X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

হিযবুত তাহরীরের দাওয়াতি কর্মসূচি চলছে প্রকাশ্যেই

নুরুজ্জামান লাবু
০৬ মার্চ ২০১৭, ২৩:১২আপডেট : ০৭ মার্চ ২০১৭, ০৯:৫৭

হিযবুত তাহরীর

গোপনে সংগঠিত হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর। এখনও চলছে দাওয়াতি কার্যক্রম। সংগঠনের সদস্যরা সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের মতাদর্শ পৌঁছে দিতে প্রকাশ্যে লিফলেট বিতরণ করছেন। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও ঘাঁটি গাড়ার চেষ্টা করছে হিযবুত নেতাকর্মীরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। যারা হিযবুতকে আবারও সংগঠিত করার চেষ্টা করছে তাদের আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলছে।

গত ১ মার্চ শাহবাগ এলাকা থেকে সাজিদ বিন আলম নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। সাজিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। সে গত কয়েক বছর ধরে হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সাজিদকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তা যাচাই-বাছাই করে তার সহযোগীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।’ সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, হিযবুত তাহরীরের সদস্যরাও মাঠ পর্যায়ে ‘স্লিপার সেল’ পদ্ধতিতে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। যাতে একজন ধরা পড়লে অন্যদের বিষয়ে কোনও তথ্য সে দিতে না পারে। তবে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

সিটি সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ হওয়ার পর কয়েকমাস কার্যক্রম স্থগিত রাখলেও কয়েকবছর ধরে গোপনে গোপনে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে আসছে হিযবুত তাহরীর। বিশেষ করে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- বুয়েটসহ ঢাকার ভেতরের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। সংগঠিত হওয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে তারা সরকার বিরোধী নানারকম কথা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করছে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে উদ্ধার হওয়া লিফলেটে ‘জালিম সরকারের পতনের মাধ্যমে খিলাফত রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, হিযুবত তাহরীরের শীর্ষ নেতারা একেকটি এলাকা একেকজনকে সংগঠিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এলাকাভিত্তিক এসব নেতাদের ‘নকিব’ বলে সম্বোধন করা হয়। ১ মার্চ গ্রেফতার হওয়া সাজিদ তার নকিবের বিষয়ে কিছু তথ্য দিয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা গেলে হিযবুতের বর্তমান শীর্ষ নেতাদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা।

পাঠচক্রের আড়ালে চলছে দাওয়াতি কার্যক্রম

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শুরু থেকেই হিযবুত তাহরীর পাঠচক্রের আড়ালে তাদের দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক পাঠচক্র ছিল তাদের দাওয়াতি কার্যক্রমের মূল বিষয়। মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে হিযবুত নিষিদ্ধ ঘোষণার পর পাঠচক্রও বন্ধ রাখা হয়। সম্প্রতি এই পাঠচক্রকেন্দ্রিক দাওয়াতি কার্যক্রম আবারও চালু হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সাজিদ জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকটি পাঠচক্র চালু রয়েছে। সপ্তাহের একেকদিন একেকটি পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হয়। এসব পাঠচক্রের মূল উদ্দেশ্য হলো অংশগ্রহণকারীদের ধীরে ধীরে কাছে টেনে সংগঠনের সদস্য হিসেবে তৈরি করা। সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, কয়েকটি পাঠচক্রের খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে নজরদারি চলছে। যেকোনও সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে।

নিজেদের প্রেসেই ছাপানো হয় লিফলেট

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, হিযবুত তাহরীর সদস্যরা অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে তাদের নিজেদের প্রেসেই লিফলেট ছাপাচ্ছে। একারণে সরকার বিরোধী বক্তব্য সম্বলিত লিফলেট তৈরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা এসব তদারকি করে থাকেন। যারা দাওয়াতি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে লিফলেট বিতরণ করে থাকেন তারা সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারছেন না। সিটির একজন কর্মকর্তা জানান, হিযবুতের সমর্থক বা নিজেদের প্রেস ছাড়া এসব লিফলেট ছাপাতে কারও রাজি হওয়ার কথা নয়। হিযবুতের শীর্ষ নেতাদের নিজস্ব প্রেসে এসব ছাপানো হচ্ছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। সেসব প্রেসও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

এখনও টার্গেট উচ্চবিত্ত ও মেধাবী তরুণেরা

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, শুরু থেকেই হিযবুতের টার্গেট ছিল উচ্চবিত্ত ও মেধাবী তরুণরা। এখনও তারা সেই টার্গেটেই দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। উচ্চবিত্ত ও মেধাবী তরুণদের ধর্মীয় নানা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মগজধোলাই করে সংগঠনের সদস্য সংগ্রহের কাজ করে আসছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, হিযবুতের পক্ষ থেকে এখনও ‘ধ্বংসাত্মক’ কোনও কার্যক্রমের তথ্য পাওয়া না গেলেও এই সংগঠনটি ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এই সংগঠনের সদস্যরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাচ্ছে। উচ্চবিত্ত ও মেধাবী তরুণদের দলে ভেড়ানোর অর্থ হলো- এরা যখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসবে তখনই তারা তাদের ভাষায় খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য একযোগে মাঠে নামবে।

সিটিটিসির ওই কর্মকর্তা বলেন, হিযুবত তাহরীর সব ধরনের পেশার মধ্যেই নিজেদের লোকজন ঢোকানোর চেষ্টা করছে। যাতে সবদিক থেকে সহযোগিতা পেয়ে তারা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এখন তাদের টার্গেট হচ্ছে শৃঙ্খলা বাহিনীতে নিজেদের সমর্থক গোষ্ঠী বাড়ানো। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে তাদের সেই প্রচেষ্টারও কিছু কিছু তথ্য এসেছে।

প্রসঙ্গত, হিযবুত তাহরীর ইসলামী মতাদর্শভিত্তিক সংগঠন, যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর সরকার ‘জননিরাপত্তার স্বার্থে’ দলটিকে নিষিদ্ধ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

/টিএন/ 

আরও পড়ুন: নিরস্ত্র বাঙালির সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তর

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আওয়ামী লীগ এখন শূন্য মুড়ির টিন: রিজভী
আওয়ামী লীগ এখন শূন্য মুড়ির টিন: রিজভী
বজ্রাঘাতে ৮ জেলায় ১০ জনের মৃত্যু
বজ্রাঘাতে ৮ জেলায় ১০ জনের মৃত্যু
ভিত্তিপ্রস্তরের ১৪ বছর পর চট্টগ্রাম নগর ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন
ভিত্তিপ্রস্তরের ১৪ বছর পর চট্টগ্রাম নগর ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন
লোকসভা নির্বাচন: তৃতীয় ধাপের ভোটে হেভিওয়েট প্রার্থী যারা
লোকসভা নির্বাচন: তৃতীয় ধাপের ভোটে হেভিওয়েট প্রার্থী যারা
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র