বৃষ্টির মধ্যেই গুলশান ২ নম্বরে ৭৯ নম্বর সড়কে মানুষের ভিড়। শোকে মুহ্যমান শহরে বৃষ্টিও যেন কান্না হয়ে ঝরছে। তবুও সেসব উপেক্ষা করেই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দেশি-বিদেশি নাগরিকেরা। এই ফুলেল শ্রদ্ধার মধ্য দিয়েই যেন এই নৃশংস হামলার প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন সাধারণ নাগরিকেরা।
নিহতদের স্মরণে দুদিনের রাষ্ট্রীয় শোকের প্রথম দিনে ৭৯ নম্বর সড়কের মাথায় রাখা ব্যারিকেডের সামনেই জড়ো হন শোকার্তরা। ব্যারিকেডের পাশে তারা ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তাদের কারও কারও হাতে মোমবাতিও ছিল।
ফুলের শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে উপস্থিত হন অঞ্জন নামের ভারতীয় এক ব্যক্তি। অশ্রুসজল চোখে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, এই হামলায় আমার ছেলের স্কুলের বড় ভাইয়েরা মারা গেছেন। তাই ফুল নিয়ে এখানে এসেছি। এমন নৃশংস হামলার পর চুপ করে থাকার কোনও অর্থ নেই।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান লিটন বলেন, এই ঘটনার মাধ্যমে তারা (জঙ্গিরা) তাদের সক্ষমতা, কৌশল ও গভীরতার পরিচয় দিয়ে গেছে। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দোষ দিলে হবে না। নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে এটা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশান-২ এ ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িতে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় অস্ত্রধারীরা। তারা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিনসহ ২০ জিম্মিকে হত্যা করে বলে জানায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। তাদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি ও তিনজন বাংলাদেশি। অভিযানে নিহত হয় ছয় হামলাকারীও।
বিদেশিদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি ও একজন ভারতীয়। বাংলাদেশিদের মধ্যে একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছিলেন। শুক্রবার দুপুরে নিহতদের লাশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিহত তিন বাংলাদেশির মধ্যে রয়েছেন ফারাজ আইয়াজ হোসেন, তিনি এসকায়েফ-এর সিইও সিমিন হোসেনের ছেলে এবং ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি। পরিবারের পক্ষ থেকে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। নিহত অন্য বাংলাদেশি হচ্ছেন ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান ক্রিয়েটিভস (আইএসি)-এর শিক্ষার্থী ইশরাত আকন্দ। সহপাঠীরা তার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।
নিহত অপর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী অবিন্তা কবীর। তিনি এলিগ্যান্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান রুবা আহমেদের কন্যা। পরিবারের পক্ষ থেকে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। অবিন্তা যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে থাকতেন। তিনি ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।
যৌথ বাহিনীর কমান্ডো অভিযানে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। একজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়।
/এমও/এজে