X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রণোদনা প্যাকেজ শতভাগ বাস্তবায়ন হবে কবে?

শফিকুল ইসলাম
৩০ এপ্রিল ২০২২, ১৬:০০আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২২, ১৬:০০

করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার। যেটার বাস্তবায়নে নীতিগত সুযোগ-সুবিধা এখনও দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সরকারের ঘোষিত ২১টি প্যাকেজের মধ্যে যেগুলোর বিতরণ এখনও বাকি, সেগুলোর শতভাগ বাস্তবায়নে তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হলেও কিছু খাতে ক্ষতির মুখে পড়া মানুষগুলো এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। যারাও শুরু করেছেন তারাও শক্ত পায়ে দাঁড়াতে পারছেন না।

এই অবস্থা দীর্ঘদিন চললে অর্থনীতিকে সচল করতে প্রণোদনার মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। এ কারণেই তারা দ্রুত জটিলতা কাটিয়ে প্রণোদনার অর্থ সংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছানোর দাবি জানিয়েছেন।     

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ধাপে ধাপে শুরু করা ২১টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ঋণ, নগদ অর্থ ও খাদ্যসহায়তার ঘোষণা করেছিল সরকার।

এর মধ্যে মাইক্রো ও কুটির শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের খাতে চলতি মূলধন দেওয়ার জন্য বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।

এ সব প্যাকেজ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

বাকি ছিল ৭ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। সেটার বিতরণ এখনও চলমান বলে জানা গেছে।

দেশের ৭৬টি ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৯ শতাংশ সুদে এ ঋণ দিচ্ছে। এক্ষেত্রে গ্রাহককে ৪ শতাংশ আর বাকি ৫ শতাংশ সুদ সরকারের ভর্তুকি হিসেবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সরকারঘোষিত ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ হচ্ছে-

১। রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ তহবিল (মোট বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা)।

২। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল (৩৩ হাজার কোটি টাকা)।

৩। ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল (২০ হাজার কোটি টাকা)।

৪। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত ইডিএফ-এর সুবিধা (১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা)।

৫। প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম (৫ হাজার কোটি টাকা)।

৬। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ সম্মানি (১০০ কোটি টাকা)।

৭। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অথবা মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ (৭৫০ কোটি টাকা)।

৮। বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ (২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা)।

৯। ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি (২৫১ কোটি টাকা)।

১০। লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ (১২৫৮ কোটি টাকা)।

১১। ভাতা কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ (৮১৫ কোটি টাকা)।

১২। গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ (২১৩০ কোটি টাকা)।

১৩। বোরো ধান/চাল ক্রয় কার্যক্রম (৮৬০ কোটি টাকা)।

১৪। কৃষিকাজ যান্ত্রিকীকরণ (৩২২০ কোটি টাকা)।

১৫। কৃষি ভর্তুকি (সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা)।

১৬। কৃষি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম (৫ হাজার কোটি টাকা)।

১৭। নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক/ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম (৩ হাজার কোটি টাকা)।

১৮। কর্মসৃজন কার্যক্রম (পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং পিকেএসএফ-এর মাধ্যমে ২ হাজার কোটি টাকা)।

১৯। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এপ্রিল-মে/২০২০ মাসে স্থগিত করা ঋণের আংশিক সুদ মওকুফ বাবদ সরকারের ভর্তুকি (২ হাজার কোটি টাকা)।

২০। এসএমই খাতের জন্য ক্রেডিট রিস্ক শেয়ারিং স্কিম (সিআরএস) (২ হাজার কোটি টাকা) এবং,

২১। রফতানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকাশিল্পের দুস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন (১১৩২ কোটি টাকা)।

জানা গেছে ২০২১ সালের ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে এসব প্যাকেজ বাস্তবায়নে এ-সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বছরের ৩১ মার্চ অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা প্যাকেজটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে।

ওই খসড়ায় বলা হয়েছিল, প্রান্তিক পর্যায়ে উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দ্রুত দারিদ্র্য নিরসন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর ক্ষেত্রে কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র (সিএমএস) শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এদিকে করোনাকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত শতাধিক নির্দেশনা জারি করেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। গঠন করেছে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল। কমানো হয়েছে ঋণের সুদহার। এসব কারণে আবার বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে বলেও জানা গেছে।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সদস্য এমরান আহমেদ জানিয়েছেন, করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তৈরি পোশাক খাত। খাতটি দেশের রফতানি বাণিজ্য টিকিয়ে রেখেছে। অথচ এখনও সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা অনেক মালিকের কাছে পৌঁছায়নি। এটি দ্রুত পৌঁছানো প্রয়োজন।

জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ এখনও নানা জটিলতায় আটকে আছে। এসব ছাড় করা জরুরি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে যৌথভাবে কাজ করা উচিত। এতে করোনায় স্থবির খাত চাঙ্গা হবে। 

এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর মধ্যে অনেকগুলো এখনও চলমান। এখনও সংকট কাটেনি। অর্থনীতি সচল রাখতেই সরকারের এই উদ্যোগ। এর শতভাগ বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ।

 
/এফএ/
সম্পর্কিত
চীনে ৯ বছরে প্রথমবারের মতো বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে
আউশের উৎপাদন বাড়াতে প্রান্তিক কৃষকদের প্রণোদনা দেবে সরকার
চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষকদের প্রণোদনা দেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা