X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

হারিয়ে যাওয়া নদীর কথা

উদিসা ইসলাম
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২১:৪৮আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২২:৪৩

ভরা বর্ষায় পদ্মা নদী

বর্ষায় থই থই পানিতে টইটুম্বুর পদ্মা। রাজশাহী মহানগরীর পাশ দিয়ে প্রবহমান নদীর এ অবস্থা দেখে উৎফুল্ল স্থানীয় নাগরিক সিরাজুল ইসলাম। নদী নিয়ে তার মন্তব্য, ‘অন্য বছরের তুলনায় এবার আগস্ট মাসের পদ্মায় পানি বেশি। আগস্টের মাঝামাঝি ফুলে ফেঁপে ওঠে পদ্মা। কিন্তু, আমাদের দুর্ভাগ্য এই পদ্মাতেই আর  কিছুদিন পর পানির প্রবাহ একেবারেই কমে যাবে। হয়তো পুরোপুরি শুকিয়েও যাবে।’ তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘একসময় সারাবছরই পানি থাকতো এ পদ্মায়। কিন্তু, গত কুড়িবছরে তা কমে গেছে। নদীগর্ভে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত উঁচু চর জেগে উঠেছে।’  

পানি কমলে পদ্মার বুকে জেগে ওঠে চর

নদী গবেষকরা বলছেন, ষাটের দশকে সাড়ে সাতশ’ নদী ছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে এ সংখ্যা কমে মাত্র ২শ’ ৩০টিতে দাঁড়িয়েছে। ৫০ বছরে হারিয়ে গেছে ৫২০টি নদী। বর্তমানের ২৩০ নদীর মধ্যে ৫৯টি আন্তর্জাতিক। এগুলোর মধ্যে ৫৪টি ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।  এসব নদীর উৎসমুখে বিভিন্ন স্থানে ব্যারেজ নির্মাণ কিংবা পানির প্রবাহে বাধা দেওয়ায় বাংলাদেশে ঢোকার পর এসব নদীতে পানির পরিমাণ একেবারেই কমে যায়। শুকনো মৌসুমে এসব নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকে না। ফলে বদলে যাচ্ছে নদীগুলোর গতিমুখ, শুকিয়ে মরে যেতে যেতে দেশের মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী।

কপোতাক্ষ নদ

নদী গবেষক গৌরাঙ্গ নন্দীর গবেষণায় জানা যায়, বর্তমানে কপোতাক্ষের কপিলমুনি অংশ একবারে শুকিয়ে গেছে। এর নিচের অংশে জোয়ারের পানি আসার পরিমাণ কমছে। ফলে এ অংশও দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কপোতাক্ষ নদের দৈর্ঘ্য মোট ৩৬৭ কিলোমিটার। উত্তরে দর্শনা থেকে তাহিরপুর এ নদের ওপরের অংশ, যাকে ভৈরব অববাহিকাও বলা হয়। এর দৈর্ঘ্য ১১০ কিলোমিটার, তাহিরপুর থেকে পাইকগাছার শিববাড়ী পর্যন্ত বর্তমান কপোতাক্ষ, যার দৈর্ঘ্য ১৭৫ কিলোমিটার; আর রাড়ুলী থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত কপোতাক্ষের বিচ্ছিন্ন অংশ, যার দৈর্ঘ্য ৮২ কিলোমিটার। এ নদের তাহিরপুর থেকে কপিলমুনি পর্যন্ত অংশে বর্তমানে আর প্রবাহ নেই।

শুকনো মৌসুমে তিস্তা

রংপুর শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে গঙ্গাচড়া উপজেলা। এ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিই হচ্ছে তিস্তাবেষ্টিত। শুকনো মৌসুমে তিস্তায় থাকে হাঁটু জল। ডালিয়া থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটারজুড়ে জেগে উঠেছে চর। বগুড়ার প্রমত্তা করতোয়া নাব্যতা হারাতে হারাতে এখন সরু খাল। একই চেহারা গাইবান্ধার ঘাঘট ও লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর। শুকনো মওসুমে নাব্যতা হারাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদও।

