাচলেও বাধা এসেছে। আর তখন যারা ক্ষমতায় ছিল, এত দূর্বল ছিল যে, ওই আন্তর্জাতিক সংস্থা যা-ই পরামর্শ দিতো, তা-ই মেনে চলতো। নিজেদের যে একটা উদ্যোগ থাকবে, চিন্তা চেতনা ও পরিকল্পনা থাকবে, সেটা কিন্তু ছিল না। তবে, আমি সরকারে আসার পর থেকে ওই সব পরামর্শ শুনিনি। সোজা একটা কথা বলেছি— দেশ আমাদের, আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি। এদেশের মানুষ আমাদের। মানুষের মঙ্গল কীসে হবে, আমরা সেটা সব থেকে ভালো করে জানি। কোনও একটা সংস্থার দু’একটা অফিসার এসে কী বলবে, তারা আমার দেশটাকে কতটুকু চেনে? কত টুকু বুঝে? কতটুকু জানে যে, এদেশের মানুষের কল্যাণ কীসে হবে? কাজেই যেটা দেশের মঙ্গল আমরা সেটাই করবো।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য দেশের একটি মানুষও ক্ষুধার্থ থাকবে না, গৃহহারা থাকবে না। আমরা পরের কাছে হাত পেতে চলবো না। নিজের খাবার নিজেরা উৎপাদন করবো। বিশ্ব দরকারে মাথা উুঁচ করে দাঁড়াবো।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের এই আয়োজনে আমার বোন রেহানা পাশে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম। ও আমার থেকে ১০ বছরের ছোট। আমরা ‍দুটি বোন বেঁচে ছিলাম। ও না থাকলে বোধহয় আমি এতদূর এগিয়ে আসতে পারতাম না। ও আমার একটা বড় শক্তি। এই জয় বাংলা স্লোগানের জন্য আমরা দু’জন সবচেয়ে বেশি আনন্দিত।’

তিনি বলেন, ‘এই জয় বাংলার স্লোগান এদেশের মানুষকে নিজের জীবনটাকে বিলিয়ে দিয়ে বিজয়ের পথে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছে। যে স্লোগান দিয়ে দেশের মানুষ রক্তের অক্ষরে লিখে গেছে— আমি বিজয় আনতে চাই। বাংলাদেশের জয় হবে। আজকে সেই জয় বাংলা আমাদের সকলের। এদেশের মানুষের। বিজয়ী জাতির। বাঙালি জাতির। আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর স্লোগান। এই স্লোগান সকলে ধারণ করেছেন এজন্য আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই। কোনও ত্যাগ বৃথা যায় না, এটাই প্রমাণ হয়েছে আজ ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার সহযোগিতা পেয়েছি বলে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। বাংলাদেশ আরও সামনে এগিয়ে যাবে। সেই পরিকল্পনাও আমি দিয়ে গেলাম। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেভাবে এগিয়ে যাবে, সেই পরিকল্পনা দিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করেছি। বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না। বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবে। এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। বিজয়ী জাতি হিসেবে সবসময় মাথা উঁচু করে চলবো।’

ব্যাংক উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংক যাতে ব্যবহার করতে পারে, তার জন্য প্রতিটি এলাকায় এর শাখা খোলার নির্দেশনা ছিল। একই  সঙ্গে আপনাদের সামাজিক কাজ করার নির্দেশনা ছিল। আপনারা সেটা করে যাচ্ছেন। এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। কৃষকরা ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলতে পারছে। আগে মানুষ টাকা চালের মধ্যে, বাঁশের ফোকড়ে ‍গুজিয়ে রাখতো, এখন ব্যাংকে রাখছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসা করতে আসিনি। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে। কিন্তু তাদের সেই সুযোগটা সৃষ্টি করে দিতে হবে, যাতে দেশের মানুষ লাভবান হয়। তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এতে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ করার সুযোগ হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সময়েও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক দেশ যেটা করতে পারেনি, আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ জনগণের সেবা করা এবং দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প সবকিছু যেন সহজভাবে করতে পারে, সেই সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি। এতে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা আরও বাড়বে, উন্নতি হবে।’

/ইএইচএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির চিন্তাধারা ছিল অন্যের কাছে হাত পেতে চলবো: প্রধানমন্ত্রী
প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?