সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে জনগণের মতামত ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাজধানীর সিরডাপ-এর এটিএম শামছুল হক মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উদ্যোগে ‘নাগরিক সনদ ও নাগরিক প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
আলী রিয়াজ বলেন, সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে জনগণের মতামত ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে। কারণ সংবিধান হলো এক ধরনের সামাজিক চুক্তি। যে চুক্তি অনুযায়ী রাষ্ট্র নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং নাগরিকরা রাষ্ট্রের কতগুলো নিয়ম-কানুন মেনে চলবে।
তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন কতগুলো মৌলিক সংস্কারের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনা করতে হবে। আমরা আশা করি, জুলাইয়ের মধ্যে আমরা একটি নাগরিক সনদ প্রণয়ন করতে পারবো। যে সনদের প্রধান উদ্দেশ হলো নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণ করা, ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করা। আমরা জাতীয় সনদ প্রণয়নের মাধ্যমে নাগরিকদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা করছি, যাতে নাগরিকরা রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়বদ্ধ করতে পারে।
সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নির্বাচনই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একমাত্র উপাদান নয়।
তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক গঠিত সংস্কার কমিশনগুলো অনেক পরিশ্রম করে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কোনও শর্ত ছাড়াই মৌলিক অধিকার প্রদানে রাষ্ট্রকে বাধ্য করার সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে নাগরিক সমাজসহ সবাইকে সোচ্চার হওয়ার দরকার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা হলো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটানো। এজন্য নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হিসেবে নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কার্যকর ও সোচ্চার ভূমিকা দরকার। নির্বাচন যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হতে পারে সেজন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কারের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং অধ্যাদেশের মাধ্যমে কতগুলো আইন পাস হওয়া দরকার। একইসঙ্গে দরকার রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংস্কার আনয়ন।
এসময় তিনি ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা ও একই ব্যক্তির একাধিক পদে আসীন না হওয়া এবং নারীর সত্যিকার রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য ১০০ আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে সরাসরি নারীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ তৈরির গুরুত্বারোপ করেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। তবে আমরা আশাবাদী যে রাজনৈতিক দলগুলো দুদক সংস্কার কমিশনের সব সুপারিশের ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, সুজনের নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার প্রমুখ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ মোহাম্মদ সাহান।