X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্থলসীমান্ত চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন আটকে আছে মুহুরির চরে

শেখ শাহরিয়ার জামান
০৭ আগস্ট ২০১৬, ০১:৩৪আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০১৬, ০১:৪৫


বাংলাদেশ-ভারত

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় ও অপদখলীয় জমির মীমাংসা হলেও দুই কিলোমিটার অমীমাংসিত সীমানার সুরাহা সম্ভব হচ্ছে না। এই  দুই কিলোমিটার সীমান্তের অবস্থান ফেনীর মুহুরির চরে। ২০১২ সালে ইনডেক্স ম্যাপ স্বাক্ষর করে ভারত ওই সীমানা মেনে নিলেও, এখন তারা বলছে ভুল হয়ে গেছে। পুনরায় চুক্তি স্বাক্ষরের দাবি তুলছে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশ বলছে, না ওটা মীমাংসিত ইস্যু। এর ফলে স্থলসীমান্ত চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা জটিল হয়ে পড়ছে।

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। স্থলসীমান্ত চুক্তির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ছিটমহল বিনিময়, অপদখলীয় জমির সুরাহা এবং সাড়ে ছয় কিলোমিটার অমীমাংসিত সীমান্তের সীমানা নির্ধারণ।

দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মাঠ থেকে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনার পর ২০১১ সালে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রটোকল স্বাক্ষর করা হয়।

এর ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে ভারতের উভয় সংসদে স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের পর দুদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় ও অপদখলীয় জমির মিমাংসা হয়েছে। কিন্তু সাড়ে ছয় কিলোমিটার অমীমাংসিত সীমান্তের মধ্যে দুই কিলোমিটার সীমানা ভারতের আপত্তির কারণে নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছেনা।এর ফলে স্থলসীমান্ত চুক্তির পূর্ণ বান্তবায়ন করা জটিল হয়ে পড়ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত আছে ৪ হাজার ১শ’ ৫৬ কিলোমিটার, যা ১১৪৫টি স্ট্রিপ ম্যাপ দিয়ে নির্ধারিত হয়েছে। উভয় দেশ ১১৪৪টি স্ট্রিপম্যাপ স্বাক্ষর করলেও একটি স্ট্রিপম্যাপে স্বাক্ষর করতে রাজি হচ্ছেনা ভারত।

উভয় দেশের তিনটি জায়গায় অমীমাংসিত সীমান্ত রয়েছে।এরমধ্যে ফেনির মুহুরির চরে আছে দুই কিলোমিটার, সিলেটের লাঠি টিলায় তিন কিলোমিটার ও পঞ্চগড়ের দইখাতায় দেড় কিলোমিটার অমীমাংসিত সীমান্ত ।

মাঠ পর্যায়ে তিনটি সীমান্ত জরিপের পরে লাঠি টিলা ও দইখাতার সীমান্ত মেনে নিলেও ফেনীর সীমান্ত মানতে রাজি নয় ভারত ।

উভয় দেশ মাপজোক ও রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় রেখে মুহুরির চরের সীমান্ত নির্ধারণ করে এবং ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ইনডেক্স ম্যাপ স্বাক্ষর করে। উভয় দেশের যৌথ তত্ত্বাবধানে ২০১৪ সালে ৪৫টি সীমান্ত খুঁটিও স্থাপন করা হয়।

কর্মকর্তাটি বলেন,২০১৫ সালের ভূমি জরিপ অফিসের যৌথ বৈঠকে মুহুরির চরের সীমান্ত নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতা প্রথম অবতারণা করে ভারত।

এরপর জুলাই মাসে যৌথ সীমান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে ভারত আবারও বিষয়টির অবতারণা করে এবং বলে মুহুরির চরের জন্য যে ইনডেক্স ম্যাপ স্বাক্ষর করা হয়েছিল, সেটি ভুলবশত স্বাক্ষর হয়েছিল এবং এটিকে পুনরায় স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেয় তারা।

বাংলাদেশ পক্ষ থেকে বলা হয়, গোটা প্রক্রিয়াটি ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত স্থলসীমান্ত চুক্তি ও ২০১১ সালে স্বাক্ষরিত প্রটোকল অনুযায়ী করা হয়েছে এবং এর পরিবর্তনের কোনও সুযোগ নেই।

ভারত এ কথা মানতে রাজি না হওয়ায়, সিদ্ধান্ত হয় যেহেতু যৌথ সীমান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে এটি মীমাংসা হচ্ছেনা, সেহেতু এটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে।

সরকারের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা বলেন, স্থল সীমান্তচুক্তির বাস্তবায়ন গত জুন মাসের মধ্যে শেষ হবার কথা থাকলেও এটি সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি।

গত মাসে দুদেশের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও ভারত থেকে এটি মীমাংসার আশ্বাস দেওয়া হয়নি।

কর্মকর্তাটি বলেন, এ বিষয়টির সিদ্ধান্ত দুদেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক  পর্যায় থেকে আসতে হবে। কারণ মুহুরির চরের এই একটি বিষয় ছাড়া ভারত সম্পূর্ণ চুক্তি মেনে নিয়েছে।

তিনি বলেন, ভারত মুহুরির চরের বিষয়টি মেনে নিয়ে ২০১২ সালে ইনডেক্স ম্যাপ স্বাক্ষরের পর ২০১৪ সালে সীমান্ত পিলার স্থাপন করেছে। এখন তাদের এ বিষয়টি না মানা অত্যন্ত দুঃখজনক।

বিষয়টির স্পর্শকাতরতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন যদি পুনরায় সীমান্ত পিলার স্থাপন করা হয় এবং এর ফলে বাংলাদেশ কম জমি পায়, তবে রাজনৈতিকভাবে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে এর একটি বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

কর্মকর্তাটি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে শুধুমাত্র মাপজোক দিয়ে সীমান্ত নিধারণ করা হয়নি, এখানে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়গুলোকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, মুহুরির চরেই একটি শ্মশান আছে, যেটি বাংলাদেশের সীমানায় পড়েছে। কিন্তু সেখানে ভারতীয়রা মৃতদেহ সৎকার করে।

আলোচনা পর্যায়ে ভারত এ শ্মশানটি তাদের অঞ্চল হিসাবে চাইলে ধর্মীয় স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে বাংলাদেশ রাজি হয় বলে তিনি জানান।

এসএসজেড/এপিএইচ/

আরও পড়ুন:

বিএনপির নতুন কমিটি: প্রত্যাশার সঙ্গে হতাশা, লঙ্ঘন গঠনতন্ত্রের

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস