X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘর দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 

সাদ্দিফ অভি
২৫ জুলাই ২০২২, ১৯:৩২আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২২, ১৯:৫০

১২ বছর আগে চার সন্তান ও স্ত্রীকে রেখে মারা যান ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার নাসিমা খাতুনের স্বামী। অভাবের তাড়নায় এক সন্তানকে তুলে দেন অন্যের ঘরে। অসহায় ও নিরুপায় হয়ে গৃহকর্মীর কাজ করতেন তিনি। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়েছেন নাসিমা খাতুন।

নাসিমা জানান, অসহায় অবস্থায় পড়ে আমি আমার তিন সন্তানকে মায়ের কাছে রেখে ঢাকায় চলে যাই কাজ করতে। সেই সন্তানদের লেখাপড়া, খাবারের খরচ আমি চালাচ্ছি। আমরা বড় মেয়ে ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষা দেবে। আমি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর পেয়ে সেই ঘরে উঠেছি। প্রধানমন্ত্রী ঘরে বাথরুম, রান্নাঘর, থাকার ঘর, এমনকি বাইরে পানির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। আমি হাজার শুকরিয়া জানাই। প্রধানমন্ত্রীকে কী দিয়ে খুশি করবো আমার জানা নেই। আমি দোয়া করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আল্লাহপাক নেক হায়াত দান করুক।

একই উপজেলার জমিলা খাতুনের স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান। দীর্ঘদিন পথে-ঘাটে জীবনযাপন করেছেন জমিলা। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ার পর স্বামী ফের তার কাছে ফেরত এসেছেন। এখন তারা সুন্দরভাবে সংসার করছেন।  

তিনি বলেন, ‘এত সুন্দর ঘর পেয়ে আমি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে দোয়া করেছি। আমি ৩০টা রোজা রেখে দোয়া করেছি। আল্লাহর কাছে বলেছি—‘আমরা অসহায়, বাড়িভিটা কিছু ছিল না, এই বাড়িভিটা আমাদের মায় (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দিয়েছে। এই ঘর না থাকলে আমার কী হইতো! আমার কিসু উপায় ছিল না। এত সুন্দর ঘর দেখে আমার স্বামী তিন ছেলেরে নিয়ে ফিরে চলে আসছে। আমি হাজারো শুকরিয়া করি, অনেক বছর যেন তিনি বেঁচে থাকেন।’

ভূমিহীন ও গৃহহীন আরও ২৬ হাজার ২২৯ পরিবারকে ঘর উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২১ জুলাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাঁচটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে যুক্ত হয়ে এই ঘরগুলো হস্তান্তর করেন তিনি। এদিন হস্তান্তরের মাধ্যমে পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলার সব উপজেলাসহ দেশের ৫২টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। 

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা—একটি মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। এই লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি জমির মালিকানাসহ ৬৩ হাজার ৯৯৯টি ঘর হস্তান্তর করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ জুন জমির মালিকানাসহ ৫৩ হাজার ৩৩০টি ঘর দেওয়া হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণ করা একক ঘরের সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি। চলমান তৃতীয় পর্যায়ে মোট বরাদ্দকৃত একক ঘরের সংখ্যা ৬৭ হাজার ৮০০টি। এরমধ্যে গত ২৬ এপ্রিল হস্তান্তরিত হয় ৩২ হাজার ৯০৪টি এবং ২১ জুলাই হস্তান্তর হয় ২৬ হাজার ২২৯টি। এছাড়া আরও ৮ হাজার ৬৬৭টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে।

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী অসহায় মানুষ, যাদের ঘর নেই, কিংবা জমি নেই— তাদের দুই শতক জমিসহ পাকা ঘর দিচ্ছেন। এই ঘর পেয়ে খুশি উপকারভোগীরা। ঘর পাওয়ার পর পরিবর্তন এসেছে তাদের জীবনমানে। কেউ ঘর পেয়ে দোকান দিয়েছেন, কেউ কিনেছেন অটোরিকশা, আবার কারও কারও বাসায় এসেছে টেলিভিশন ও ফ্রিজ।  

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দেশের আট বিভাগে ১৫ হাজার ১২৩টি স্থানে আশ্রয়ণের ঘর তৈরি করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৩২৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮০৬টি, চট্টগ্রামে ৪ হাজার ৩৪টি, সিলেটে ৭১৫টি, রংপুরে ২ হাজার ৫৩৩টি, রাজশাহীতে ২ হাজার ৩৫৫টি, খুলনায় ৯৯৮টি এবং বরিশালে ২ হাজার ৪৪৬টি স্থানে ঘর করা হয়েছে।

এসব ঘরে যারা থাকছেন, তারা সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করছেন এবং তার জন্য দোয়া করছেন। পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার মাহানপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা লতিফুর রহমান সাত বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালাতেন। পরিবার নিয়ে তার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় ঈদ উদযাপন করতে পারতেন না। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে এখন সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা-মা খুব গরিব, আমরা তিন ভাই তিন বোন, তাদের রেখে আমার বাবা মারা গেছেন ২০ বছর আগে। আমার তিন সন্তান নিয়ে সাত বছর ঢাকায় ছিলাম। আমার ছোট মেয়ে আমাকে একটা প্রশ্ন করতো বারবার–বাবা আমরা কি পঞ্চগড় যেতে পারবো না? কোনও ঈদেই কি বাড়ি যেতে পারবো না? আমি বলতাম—মা, আল্লাহ যদি কোনোদিন আমার দিকে চোখ তুলে তাকায়, তাহলে সেদিন হয়তো আমার ভাগ্যে পঞ্চগড় যাওয়া সম্ভব হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন রিকশা চালাতাম, তখন মতিঝিল এলাকায় বড় বড় বিল্ডিং দেখে আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমি একজন রিকশা চালক, আমার তিন সন্তান, আল্লাহ যদি আমাকে একটা টিনের ছোট্ট ঘর দিতো, ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি সুখে থাকতাম। আজকে আমি ঘর পেয়েছি, আমার মতো সুখী আর কেউ নাই। এবার ঈদে যখন বাড়ি আসি, আমার মেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছি? আমি বললাম, মা এবার আল্লাহ আমাদের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। আমরা বাড়িতে কোরবানির ঈদ করবো। প্রধানমন্ত্রী আমাকে ঘর দিয়েছেন। এক মা জন্ম দিলো, আরেক মা দিলো ঘর। বাংলাদেশে যেন আমার মতো গৃহহীন আর কেউ না থাকে।’ 

 

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৎপর হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
ভারতীয় শাড়ি দিয়ে কাঁথা সেলাই করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রিজভী
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
সর্বশেষ খবর
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অসন্তোষ জানালেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অসন্তোষ জানালেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইতিহাস বিকৃতিতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি আবোল-তাবোল বলছে: হাছান মাহমুদ
ইতিহাস বিকৃতিতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি আবোল-তাবোল বলছে: হাছান মাহমুদ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়