X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোনও পণ্যের ঘাটতি নেই: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ এপ্রিল ২০২২, ১৯:৫০আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ২০:৩০

সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি নিয়ে আসতে সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে চালসহ কোনও পণ্যের ঘাটতি নেই। সাশ্রয়ী দামে পণ্য কেনার জন্য টিসিবির দোকানে মানুষ ভিড় করবে—এটাই স্বাভাবিক। এটাকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার কী কারণ থাকতে পারে?

বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে বুধবার (১৩ এপ্রিল) দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

শুরুতেই সরকার প্রধান দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। মোবারকবাদ জানান মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজানের।

বৈশ্বিক করোনা মহামারি শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে উল্লেখ করে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য পরিবহনেও ভাড়া ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে আমাদের দেশেও কিছু কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা কিন্তু চুপচাপ বসে নেই। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি নিয়ে আসার।

নিত্যপণ্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, আমরা টিসিবি’র মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে প্রায় ১ কোটি পরিবারকে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাশ্রয়ী দামে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। রাজধানীতে প্রতিদিন ১৫টি ফ্রিজার ভ্যানে করে সাশ্রয়ী দামে মাংস, ডিম এবং দুধ বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে, অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ইতোমধ্যে কমে স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে। এছাড়া, ঈদ উপলক্ষে ১ কোটি ৩৩ হাজার ৫৪টি ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে ১ লাখ ৩৩০ মেট্রিক টনের বেশি চালের বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু গণমাধ্যমে এমনভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যেন দেশে দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে। আমি দৃঢ়ভাবে আপনাদের জানাতে চাই যে দেশে চালসহ কোনও পণ্যের ঘাটতি নেই। সাশ্রয়ী দামে পণ্য কেনার জন্য টিসিবি’র দোকানে মানুষ ভিড় করবে—এটাই স্বাভাবিক। এটাকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার কী কারণ থাকতে পারে?

করোনার মধ্যেও উন্নয়নের চাকা থেমে নেই

করোনার মধ্যেও উন্নয়নের চাকা থেমে নেই এমনটি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারিতেও আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬.৯৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছর রেকর্ড ২৪.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এ বছরও আশানুরূপ রেমিট্যান্স আসছে। গত বছর রফতানি আয় হয়েছে ৪৪ দশমিক দুই দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রফতানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮ দশমিক ছয় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এ বছর রফতানি আয়ে বাংলাদেশ নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে ইনশাআল্লাহ। কোনও পণ্যের ঘাটতি নেই: প্রধানমন্ত্রী

বোরোতে বাম্পার ফলন

কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল শক্তি  উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির ফলে চাল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ উৎপাদনে আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে।

ঋণ যাতে বোঝা না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি

আমাদের মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে, কোনও ঋণ নেওয়া হয়নি। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা অন্যান্য মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। আর শুধু ঋণ নয়, বিদেশি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে। আমরা দেশি-বিদেশি ঋণ নিচ্ছি। তবে তা যাতে বোঝা হয়ে না ওঠে সেদিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সম্পদ বৃদ্ধি এবং মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করা।

দুই বছর হবে অবকাঠামো উন্নয়নের মাইলফলক

২০২২ ও ২০২৩ হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক বছর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর কয়েক মাস পরেই চালু হতে যাচ্ছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু। এই সেতু জিডিপিতে ১.২ শতাংশ হারে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বছরের শেষ নাগাদ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রো রেল চালু হবে। মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আগামী অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল। এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট আগামী বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গত মাসে পায়রায় ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্ধারিত সময়ের আগেই উদ্বোধন করা হয়েছে। অন্যান্য মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ভাবনায় অর্থনৈতিক অর্জন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত ১৩ বছরে যে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে তা অর্থনীতির সামষ্টিক সূচকগুলো বিবেচনা করলেই স্পষ্ট হয়। ২০০৯ সালে জিডিপি’র আকার ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে তা ৪১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ৭০২ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২,৫৯১ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ভাবনা এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে। গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রেখে মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার ফলেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে।

দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করা সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতা যে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়ন করতে অবদান রাখতে পারছি বলে আমরা গর্বিত। যতদিন বেঁচে আছি, মহান রাব্বুল আলামিন আমাকে কাজ করার সামর্থ্য দিবেন, ততদিন মানুষের জন্য কাজ করে যাবো, জনগণের সেবা করে যাবো।

বাঙালির মুখের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি এবং ঐতিহ্যকে উপজীব্য করেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে একদিন এ দেশে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটেছিল। যার ওপর ভিত্তি করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কাজেই আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি এবং ঐতিহ্যকে অস্বীকার করা মানে আমাদের স্বাধীনতাকেই অস্বীকার করা।

দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দের শুভ মুহূর্তে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় স্নাত হয়ে আসুন বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলি—যেখানে বৈষম্য থাকবে না, মানুষে মানুষে থাকবে না কোনও ভেদাভেদ, থাকবে না ধর্মে-ধর্মে কোনও বিভেদ। পারস্পরিক সৌহার্দ্য আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আসুন বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাংলা নতুন বছরের আনন্দ উপভোগ করার আহ্বান জানান।

/ইএইচএস/এমএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির চিন্তাধারা ছিল অন্যের কাছে হাত পেতে চলবো: প্রধানমন্ত্রী
প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী
কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?