X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

অসহিষ্ণুতা বাড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে

উদিসা ইসলাম
১৫ এপ্রিল ২০১৮, ০৯:৫১আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০১৮, ১৪:৩৫

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যত দিন যাচ্ছে, ততই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা। বিশেষত ফেসবুকের বিপুল ব্যবহারকারীরা কাউকে ব্যক্তিগতভাগে অপছন্দ করলে তাকে হেনস্তা করতে বিভিন্ন ধরনের বিদ্রূপমূলক বক্তব্য থেকে শুরু করে ফটোশপ ছবি, ক্যারিকেচার ও হেটস্পিচের (কারও বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য) ব্যবহার করছেন। আইনজ্ঞরা বলছেন, হেটস্পিচের কোনও সংজ্ঞা এখনও আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়নি। এছাড়া আইনেও এর সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। এ ধরনের অসহিষ্ণুতা মানুষে-মানুষে বিভেদ বাড়িয়ে তুলছে। তাদের মতে, এই প্রবণতা থেকে মুক্তি পেতে ভিন্নমতকে সম্মান দেওয়ার চর্চা ফিরিয়ে আনতে হবে।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, অসহিষ্ণুতার বিষয়টি যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বলে কিছু ছিল না তখনও ঘটতো। তবে এখন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগে হাতের মুঠোয় বলে বিষয়টির পরিমাণ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। 

সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে এই অসহিষ্ণুতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ সময় সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমানোর যৌক্তিকতা নিয়ে একপক্ষ অন্যপক্ষকে আঘাত করেছে অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি। এর আগে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ও শিক্ষক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলর ঘটনার পর ফেসবুকজুড়ে তার উদ্দেশে অশ্লীল মন্তব্য করতে দেখা গেছে।

এদিকে, ১৩ এপ্রিল সকাল থেকেই ফেসবুকে সুকৌশলে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী মেসেঞ্জারে একটি দীর্ঘ বার্তা পাঠিয়ে বলছে—কোনও মুসলমান মঙ্গল শোভাযাত্রা ও পহেলা বৈশাখ পালন করতে পারে না। বিভিন্ন পেজেও তারা বাঙালি সংস্কৃতিকে আঘাত করে কথা বলছে। এতেও তৈরি হচ্ছে বিদ্বেষ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেনের সন্তান তৌহিদ রেজা নূর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানোই এখন স্বভাবে পরিণত হয়েছে। কোনও কিছুর খবর জানা মাত্রই মানুষ সে বিষয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে মরিয়া হয়ে উঠছে মানুষ।’ তার মতে, ‘বর্তমানে মানুষের মধ্যে সম্মানবোধ লুপ্ত হচ্ছে। লুপ্ত হচ্ছে বিচারবোধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা অভ্যস্ত হয়ে উঠছে খিস্তিখেউড়ে। সবই যখন হাতের মুঠোয়, তখন নিমিষেই ভেতরের আবর্জনা উগরে দিচ্ছে যে কারও পোস্টে। এসব মূলত অস্থিরতার অযাচিত ফসল।’

জানতে চাইলে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ভাস্কর আবেদিন বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসহিষ্ণুতা ছড়ানোর ইমপ্যাক্ট হয়তো বেশি। কিন্তু এই বিষয়টা যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বলে কিছু ছিল না তখনও ঘটতো। স্বৈরাচার এরশাদ একবার মুসলমানদের দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিলেন বাবরি মসজিদ ভাঙার ভুয়া খবর ছড়িয়ে। প্রতি জুমা বারে মসজিদে মসজিদে হেইটস্পিচ ছড়ানোর অভ্যাসটাও লক্ষ করছি নব্বইয়ের দশক থেকে। এই অভ্যাসের ধরনটাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো আসার পর থেকে তার ওপর ভর করেই চলছে। এটা যে শুধু আমাদের দেশেই চলছে এমন নয়, সাত-আট বছর আগে ইংল্যান্ডে ব্ল্যাকবেরি ব্যবহার করে দাঙ্গা লাগিয়ে রীতিমতো দোকানপাট লুটতরাজ শুরু হয়েছিল। এক অলিম্পিয়ান কিশোরী ধরা পড়েছিল লুটের সময়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিরোধ-প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধের রাজনীতির কারণে এই অসহিষ্ণুতা মানুষের মধ্যে এমনিতেই আছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো কেবল তার বিস্তৃতিকে ত্বরান্বিত করেছে।’

হেটস্পিচের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায়ন হয়নি উল্লেখ করে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘সাধারণত কোনও একটি মানসিকতার বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য উচ্চারিত হলে সেটিকে হেটস্পিচ বলা হয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন ঘৃণা উদ্রেককারী উত্তর-পাল্টা উত্তরকেও হেটস্পিচ হিসেবে ধরা যেতে পারে। কোনটা হেটস্পিচ, কোনটা হেটস্পিচ নয়, এ সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট কোনও ধারণা নেই৷’ তিনি আরও বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে আপনি অনলাইনে একটি বিষবাক্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন, তারা এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন মানসিকভাবে। আমরা সেটা ভেবেও দেখি না। এই সন্ত্রাস বন্ধ করতে কঠোর আইনি ব্যব্স্থা প্রয়োজন।’

কোনও ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্পৃক্ত পক্ষগুলো কেন হেটস্পিচে ঢুকে যাচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। হেটস্পিচ সমাজে আছে, যে কারণে এটা এখানে এসেছে। গত দুই দশকে প্রত্যেক জিনিসকে রাজনীতি দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে, প্রতিটি মানুষকে রাজনীতি দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনযাত্রা নির্ভর করছে আমি কাকে চিনি, কে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আছি, এই বিষয়ের ওপর। মানুষের মধ্যে দলীয় রাজনীতিচর্চা বেশি হয়ে গেছে। মানুষ জানে, যদি বিপরীত মতকে জায়গা দেই, তাহলে আমার স্পেস সংকুচিত যাচ্ছে। তাই মানুষ মরিয়া হয়ে উঠেছে।’ এ পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সচেতন হওয়া, অন্যকে স্পেস দেওয়া, ভিন্নমতকে সম্মান দেওয়ার চর্চা করতে হবে। সেটা করলে বিভেদের জায়গা কমে আসবে।’ বিরোধী মতকে দমন করার চেষ্টা না করলে হিংসা ও ঘৃণার জায়গাগুলো কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন।

 

/এমএনএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট কাল
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট কাল
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ইইউ দেশগুলোকে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী অস্ত্র পাঠাতে হবে: বোরেল
ইইউ দেশগুলোকে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী অস্ত্র পাঠাতে হবে: বোরেল
কানের সমান্তরাল তিন বিভাগে কোন কোন দেশের ছবি
কান উৎসব ২০২৪কানের সমান্তরাল তিন বিভাগে কোন কোন দেশের ছবি
সর্বাধিক পঠিত
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট