X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়ায় আমরাও খুশি: বাংলা ট্রিবিউনকে বিশ্বব্যাংক

গোলাম মওলা
০৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৭:৫০আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:১৯

 

পদ্মা সেতু দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল করলেও ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এসে সংস্থাটি সেই প্রকল্পেরই প্রশংসা করছে। প্রথম বারের মতো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় সংস্থাটি বলছে, পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়ায় আমরা খুশি। এই পদ্মা সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দারিদ্র্যবিমোচন ও আর্থ-সামাজিক বৈষম্য কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। শনিবার (২ ডিসেম্বর) বিশ্বব্যাংক ই-মেইলে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলা ট্রিবিউনকে এই প্রতিক্রিয়া জানায়।

প্রসঙ্গত, এই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির ওপর প্রথম স্প্যান বসানোর দিনই  বিশ্বব্যাংকের বক্তব্য জানতে বাংলা ট্রিবিউন থেকে সংস্থাটির কাছে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠি পাঠানোর দুই মাস পর শনিবার  বাংলা ট্রিবিউনকে মেইলের মাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর বিষয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য তুলে ধরেছে। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিমিয়াও ফ্যান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে দেখে বাংলাদেশের বৃহত্তম ও দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে আমরাও খুশি। এ ঘটনায় বাংলাদেশের, বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দারিদ্র্যবিমোচন ও বৈষম্য কমাতে পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে বিশ্বব্যাংক প্রথম বাংলাদেশকে সমর্থন করে। এরপর থেকেই সংস্থাটি বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য ২৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ অনুদান ও সুদমুক্ত ঋণ দিয়েছে। গত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাংক থেকে যত ‍ঋণ দেওয়া হয়েছে, এরমধ্যে সুদমুক্ত ঋণ পাওয়ার  ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে।’

বাংলা ট্রিবিউনকে পাঠানো বিশ্ব ব্যাংকের চিঠি

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এই পদ্মা সেতু। এই সেতু ঘিরেই সোনালি ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন এই অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগ কাড়বে, গড়ে উঠবে এসব জেলায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা। এ সেতু দিয়ে বাংলাদেশ যুক্ত হতে পারবে এশিয়ান হাইওয়েতে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘোরার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থানও।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের জুনে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে দেয় বিশ্বব্যাংক। এর আগে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এরপর বিশ্বব্যাংক ঋণসহায়তা স্থগিত করে দেয়। অন্য দাতা-সংস্থাগুলোও সাহায্য স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়। এর ১০ মাস পর ঋণচুক্তি পুরোপুরি বাতিল করে দেয় সংস্থাটি।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণ। সরকারের আশা ছিল, কাজ শুরু করে মেয়াদের মধ্যেই এর নির্মাণকাজ শেষ করবে। কিন্তু নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার আগেই বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুললে অর্থাভাবে কাজ স্থগিত হয়ে যায়।

এরপর অনেক বিতর্ক আর বাধা পেরিয়ে অবশেষে বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা ও অর্থায়নেই  বাস্তবে রূপ নিতে থাকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সরকার নিজস্ব উদ্যোগে নির্মাণ শুরু করায় জনমনেও স্বস্তি বিরাজ করে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির ওপর প্রথম স্প্যানটি বসানো হয়। যার ওপর দিয়ে যানবাহন চলবে। পিলারের পর পিলারে স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়েই সেতু পূর্ণ চেহারা পাবে। স্বপ্নের এই সেতুর দ্বিতীয় স্প্যানটি জাজিরা প্রান্তে আগামী ১৫ ডিসেম্বর বসানো হতে পারে।
 প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বপ্নের এই সেতু নিয়ে আমাদের বড় প্রত্যাশা, সেটা এখন পূরণ হতে চলেছে।’ তিনি বলেন, ‘আগে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সরাসরি নির্দেশনায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ হয়েছে। কিন্তু এই সেতুর কাজটি হচ্ছে দেশীয় নির্দেশনায় আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর সহায়তায়। এই সেতুর বাস্তবে রূপ নেওয়া নিয়ে দেশের ভেতরে বড় অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নতুন ধরনের সক্ষমতা তৈরি করবে। ফলে আগামীতে দেশীয় ব্যবস্থাপনায় আরও বড় অবকাঠামো তৈরি করতে সহায়ক হবে।’

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৫ সালে সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য থাকলেও এখন সেটি ২০১৮ সাল পর্যন্ত  লাগতে বসেছে। এই প্রকল্প চলবে ২০২০ সাল পর্যন্ত। সময় পিছিয়ে যাওয়ায় এর ব্যয়ও বেড়েছে। চলতি বছর ৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফা ব্যয় বাড়িয়ে সংশোধিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

পদ্মা সেতুর অগ্রগতি সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর মূল প্রকল্পে ৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এ পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৪৯ শতাংশ। সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৭ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, চার লেন বিশিষ্ট পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার, প্রস্থ ৭২ ফুট। এই সেতুতে থাকবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন পরিবহন সুবিধা। চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড এই প্রকল্পে বাংলাদেশি ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে৷

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
টিভিতে আজকের খেলা (৭ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৭ মে, ২০২৪)
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস