X
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
১৩ আষাঢ় ১৪৩২

পিতার হত্যাকাণ্ডের পর যেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেন শেখ হাসিনা

উদিসা ইসলাম
১৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১৮:৪৫

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময়ে দেশের বাইরে ছিলেন তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন স্বামীর বিদেশে থাকার সুবাদে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ছয় বছর বিদেশে বাধ্যতামূলকভাবে কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে যখন ফিরেছিলেন, তখন তিনি সক্রিয় রাজনীতির মানুষ হয়ে ফিরেছিলেন। সেই সময়ের রাজনৈতিক সহযাত্রীরা বলছেন, দেশের বাইরে থেকে ছয় বছর ধরে তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। কী সাহস থাকলে সেদিন দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে লন্ডনে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে  ফিরে আসেন তিনি।

দেশের মাটিতে ফিরে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন কী বলেছিলেন? তিনি বলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আইনের নিয়মিত প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন।

তিনি ফিরে এসেছেন রাজনৈতিক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে, কিন্তু ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন, কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভানেত্রীও নির্বাচিত হয়েছেন। তিনিই অন্যতম, যিনি অত্যন্ত কাছে থেকে দেখেছেন পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন, কীভাবে জেল-জুলুম-অত্যাচার-মামলা উপেক্ষা করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু।

সেই রাজনীতির জীবন থেকেই প্রায়শ শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন— বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সময় আওয়ামী লীগের নেতারা কোথায় ছিলেন এবং হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নেতাদের একজনও  কেন এগিয়ে এসে সাহসী ভূমিকা রাখেননি। তিনি বলেছেন, ‘এটা (আওয়ামী লীগ) এত বড় একটি সংগঠন...কত নেতা! তারা তখন কোথায় ছিলেন? মাঝেমধ্যে এর উত্তর আমি খুঁজে ফিরি। কেউ একজনও সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলেন না। সাধারণ মানুষ সব সময় বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন।’

বিজয় দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হবে— সেই বিষয়টি দেশের কেউ কেন জানতে পারলেন না এবং একজনও কেন হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিলেন না।’ এ নিয়ে  প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘৩২ নম্বরের (ধানমন্ডি) মেঝেতে তাঁর মরদেহ পড়ে ছিল, কেন? এর জবাব আমি আজও  পাইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে রক্ষায় ব্যর্থতার খেসারত পরবর্তী দশকগুলোতে দিতে হয়েছে জাতিকে।’

‘হাসিনা: এ ডটার’স টেল’ জীবনাখ্যান থেকে নেওয়া ছবি

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালে বিদেশ গিয়েছিলেন কন্যা হিসেবে, ৮১ সালে তিনি রাজনৈতিক গুরু দায়িত্ব কাঁধে করে ফিরেছিলেন। এই যে পরিবার হারানোর মধ্য দিয়ে তার রূপান্তর, এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য  নূহ উল আলম  লেনিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড জাতি হিসেবে আমাদের কাছে আকস্মিক ঘটনা। কিন্তু শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার কাছেও আকস্মিক আক্রমণ। তারা কল্পনাও করেননি এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। যদিও ৭৪ সালের ডিসেম্বরে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি থাকাকালীন আমি ও তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি বঙ্গবন্ধুকে ষড়যন্ত্রের কথা বলেছিলাম। হত্যাকাণ্ডের পরে যে ছয় বছর শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন, সেই ছয় বছর তিনি বসে থাকেননি। এই সময় তিনি ট্রমা কাটানোর পাশাপাশি জাতীয় আন্তর্জাতিক মতামত গঠনসহ দেশে ফেরার ভিত্তি তৈরি করছিলেন। সে সময় তিনি নিজেকে আসলে লড়াইয়ের উপযোগী করে তৈরি করেছিলেন।’ পরবর্তী সময়ে কাছে থেকে জানার সুযোগ হয়েছিল উল্লেখ করে এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘তিনি নিজেকে প্রস্তুত করে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। এবং সেটা ঝুঁকি নিয়েই নেন। ঝুঁকির বিষয়ে তিনি জানতেন বলেই ফেরার সময় তার দুই সন্তানকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেননি। সর্বশেষ তার অনুপস্থিতিতে যখন তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বানানো হলো, তখন এটা আরও শক্তভাবে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি দেশে ফেরার ঝুঁকিটা তখন নিতে প্রস্তুত ছিলেন।’

‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘শোককে শক্তিতে পরিণত করার এক অবিস্মরণীয় অভিযাত্রার নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট তিনি এবং তার ছোট বোন বিদেশে ছিলেন বলে প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু পিতামাতাসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়ে কী ভয়াবহ যন্ত্রণার মধ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে দিন কাটিয়েছেন। এই কষ্টের তলটি কত গভীর অনেকেই অনুমানও করতে পারেন না। তা সত্ত্বেও তিনি ১৯৮১ সালের মে মাসে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার আশা নিয়ে। আওয়ামী লীগের মতো বিরাট একটা দলের দায়িত্ব নিয়ে তিনি সারা দেশ ঘুরে ঘুরে দলকে পুনর্গঠিত এবং উজ্জীবিত করেছিলেন। ১৫ বছর সংগ্রাম করার পর ১৯৯৬ সালে দলকে ক্ষমতাসীন করে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জনবান্ধব অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের কর্মসূচিগুলোর পুনর্জাগরণ করেন। ২০০১ সালে হোঁচট খেয়ে ফের ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফিরে এসে তিনি একের পর এক অবকাঠামো এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবার এক ব্যতিক্রমী উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন। পরিবার হারানোর তীব্র দুঃখকে জয় করে সাধারণের কল্যাণে নিজেকে সঁপে দেওয়ার এই রূপান্তরবাদী নেতৃত্বের এক অসাধারণ উদাহরণ সৃষ্টি করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
দুই বছর আগের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও ছয় সাংবাদিকসহ ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
যে কারণে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী টিটুকে সরিয়ে দিলেন ট্রাইব্যুনাল
টিটুকে সরিয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত নতুন আইনজীবী নিয়োগ ট্রাইব্যুনালের
সর্বশেষ খবর
কাঁঠালের বিচি দিয়ে লইট্টা শুঁটকি ভুনার সহজ রেসিপি জেনে নিন
কাঁঠালের বিচি দিয়ে লইট্টা শুঁটকি ভুনার সহজ রেসিপি জেনে নিন
সামাজিক ব্যবসা বিশ্বকে বদলে দিতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা
সামাজিক ব্যবসা বিশ্বকে বদলে দিতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা
খুলনায় এক রাতে দুই খুন
খুলনায় এক রাতে দুই খুন
পাঁচ দাবিতে এনটিআরসিএর সামনে মহাসমাবেশের ঘোষণা
পাঁচ দাবিতে এনটিআরসিএর সামনে মহাসমাবেশের ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত
পরীক্ষায় বাড়তি সময় না দেওয়ায় পরিদর্শককে মারধর ছাত্রদল নেতার, দিলেন হত্যার হুমকি
পরীক্ষায় বাড়তি সময় না দেওয়ায় পরিদর্শককে মারধর ছাত্রদল নেতার, দিলেন হত্যার হুমকি
মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ আবেদনের রায় রবিবার
মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ আবেদনের রায় রবিবার
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ হাসনাত-সারজিসের
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ হাসনাত-সারজিসের
মব না, এটি প্রেসার গ্রুপ: প্রেস সচিব
মব না, এটি প্রেসার গ্রুপ: প্রেস সচিব
জাতীয়করণ নয়, এমপিওভুক্তির আওতায় আসছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা
জাতীয়করণ নয়, এমপিওভুক্তির আওতায় আসছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা