X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

থেমে গেছে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের উদ্যোগ

শফিকুল ইসলাম
০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:৩১আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:০৩

মানবতাবিরোধী অপরাধী
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বিদ্যমান আইনে এ কাজটি করা না গেলে প্রয়োজনে আইন পরিবর্তনের কথাও বলা হয়েছিল। দেশে বিদ্যমান আইনে কাজটি কতটুকু করা সম্ভব সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরুও করেছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু পরবর্তীতে এ উদ্যোগের আর কোনও অগ্রগতি নেই। বরং এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইন, অর্থ এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল থেকে এটি দেখভাল করা হচ্ছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সংশ্লিষ্টতা আছে এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। চিঠির সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের ৫৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকাও দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, কর্মকাণ্ড ও সংশ্লিষ্টদের সম্পর্কে খোঁজ নিতে শুরু করে। এর অংশ হিসেবে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, দফতরসহ সব গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের কাছ থেকেও সহায়তা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ওই কমিটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে অর্থ মন্ত্রণালয় এখন কিছুই করছে না। এ বিষয়ে কবে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে সে বিষয়েও আমি জানি না। আমি এ বিভাগে যোগদানের পর কোনও নির্দেশনা পাইনি।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার যখন যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা বাস্তবায়ন করে। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন করা হবে। এসব বিষয়ে কাজ চলছে।’

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি।

নতুন আইন করার বিষয়ে জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মোহম্মদ জহিরুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি স্পর্শকাতর বিষয়। তাই খোলাখুলিভাবে কিছু বলা যাবে না।’

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। ওই চিঠিতে জামায়াত ও শিবির পরিচালিত ব্যাংক-বীমাসহ সেবামূলক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জামায়াত-শিবির পরিচালিত ৫৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এ কাজে চারটি গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। যাদের মধ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থার ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।

সরকার মনে করে, ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে জামায়াত ও শিবিরকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। এমনকি এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের একটি বড় অংশ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার কাজে সক্রিয় রয়েছে।

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে জামায়াতের মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশেষ নজরদারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই নির্দেশে বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও আর্থিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণকারী অন্য সরকারি সংস্থাগুলোকেও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় জামায়াতে ইসলামীর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়ন সরকারের উদ্বেগের কারণ। তাই সংগঠনটির মালিকানাধীন ব্যাংক এবং লাভজনক সব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন ও আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর নজরদারি নিশ্চিত করা আবশ্যক।

এরপর ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর আবারও জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একাত্তরে শহীদদের পরিবারগুলো সর্বস্বান্ত হয়েছে, অসহায়ভাবে জীবনযাপন করেছে। ঘাতকদের পৃষ্ঠপোষকতাকারীরা শহীদ পরিবারকে অপমান করেছে। তাই এখন সরকারের উচিত শহীদ পরিবারগুলোকে খুঁজে বের করে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া।’

 

/এসআই/এসএনএইচ/এসটি/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা, থ্যাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ
মিয়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা, থ্যাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
ভুয়া অবিবাহিত সনদের মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে ধরা পড়লেন এক ব্যক্তি
ভুয়া অবিবাহিত সনদের মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে ধরা পড়লেন এক ব্যক্তি
ঢাকায় ‘র‌্যাম্পে হাঁটলো’ উট, ঘোড়া, কুকুরসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণী
ঢাকায় ‘র‌্যাম্পে হাঁটলো’ উট, ঘোড়া, কুকুরসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণী
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