কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দেশের একাধিক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। এছাড়া বৃহস্পতিবার ঈদের নামাজ, শুক্রবার জুমার নামাজেও জঙ্গি হামলার নিন্দা এবং জঙ্গি তৎপরতার সমালোচনা করেছেন খতিবরা। তবে এ ঘটনায় অরাজনৈতিক আধ্যাত্মিক ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে দাবি করা হেফাজতে ইসলাম নিশ্চুপ। এখন পর্যন্ত সংগঠনটির পক্ষ থেকে হামলার নিন্দা জানিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজের কিছু সময় পূর্বে ঈদগাহ ময়দানের পাশে বোমা হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। এছাড়া পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাসহ আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন ঈদগাহে খতিবরা ঈদের নামাজের আগে বয়ানে শুলশান হামলাসহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিন্দা জানান। হামলাকারীরা ইসলামের শুত্রু বলেও মত দেন।
পরে একইদিন সন্ধ্যায় হামলার নিন্দা ও হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেয় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস। বিবৃতিতে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ ও দোষীদের বিচারের দাবি জানায় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো। তবে এখন পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে হামলার নিন্দা জানিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ঢাকা মহানগর হেফাজত বিভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য দিলেও শোলাকিয়ার ঘটনায় তারাও নিশ্চুপ।
এ প্রসঙ্গে হেফাজত আমিরের প্রেস সেক্রেটারি মাওলানা মুনির আহমদ বলেন, আমি ঈদের ছুটিতে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে নিজের বাড়িতে এসেছি। শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় কোনও বিবৃতি হেফাজত আমির বা মহাসচিব দিয়েছেন কিনা আমার জানা নেই।
হেফাজত সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, এ ধরনের হামলা ইসলাম সমর্থন করে না। তবে হামলার ঘটনায় হেফাজতের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। অনেকেই হাটহাজারী মাদ্রাসার বাইরে আছেন। পরে হয়তো দেওয়া হবে।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আলেম-উলামাসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট। দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী ও মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বিবৃতিতে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদগাহে পুলিশ টহলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, যারা হামলা চালিয়ে পুলিশ ও নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে, তারা ইসলাম, দেশ ও জাতির চরম শত্রু। এসব শত্রুদের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলে তাদের নির্মূলের ব্যবস্থা করতে হবে।
শোলাকিয়ায় হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীম বলেন, মুসল্লিদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা কোনও সুস্থ বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারে না। এই হামলা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তেরই অংশ। এ ধরনের হামলা ইসলাম কখনও সমর্থন করে না।
হামলাকারী যুবকদের উদ্দেশে মুফতি রেজাউল করীম বলেন, তোমরা যে পথে চলছো সেটা ইসলামের পথ নয়। তোমাদেরকে কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে বিপথে পরিচালিত করছে। ইসলামের পথে যদি চলতে চাও তবে ওলামায়ে কেরামের পরামর্শ মেনে চলো। মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
গুলশানের ভয়াবহ জঙ্গি হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের পাশের জঙ্গি হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে খেলাফত মজলিস। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটি জানায়, ঈদের দিন বিকেলে দলের মিলনায়তনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান হয়। সেখানে দলের যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি শেখ গোলাম আসগর বলেন, দেশে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় জাতি আজ চরমভাবে উদ্বিগ্ন। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
/সিএ/এএইচ/
আরও পড়ুন-
শোলাকিয়ায় হামলাকারী নিহত ‘জঙ্গি’ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র