ভৈরব নদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে যশোর অংশের ২৫ কিলোমিটার এলাকা প্রায় শুকিয়ে গেছে। বর্তমানে ভৈরব নদকে মানুষ ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করছে।

বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর বাইরে স্থানীয় ছোট নদীগুলোকে চিহ্নিত করেছে পানি উন্নয়ন  বোর্ড। উইকিপিডিয়ায় দেখা গেছে, প্রধান নদীগুলোর বাইরে বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড চিহ্নিত স্থানীয় নদীর সংখ্যা মাত্র ৪০৫টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এসব নদীর বেশিরভাগই শুষ্ক মওসুমে শুকিয়ে যায়। ফলে নাব্যতা হারাতে হারাতে এগুলো পড়ছে দখলদারদের হাতে। আর এই সুযোগ নিয়ে মানচিত্র থেকেই বিদায় নিচ্ছে অসংখ্য নদী ও ছোট বড় জলাশয়।

করতোয়া নদী

এদিকে চিত্রা নদীর উৎপত্তি চুয়াডাঙ্গা জেলায়। বাংলাপিডিয়া অনুসারে, চুয়াডাঙ্গা ও দর্শনার নিম্নাঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে দর্শনা, কালীগঞ্জ, শালিখা ও কালিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রায় ১৭০ কিমি প্রবাহিত হয়ে নড়াইল জেলার গাজীরহাটে  নবগঙ্গা নদীর সঙ্গে মিলেছে।

নড়াইল শহরের বাঁধাঘাট এলাকা থেকে চিত্রা নদীর পথ ধরে উত্তর এবং দক্ষিণে যেদিকেই যাওয়া যাক দেখা যাবে নদীর কোল ঘেঁষে সারি সারি বাড়ি। একতলা থেকে বহুতল বাড়ি। স্থানীয়রা জানান, নদীর জায়গা দখল করেই বেশিরভাগ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এসব জায়গা অবৈধ দখলের কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলছেন, এ নদীর কোনও ভাঙা-গড়াও না থাকায় নদী পাড়ের বাসিন্দারা দখল করতে উৎসাহিত হচ্ছেন।আর নেই কোনও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ।

বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ-নদীর এই দুর্দশার জন্য একদিকে পাশের দেশ ভারত ও বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বোঝাপড়ায় ঘাটতিকে দায়ী করা হয়। এছাড়াও জবর দখল ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণও সমানভাবে দায়ী। এরই মধ্যে আজ রবিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব নদী দিবস।

চিত্রা নদী

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপাদ্য নিয়ে নানা আয়োজনে পালিত হলো দিবসটি। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে এ দিবস পালিত হচ্ছে।

১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালন করতে শুরু করে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া (বিসি) ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল বিসি রিভারস ডে পালন দিয়ে। ২০০৫ সালে জাতিসংঘ নদী রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরি করতে ‘জীবনের জন্য জলদশক’ ঘোষণা করে। সে সময়ই জাতিসংঘ দিবসটি অনুসমর্থন করে। এরপর থেকেই জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি পালন করছে।’

পরিবেশ গবেষক আবু নাসের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিটা নদীর চরিত্র আছে। সেটাকে বাধাগ্রস্ত করতে করতে, তাকে দূষিত করতে করতে আমরা ভাবিনি এরা না থাকলে তখন আবহাওয়ার ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে।’

তুরাগ

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় না, আমরা আদৌ তেমন কোন প্রকল্প নিতে পেরেছি। আমাদের ভাবনাচিন্তাগুলো কেবল তুরাগ বুড়িগঙ্গাকেন্দ্রিক। যদিও এই দুটো নদীকেও আমরা দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারিনি। বিচ্ছিন্নভাবে ভেবে সারাদেশের মরে যাওয়া নাম হারানো নদীগুলোকে ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘ফারাক্কা বাঁধ দ্বারা ভারতের একতরফা পানি শোষণ নীতির কারণে ভৈরব নদের অবস্থাও করুণ আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে নদের যেটুকু প্রবাহ আছে সেইটুকুও বিপন্ন হবার পথে। নদের স্বাভাবিক পানি প্রবাহের পরিবেশ নেই।’

/টিএন/আপ-এইচকে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা