ইফতারের বাজার হিসেবে বছরের পর বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী বাজারের তকমা গায়ে লাগিয়ে রেকেছে রাজধানীর চকবাজার। এক বছরের বিরতি দিয়ে আবারও সেই চকবাজার ফিরেছে বৈচিত্র্যময় ইফতারের পসরা নিয়ে। আর গোটা রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোর ভোজনরসিকদের ভিড়ে আজ রবিবার (২৮ মে) রমজানের প্রথম দিনেই জমে উঠেছে পুরান ঢাকার এই ইফতারের বাজার। হরেক রকমের কাবাব, মুড়ি মাখা, পরটার পাশাপাশি ইফতারের সব প্রচলিত পদ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শরবতের মিলনমেলা যেন চকবাজার। এদিকে, রোজার প্রথম দিনেই অস্বাস্থ্যকর খাবার রাখার অপরাধে কয়েকজন দোকানিকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সরেজমিনে চকবাজারে গিয়ে দেখা যায়, রবিবার দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে না হতেই ইফতার সামগ্রী নিয়ে চকবাজার শাহী মসজিদের সামনের রাস্তার দুই পাশে ছোট-বড় অস্থায়ী দোকান সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। দোকানে দোকানে শোভা পাচ্ছে দো-ভাজা (বিশেষ ধরনের পেঁয়াজু), ডুবো তেলে ভাজা পাকোরা, ফালুদা, সুতি কাবাব, পনির মাখানো মুড়ি ভর্তা, চিংড়ি মাছের বল, দই বড়া, সমুচা, জিলাপী, হালিম, পরোটা, টানা পরোটা, কিমা পরোটা, চিকেন ললি, বিফমিনি কাবাব, চিকেন সিংগার স্টিক, আলু চপ, ঘুঘনি, কচুরি, ঘোল প্রভৃতি।
চকবাজারের দোকানগুলোতে আরও পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রকমের শরবত— কাশ্মীরি শরবত, বোরহানি, লাচ্ছি, লাবাং, লেবুর শরবত, আখের রস। খেজুর, শশা, ধনেপাতাসহ ফলমূলের দোকান তো আছেই। আর ডিম, আলু, গরুর মগজ, কলিজা, ঘি, মরিচ, মুরগির মাংস, গিলা-কলিজা, চিড়া-দই, বুটের ডাল, মিষ্টি কুমড়ার বড়ার মতো আরও অনেক খাবারই পাওয়া যায় চকবাজারে। এখানকার বিশেষ বিশেষ সব ইফতারের আইটেমের দেখা বাইরে কোথাও পাওয়াই মুশকিল।
কথা হলো চকবাজারের এক ইফতার বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি জানালেন, রোজা শুরুর আগে থেকেই ইফতারের দোকান বসানোর কাজ চলে চকবাজারে। আর পুরনো দোকানিরাই এখানে দোকান বসাতে পারেন, যারা এখানে বহুদিন ধরে দোকান বসিয়ে আসছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আফরোজ হাছান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইফতারে চকবাজারের কোনও আইটেম না থাকলে যেন রোজার পূর্ণতা আসে না। রোজা রাখলে ইফতারে এই চকবাজারের খাবার থাকতেই হবে।’
এদিকে, রমজানের প্রথম দিনই চকবাজারে ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে তিন জনকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। রবিবার দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে অভিযানটি চালানো হয়।
মশিউর রহমান বলেন, ‘পবিত্র রমজান উপলক্ষে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করেছে। ফলে তাদেরকে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
দরদাম: পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বড় বাপের পোলায় খায় বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪শ টাকায়। বছরের পর বছর ধরে জনপ্রিয় এই ইফতার আইটেমটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ২৭টি উপকরণ। এছাড়া, খাসির রোস্টের দাম আকারভেদে ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা, মুরগির রোস্ট আড়াইশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা, কবুতরের রোস্ট দেড়শ টাকা, কোয়েলের রোস্ট ৫০ থেকে ৭০ টাকা, গরুর সুতি কাবাব কেজিপ্রতি ৫শ থেকে ৬শ টাকা, দইবড়া কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, চিকন জিলাপির কেজি ১৪০ টাকা, বড় শাহী জিলাপি ২শ টাকা, চিকেন কাটলেট দেড়শ থেকে ২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরমের দিনের রোজায় বাড়তি বিক্রি হচ্ছে লাবাং। এর দাম ১৩০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
/আরএআর/টিআর/