বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী ২০টি অর্থনীতির জোট জি-টোয়েন্টির সদস্য না-হলেও ওই জোটের পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতি বৈঠকে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। এর কারণ, জি-টোয়েন্টির বর্তমান প্রেসিডেন্ট দেশ ভারত। আর তারাই বিশেষ অতিথি হিসেবে পরবর্তী সামিটে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, যাতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।
ফলে আগামী বছরের সেপ্টেম্বর মাসে (৯-১০) দিল্লিতে যখন জি-টোয়েন্টির শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, তখন জো বাইডেন, শি জিনপিং বা নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেই একই হাই টেবিল ‘শেয়ার’ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
বাংলাদেশে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে একই মঞ্চে শেখ হাসিনার যোগদান দেশটির ভেতরে ও বাইরেও খুব শক্তিশালী একটি বার্তা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেই আমন্ত্রণেরই প্রথম পর্বে আগামী ২৭ ও ২৮ নভেম্বর নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা আন্দামানের হ্যাভেলক আইল্যান্ডে জি-টোয়েন্টি সামিটের প্রথম প্রস্তুতি বৈঠকের আয়োজন করেছে ভারত। দিল্লির আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন দিল্লিতে নিযুক্ত সে দেশের রাষ্ট্রদূত মহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান।
বস্তুত শুধু প্রত্যন্ত আন্দামানেই নয়, সামনের পুরো বছরটা জুড়েই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে জি-টোয়েন্টির বিভিন্ন সেক্টর ধরে ধরে একের নোহবে কাশ্মীরে, কোনোটা আবার কচ্ছের রানে (গুজরাট) এবং এর প্রায় প্রতিটিতেই ‘বিশেষ অতিথি’ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের যোগদান করার কথা রয়েছে।
গত সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনের শেষে জোটের ‘রোটেটিং প্রেসিডেন্সি’ ভারতের হাতে তুলে দিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো। ফলে দিল্লিতে ওই জোটেদি সভাপতিত্বে। আর তার ব্যক্তিগত আগ্রহেই সেখানে বাংলাদেশ-সহ আরও কয়েকটি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের জি-টোয়েন্টি প্রেসিডেন্সির এই পর্বটায় ‘চিফ কোঅর্ডিনেটর’ বা মূল সমন্বয়কারীর ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করছেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এ কথা সুবিদিত যে, তিনি দীর্ঘদিন ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার ছিলেন। তার ‘বাংলাদেশ কানেকশন’ও খুব নিবিড়। ফলে জি-টোয়েন্টি সামিটের এই প্রস্তুতিপর্বে বাংলাদেশ যে আয়োজক দেশের কাছে দারুণ গুরুত্ব পাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।
আগামী রবিবার থেকে আন্দামানের যে হ্যাভেলক আইল্যান্ডে প্রথম প্রস্তুতি বৈঠক হচ্ছে, সেই দ্বীপটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশ্ববিখ্যাত।
রাধানগর বিচ, কালাপাথর বিচের মতো বেশ কয়েকটি অনিন্দ্যসুন্দর সমুদ্রসৈকত ওই দ্বীপে রয়েছে, যা নিয়মিতই দুনিয়ার সেরা সি-বিচগুলোর তালিকায় ঠাঁই করে নেয়। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে আন্দামানের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে স্মরণীয় করে রাখতে নরেন্দ্র মোদি সরকার অবশ্য কিছুকাল আগে হ্যাভেলক আইল্যান্ডের নতুন নামকরণ করেছে ‘স্বরাজ দ্বীপ’।
হর্ষবর্ধন শ্রিংলার জন্য এখন সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে— ওই ছোট্ট দ্বীপে প্রায় জনা চল্লিশেক রাষ্ট্রদূত ও তাদের সঙ্গীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা।
বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলছিলেন, ‘জোটের ২০টি সদস্য দেশ ও অতিথি আরও ২০টি দেশ, ফলে বাংলাদেশসহ মোট ৪০টি দেশের প্রতিনিধিত্ব থাকছে স্বরাজ দ্বীপের এই বৈঠকে। এখন আপনারা জানেন, এখানে ভালো হোটেল বা গেস্ট হাউসের সংখ্যা খুবই সীমিত, প্রায় নেই বললেই চলে। কাজেই অনেককেই হয়তো রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারে রাতযাপন করে তারপর এখানে স্পিডবোটে আসতে হবে।’
কোনও বিশ্বমানের আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের বাংলাদেশকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানোর ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে ভারতের গোয়ায় যে ব্রিকস (ব্রাজিল-ইন্ডিয়া-চায়না-সাউথ আফ্রিকা) শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানেও অতিথি বা অবজারভার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমস্ত্রণ জানিয়েছিল মোদি সরকার।
সেবারও গোয়াতে ভ্লাদিমির পুতিন, শি জিনপিং, নরেন্দ্র মোদির মতো বিশ্বনেতাদের সঙ্গে একই প্ল্যাটফর্মে দেখা গিয়েছিল শেখ হাসিনা ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের (পাকিস্তান ছাড়া) নেতাদের। ছিলেন মিয়ানমারের নেত্রী ও তখনকার স্টেট কাউন্সিলর আং সান সু চি-ও, তার দেশ থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর নতুন করে ঢল নামার ঘটনা এর ঠিক বছরখানেক পরের!