জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশের ১ লাখ ১ হাজার ৫২৪ জন মুফতি, উলামা ও আইম্মার স্বাক্ষরিত ফতোয়া আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্রান্ড ইমাম ও একলক্ষ আলেম, মুফতি ও ইমামদের ফতোয়া ও দস্তখত সংগ্রহ কমিটির আহবায়ক ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ শনিবার (১৮ জুন) সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ ফতোয়া জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন।
জানা গেছে, একলক্ষ মুফতি, ওলামা, আইম্মার দস্তখতসম্বলিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মানবকল্যাণে শান্তির ফতোয়ার সমর্থনে ঢাকা বিভাগে ২৮ হাজার ৫৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ হাজার ৬৮১ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ হাজার ২৫০ জন, রংপুর বিভাগে ৯ হাজার ৭৭০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮ হাজার ৮৯২ জন, রাজশাহী বিভাগে ২ হাজার ২শ’ জন, বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৪৫০ জন এবং সিলেট বিভাগে ১৬ হাজার ২২৫ জন মুফতি, ওলামা, আইম্মার দস্তখত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘অতীব পরিতাপের বিষয় আজ কতিপয় দুষ্কৃতকারী নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশ্যে মহাগ্রন্থ কুরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামের নামে বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। মানুষের চোখে ইসলামকে একটা বর্বর নিষ্ঠুর ও সন্ত্রাসী ধর্মরূপে চিত্রিত করছে। এতে সরলমনা কেউ কেউ বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন। এই উগ্রজঙ্গিবাদীরা মূলত ইসলাম ও মুসলিমদেরই শত্রু নয়, তারা মানবতার শত্রু। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, আফ্রিকার দেশসমূহ কিভাবে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে তা আজ কারও অজানা নেই। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও আজ হুমকির সম্মুখীন।’
তিনি আরও বলেন, কেবল আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জঙ্গি দমন করা সম্ভব নয়। কারণ এ সন্ত্রাসীরা তো ধর্মের নামে আত্মদানে প্রস্তুত। তাদের চৈতন্যের বিভ্রম দূর করা দরকার সবার আগে। ইসলামের সঠিক ও বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা তুলে ধরে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষে তা করা সম্ভব। মুসলিম সমাজে ফতোয়ার অর্থাৎ কুরআন হাদীসের আলোকে মুফতি ও ধর্মবেত্তাদের সুচিন্তিত পরামর্শ ও মতামতের গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। ধর্মীয় ও সামাজিক সমস্যাদিতে আজও বিপুল সংখ্যক মানুষ আলিম ও মুফতিগণের দারস্ত হন এবং তাদের ফতোয়া অনুসরণ করেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ইসলাম ও মুসলিমদের কঠিন অবস্থান তুলে ধরার এবং কুরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যার অপনোদন করে সঠিক বিষয়টি উপস্থাপনের জন্য একলক্ষ দেশ বরেণ্য আলিম, মুফতি ও ইমামগণের দস্তখতসহ ফতোয়া সংগ্রহ ও তা প্রকাশের চিন্তা করা হয়েছে।
জানা গেছে, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর নামে ভাগ করে ২৬টি এবং শুধু নারী আলেমদের স্বাক্ষরে ৪টি খণ্ড তৈরি হয়েছে। সব খণ্ডেই জঙ্গিবাদ নিয়ে মূল ফতোয়ার সঙ্গে দারুল উলুম দেওবন্দ, মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া ইসলামিয়া, শায়খ জাকারিয়া রিসার্চ সেন্টার ও জামিয়াতুল আসআদ মাদ্রাসার ফতোয়াও সংযুক্ত করা হয়েছে। সংযুক্ত প্রত্যেকটি ফতোয়াতেই সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদকে কোরআন ও হাদিসের আলোকে হারাম বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ‘একলক্ষ আলিম, মুফতি ও ইমামগণের ফতোয়া ও দস্তখত সংগ্রহ কমিটির সদস্য সচিব আবদুর রহিম কাসেমী, যুগ্ম সদস্য সচিব সদরুদ্দীন মাকুনুন, সদস্য আল্লামা আলীম উদ্দীন দুর্লভপুরী, হোসাইন আহমদ, দেলোয়ার হোসাইন সাঈফী, ইমদাদুল্লাহ কাসেমী, আইয়ুব আনসারী, ইবরাহিম শিলাস্থানী, আবদুল কাইয়ুম খান, যাকারিয়া নোমান ফয়জীসহ অন্যান্য ওলামারা উপস্থিত থাকবেন।
এ বিষয়ে আরও খবর-
জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়ায় বাধা ছিল জামায়াত-শিবির
লাখো আলেমের জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়া যাবে জাতিসংঘে
/সিএ/এসএনএইচ/