X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাহাড়ি ও সমতলের সবাইকে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাসের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০১ ডিসেম্বর ২০১৭, ২১:৫০আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০১৭, ২১:৫৬

শান্তিচুক্তির বিশ বছর পূর্তি  উপলক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী

পাহাড়ে এবং সমতলে যারা আছেন, তাদের সবাইকে সুন্দরভাবে, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাসের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের সব জনগোষ্ঠী,সমতলের মানুষের উদ্দেশে এ আহ্বান জানান তিনি। 

শান্তিচুক্তির বিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন থেকে পার্বত্য জেলার মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।   

তিনি বলেন,‘শান্তিচুক্তি আমরা করেছিলাম- দেশের মানুষ দারিদ্র্যের হার থেকে মুক্তি পাবে, উন্নত জীবন পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে, সেই লক্ষ্য নিয়ে। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল- বাংলাদেশকে ক্ষুদামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ প্রতিটি এলাকার মানুষ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ 

পার্বত্য অঞ্চলের একটি ভালো জায়গা দেখে সেখানে একটি চমৎকার কমপ্লেক্স করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেটির ডিজাইনও পার্বত্য চট্টগ্রামের যে ট্রাডিশন ও কালচার তা বজায় রেখেই হবে। সেখানে অনেক পার্বত্যবাসী আছেন, তাদের নিজস্ব মাতৃভাষার অনেকের অক্ষর নাই। কিন্তু তাদের ভাষা আছে, আবার অনেকের অক্ষর আছে।তারা যাতে নিজস্ব ভাষায়  শিক্ষা-দিক্ষা নিতে পারেন, সেই সুযোগটাও আমরা করে দিতে চাই। মাতৃভাষা যাতে কেউ ভুলে যেতে না পারেন। পার্বত্য অঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আমাদের যে নিজস্ব ভাষা আছে, সেই ভাষাগুলো সংরক্ষণের এবং ভাষা শেখার ব্যবস্থা করে দেবো।’ 

পার্বত্য অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। যাতে উচ্চ শিক্ষা নিজের এলাকায় বসে করতে পারে। সেই ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। সার্বিকভাবে উন্নয়ন করার সুযোগ পেয়েছি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পেরেছি বলে। যেকোনও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত  হচ্ছে শান্তি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই সার্বিকভাবে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করতে চাই।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘একটি অঞ্চলের মানুষ অবহেলিত থাকবে-তা চাই না বলেই শান্তিচুক্তি করেছি। শান্তিচুক্তি আমরা করেছিলাম- আমাদের দেশের মানুষ দারিদ্র্যের হার থেকে মুক্তি পাবে, উন্নত জীবন পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে, সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে।’ 

তিনি বলেন, ‘‘২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি বলে এই চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ থমকে যায়। তখন বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। এটা সবার জানা উচিত, বিএনপি-জামায়াত জোট এই চুক্তির বিরোধিতা করে। বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া এমনও কথা বলেছিলেন, ‘শান্তিচুক্তি হলে ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে।’ আমি আমার বক্তব্যে জিজ্ঞাসা করলাম-তখন উনি  পার্লামেন্টের সদস্য ফেনী অঞ্চলের। ওনাকে তো ভারতে গিয়ে ভারতীয় পার্লামেন্টে বসতে হবে। উনি  ভারতীয় পার্লামেন্টে গিয়ে বসেছেন কিনা? এ ধরনের অবান্তর কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। যেদিন অস্ত্র সমর্পণ করা হয়,হরতাল দিয়ে অস্ত্র সমর্পণে বাধা দেওয়া কী কারণে। আমার মনে হয়েছে, অস্ত্র বেচাকেনার সঙ্গে তাদের কেউ কেউ জড়িত ছিল বলে দু’পয়সা কামাই করতো। ব্যবসাটা বন্ধ হয়ে যাবে বলেই হয়তো বাধা দিয়েছিল। তাছাড়া, আর কিছুই না। ভারত হয়ে যাবে- এটা প্রমাণ করার জন্যে তারা ভারতের পতাকাও তৈরি করে এবং সেই পতাকা আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা ধরে ফেলে। এতদূর নিচে পর্যন্ত তারা নেমেছিল। পৃথিবীর বহু দেশে শান্তিচুক্তি হয়েছে। কিন্তু কোথাও অস্ত্র সমর্পণ করেনি, যেটা আমাদের দেশে হয়েছে। আমরা শান্তিচুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে সেটা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। চুক্তিতে  স্পষ্ট একটি কথা লেখা আছে যা কিছু আমরা করবো, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী করবো। অতএব, সংবিধানের বাইরে কিছু হবে না। কেউ কেউ এখানে বিভ্রান্তি ছড়ায়। অতিরিক্ত দরদ দেখায়। কেউ কেউ বাস্তবায়ন নিয়ে অতিরিক্ত কথা বলে ফেলে। আমাদের পার্বত্যবাসীরা একটু সহজ-সরল মানুষ। তাদের বিভ্রান্ত করার জন্যে, উস্কে দেওয়ার জন্যে অনেকেই অনেক কথা বলে। শান্তিচুক্তিতে কিছু কালক্ষেপণ হয়েছে। ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি।বিএনপি ক্ষমতায় আসে। তারা এই চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক ছিল না। চুক্তি বাস্তবায়নের যে ধারা আমরা চালু করেছিলাম, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে আবার আমরা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই। এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্যে উপনেতাকে দিয়ে একটি কমিটি করে দেই। চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ আমরা দ্রুত করি। ফলে চুক্তির এতগুলো ধারা আমরা বাস্তবায়ন করি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,‘পৃথিবীর বহু দেশে এরকম বহু চুক্তি হয়। এভাবে প্রত্যেকটি জিনিস দেখে দেখে বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা, বলতে পারবো না। যেহেতু চুক্তি আমরা করেছি,অবশ্যই সবকিছু আমরা বাস্তবায়ন করবো। কিন্তু এখানে প্রত্যেকের সহযোগিতা  প্রয়োজন। আমরা চাই, এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নতি। আজকে শান্তিচুক্তি হওয়ার পরে সেখানে রাস্তাঘাট হয়েছে। এখন সাজেক পর্যন্ত যাওয়া যায়। আমার মনে আছে, ১৯৭০ সালে আমার  মা, আমি এবং আমরা ভাইবোন সবাই মিলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার খুব শখ ছিল (সাজেকে যাওয়ার)। ওখানের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টরা বললেন, ওখানে যেতে হলে সাত দিন হেঁটে যেতে হবে। সেখানকার মানুষের জীবন-জীবিকার তেমন ব্যবস্থাই ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘যেখানে সাত দিনে হেঁটে যেতে হতো, সেখানে এখন গাড়ি করে সোজা চলে যাওয়া যায়। শুধু সাজেক বলে না, পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্প এখন উন্নত। সেখানে ব্রিজ, রাস্তাঘাট সব করে দিয়েছি। পার্বত্য শান্তিচুক্তির ফলে সেখানে জীবন যাত্রার মান ও পথ উন্নত হয়েছে। সেখানে স্কুল-কলেজ করে দিয়েছি। রাঙ্গামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ, টেকনিক্যাল কলেজ, ট্রেনিংয়ের কলেজ চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে করে দিয়েছি। ওই এলাকার মানুষের জীবন জীবিকার জন্যে যা যা করার দরকার, করে দিয়েছি। চাকরির জন্যে আলাদা কোটা ব্যবস্থা চালু করেছি। একটি অঞ্চলের মানুষ অবহেলিত থাকবে, সেটা আমরা চাই না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে চুক্তির বাইরেও সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের যে কাজ, সেটি আমরা ব্যাপকভাবে করেছি।’

 

 

/পিএইসি/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!