নিরাপদ পানি প্রাপ্তিই এখন বিশ্বব্যাপী বড় চ্যালেঞ্জ। নিরাপদ পানি প্রাপ্তি, সংরক্ষণ ও তত্ত্বাবধায়নের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই নিরাপদ পানি প্রাপ্তির লক্ষ্যে একটি পরিকল্পনা ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ খুবই জরুরি। শনিবার (৩ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি গোলটেবিল মিলনায়তনে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এর শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশে পানি সম্পদ তত্ত্বাবধায়ন: পানি দূষণরোধে কার্যকর কৌশল’।
সভায় মূল বক্তা ছিলেন অ্যালায়েন্স ফর ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ-অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান মাইকেল স্পেন্সার। তিনি বলেন, ‘সুপেয় পানি নিশ্চিত করার জন্য জলাধারগুলোকে দূষণমুক্ত রাখা জরুরি। এজন্য সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। জলাধারগুলো দূষণের জন্য যারা দায়ী, তাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনা গেলে দূষণরোধ অনেকটাই সম্ভব।’
মাইকেল স্পেন্সারের বিশ্বাস, একটি ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমেই নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা যাবে। তার ভাষ্য, ‘নদী-জলাধারগুলো দূষণকারী ব্যবসায়ীদের বৈশ্বিকভাবে নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন। দূষণ না করলে ব্যবসায়িক লাভের বিষয় সম্পর্কে তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য কয়েকটি বিষয়কে লক্ষ্য রেখে বিশ্বব্যাপী আমরা জোট গঠনের চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্দেশ্য— পানি ব্যবহারকারীরা তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করে প্রকৃতি-পরিবেশ ও পানিসম্পদ রক্ষায় উদ্যোগী হবে।’
সূচনা বক্তব্য রাখেন ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও বাপার যুগ্ম-সম্পাদক শরীফ জামিল। তার কথায়, ‘পানি দূষণের কারণ ব্যাপক। তাই পানির উৎস হিসেবে নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষা করতে হবে। আমরা লক্ষ্য করছি, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পাশাপাশি চলনবিল, বড়াল নদীসহ সারাদেশের অন্যান্য জলাধার ব্যাপক দখল ও দূষণের শিকার। এ কারণে ভবিষ্যতে নিরাপদ পানি প্রাপ্তি আমাদের জন্য বড় ধরনের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বাপার যুগ্ম-সম্পাদকের অভিযোগ— ‘রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট আইন, আদালতের রায় ও সরকারের নির্দেশনার পরও শিল্প-কারখানায় ‘বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট’ বসানো হচ্ছে না। ফলে নদী-জলাধার দূষিত হয়েই চলছে। দূষণের জন্য মূলত শিল্প-কারখানার দূষণ দায়ী। অনেকে ব্যবসায়িক স্বার্থে নদী-জলাধারগুলো দূষিত করে যাচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাপার সহ-সভাপতি ও পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘নদী-নালা, খাল-বিল ও জলাশয় দূষণ, ভরাট ও নদীতীরবর্তী এলাকা দখল হওয়ায় পানির উৎসস্থল থেকে নিরাপদ পানি প্রাপ্তির সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। পানির চাহিদা মেটাতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। আশঙ্কার বিষয় হলো, প্রতি বছর ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে নেমে যাচ্ছে।’
জলাধারগুলো রক্ষায় সবাইকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান এই পানি বিশেষজ্ঞ। তিনি মনে করেন— পানি সংকট মোকাবিলা ও পানির যোগান নিশ্চিত করতে সব ধরনের পানির উৎস নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয়ের দূষণ প্রতিরোধ ও ভরাট বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
নদী ব্যবস্থাপনায় একটি কার্যকর পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের প্রস্তাব রাখেন বাংলাদেশ ওয়াটার পার্টনারশিপের সাধারণ সম্পাদক ও গ্রিন ওয়াচের সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে নদী ব্যবস্থাপনায় রয়েছে বড় ধরনের সমস্যা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে নদীদূষণ বাড়ছে। শিল্প-কারখানার অনবরত দূষণে নদী-জলাধারগুলো ব্যাপকভাবে দূষিত। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সুপেয় পানি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে।’
যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশ ও অ্যালায়েন্স ফর ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিন।
নির্ধারিত বক্তা হিসেবে সভায় অংশ নেন বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য মো. আলাউদ্দিন, নারী অধিকার কর্মী ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য শারমীন মুরশিদ, ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপের ভারতীয় সমন্বয়ক আশীষ ভরদ্বাজ, যুক্তরাষ্ট্রের লেখক লেন বুকনান, বাংলাদেশ ওয়াটার এইডের প্রোগ্রাম অফিসার রঞ্জন কুমার ঘোষ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, নদীকর্মী মোস্তাক আহমেদ।
