X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার পার্ক বাঁচাবে কে?

আবু হায়াৎ মাহমুদ
২৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৭:৩৫আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৫:০৮

রাজধানীর রমনা পার্কের ভেতরের ক্যানালের বেহাল দশা (ছবি- মেহেদী হাসান/ঢাকা ট্রিবিউন) রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ খেলার মাঠ ও উদ্যান ব্যবহারের সুযোগ এই নগরীর বেশিরভাগ মানুষেরই নেই। ফলে রাজধানীবাসী, বিশেষ করে শিশুদের জন্য এই শহরে খেলাধুলা করার সুযোগ নেই বললেই চলে। এ পরিস্থিতির জন্য পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, পরিবেশবিদ, সুশীল সমাজের সদস্য ও অধিকার গোষ্ঠীগুলো।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে রাজধানীতে প্রায় ৬০টি খেলার মাঠ ও উদ্যান রয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনোটিই তাদের একক এখতিয়ারভুক্ত নয়। গণপূর্ত অধিদফতর, রাজউক, বন বিভাগ এবং পরিবেশ অধিদফতরও এসব খেলার মাঠ ও উদ্যানের তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তবে এরই মধ্যে ১৯টি উদ্যান ও ১২টি খেলার মাঠ জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। যদিও এই কাজে সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাগুলোকে এ ধরনের কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সদস্য সচিব ইকবাল হাবিব বলেন, ‘সব খেলার মাঠ ও খোলা জায়গাগুলো ধীরে ধীরে দখল হয়ে যাচ্ছে। এই শহরে এখন শিশু ও বয়স্কদের জন্য মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ার কোনও জায়গাই নেই। আর কর্তৃপক্ষেরও এ বিষয়ে কোনও নজর নেই।’
ফার্মগেটে পার্কের ভেতরে গড়ে উঠেছে আবর্জনার স্তূপ, রাজধানীর অন্য পার্কগুলোর অবস্থাও একই (ছবি- মেহেদী হাসান/ঢাকা ট্রিবিউন) বাপার মতোই খোলা মাঠ ও উদ্যান নিয়ে একই রকম উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী অ্যাসোসিয়েশন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন ও গ্রিন ভয়েসের মতো পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। এর মধ্যে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অবিলম্বে রাজধানীর শিশুপার্ক ও খেলার মাঠগুলো উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোনও বদল হয়নি। খেলার মাঠ ও উদ্যানগুলো জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া যায়নি।
উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত হওয়ার আগে ঢাকা সিটি করপোরশন রাজধানীতে একটি জরিপ চালিয়েছিল। ওই জরিপে দেখা যায়, ঢাকার খেলার মাঠগুলোর বড় একটি অংশই অবৈধ দখলের শিকার কিংবা ভিন্ন কোনও কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিস্থিতির কেবল অবনতিই ঘটেছে। অনেক পার্ক ও খেলার মাঠেই নেই ঘাস, শুকনো মৌসুমে এগুলো ধূলায় ভরে যায়, বর্ষার মৌসুমে হয়ে পড়ে কর্দমাক্ত। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব শিশু পার্ক ও খেলার মাঠের ভেতরে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকানপাট। নির্বিচারে সব ধরনের বর্জ্য ফেলায় অনেক মাঠই শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে।
৩৯ শতাংশ মানুষ কখনোই পার্কে যায়নি
ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ঢাকার অধিকাংশ খোলা জায়গা ব্যবহার করছে সরকারি সংস্থা বা বেসরকারি সংগঠনগুলো। ফলে এসব স্থানে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার কমে যাচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নগরের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নাগরিক প্রয়োজন মেটাতে পার্ক ও খোলা জায়গা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে দুই সিটি করপোরেশন।
অবৈধ অস্থায়ী দোকানপাটে দখল হয়ে পড়েছে রাজধানীর পার্কগুলো, নয়াটোলা পার্কে তোলা ছবি (ছবি- মেহেদী হাসান/ঢাকা ট্রিবিউন) ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পনার সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতিটি নাগরিকের জন্য মাথাপিছু ০.০৫২ বর্গমিটার পার্ক ও ০.৫ বর্গমিটার খোলা সবুজ জায়গা থাকতে হবে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও লিডারশিপ ইন এনার্জি এনভারোনমেন্টাল ফর নেইবারহুড ডিজাইনের সুপারিশে এই পরিমাণ যথাক্রমে ৯ ও ২০ বর্গমিটার।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের জন্য মাথাপিছু যে পরিমাণ খোলা জায়গা থাকা উচিত, ঢাকা শহরে তা নেই।’ এই খোলা জায়গা সবার জন্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, রাজধানীবাসী ৩৭৪ জন ব্যক্তির মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ৬০ শতাংশ ব্যক্তি কোনও না কোনও সময় কাছাকাছি কোনও পার্কে গিয়েছেন। কিন্তু জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-পঞ্চমাংশ (৩৯ শতাংশ) মানুষই জানান, তারা কখনোই কোনও পার্কে যাননি।
ওই জরিপ থেকে আরও জানা যায়, নারী ও বয়স্কদের মধ্যে পার্কে যাওয়ার পরিমাণ আরও কম। বিশেষত বাজে পরিবেশের কারণেই তারা পার্কে যান না বলে জানিয়েছেন।
এদিকে ৭৩৯ জন ব্যক্তির মধ্যে পরিচালিত আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ মানুষেই পার্ক ও খেলার মাঠের বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতি চান। তাদের দাবি, পার্ক ও মাঠগুলোতে বসার জায়গা, বেঞ্চ ও বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য ছাউনি তৈরি করা হোক। জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বলেন, বেশিরভাগ পার্কই কোলাহলপূর্ণ এবং এগুলোতে যথাযথ আলোর ব্যবস্থা নেই। এছাড়া এসব পার্কে নেই পানি সরবরাহ, বর্জ্য নিষ্কাশন ও পয়োঃনিষ্কাশন এবং হাঁটার সুযোগ।
(ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত)

/এসএসএ/এএইচ/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সূর্যকুমারের ছক্কায় সেঞ্চুরি ও মুম্বাইয়ের জয়
সূর্যকুমারের ছক্কায় সেঞ্চুরি ও মুম্বাইয়ের জয়
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
চাইলেই কি বনের আগুন প্রতিরোধ সম্ভব
চাইলেই কি বনের আগুন প্রতিরোধ সম্ভব
একদিন আগে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাচন স্থগিত
একদিন আগে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাচন স্থগিত
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস