X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

দমন-পীড়নের নজির সামরিক শাসনামলেও কমই দেখা গেছে, সংবাদ সম্মেলনে বক্তরা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:৫২আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:০৫

বিশিষ্ট নাগরিকদের সংবাদ সম্মেলন বাংলাদেশে বর্তমানে ভয়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, সরকারের এমন দমন-পীড়নের নজির সামরিক শাসনামলকেও ছাড়িয়ে গেছে।

তারা বলেন, নির্বাচনি প্রচার শুরুর পর প্রায় প্রতিদিনই ক্ষমতাসীন দল ও জোটের বাইরে বিভিন্ন দল এবং জোটের প্রার্থীরা হামলা, মামলা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নাগরিকের মতপ্রকশের অধিকারহরণ করা হয়েছে। ভিন্ন মতের কণ্ঠ রোধ, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, শন্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন, জনগণের ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় আড়িপাতা এবং প্রোপাগান্ডার ঢংয়ে তা মিডিয়াতে ছড়িয়ে দেওয়া, মত প্রকাশ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করতে ডিজিটল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন আইনি ও বেআইনি পথ গ্রহণ করা হয়েছে।

শনিবার (২২ডিসেম্বর)ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘নির্বাচনে জনগণের ঢল নামুক, ভোটকেন্দ্রে হোক ভোটারের’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীত আরা নাসরীন। ২৯ জন নাগরিকের পক্ষ থেকে তিনি এ লিখিত বক্তব্য পড়েন।

গীত আরা নাসরীন বলেন, ‘একটানা এক দলের শাসনের অধীনে থাকতে থাকতে, দমনপীড়ন ও ভয়ের রাজত্বে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে গিয়ে মানুষের আশাবাদের জায়গা ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়েছে। সরকার মুখে যাই বলুক না কেন, জনগণের একটা বড় অংশের মধ্যে এই অবিশ্বাস খুঁটি গেড়ে বসেছে যে, নির্বাচন সরকারের জানানো ছক অনুযায়ীই হবে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনি কর্মকর্তাদের তালিকা আছে পুলিশের কাছে। তাদের কাছ থেকে ফোন পেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আতঙ্কিত। প্রধানমন্ত্রী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ডেকে কথা বলেছেন। টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি দল বা জোটের বাইরের বিভিন্ন প্রার্থীর প্রচার কাজে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের বাধা, হামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনি প্রচারের শুরুতেই প্রাণহানির খবরে আমরা শঙ্কিত। এসব দেখে মানুষের মনে পোক্ত হয় যে, নির্বাচন কমিশন সংবিধানের কাছে নয়, সরকারের কাছেই অধিকতর দায়বদ্ধ। কমিশনাররা স্বাধীনভাবে কাজ না করে অনেকক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবাহীর মতো আচরণ করছে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কথাটা একটা ফাঁকাবুলিতে পরিণত হয়েছে।’

দেশের এমন পরিস্থিতিতে ৫টি দাবি করেছেন তারা। এগুলো হচ্ছে- নির্বাচন কমিশনকে অবশিষ্ট সময়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিককে স্বাধীনভাবে ভূমিকা পালন করতে দিতে হবে। মামলা, হামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতা বন্ধ করে হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। সব ধরনের যোগাযোগে বাধা সৃষ্টির বদলে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত  করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শঙ্কা প্রকাশ করে গীতি আরা নাসরিক বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর যেমন সরকার ও সব দলের পরীক্ষা, তেমনি জনগণের জন্যও পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে বাংলাদেশ এক মহাবিপর্যয়ে পড়বে।’

অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে স্বৈরাচার ও যুদ্ধাপরাধী পুনর্বাসিত হয়েছে। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুদকসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ধুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে গেছে। বাংলাদেশে ভয়ের শাসন কায়েম হয়েছে। বিগত সময়ে দলীয় সরকারের অধীনে যেসব নির্বাচন হয়েছে সেগুলো নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এটা এই সরকারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব এই ধারণা থেকে জনগণ দূরে সরে গেছে। শুধু সরকার দলীয় প্রার্থী ছাড়া নির্বাচনে ন্যূনতম প্রচারও করা যাচ্ছে না।’

অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক বলেন, ‘সেনাবাহীনীকে যদি সীমিত আকারে রাখা হয়, তাদের সুযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে আমদের যে আশঙ্কা রয়েছে সেটা বাড়বে। সেনাবাহিনী মাঠে নামলে জনগণের আস্থা বাড়বে। আমাদের বিশ্বাস তারা একটা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। সারাদেশে তারা অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।’

নির্বাচনি প্রচারের বিষয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘যারা হামলার শিকার হচ্ছেন তারা পুলিশের কাছে সুরাক্ষা চাচ্ছেন। সরকার দলের প্রার্থীরা মাঠে নামলে শতশত পুলিশ সেখানে নামানো হচ্ছে। সরকারি গাড়িসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা তারা ভোগ করছে। এতে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে। এসব বিষয় দেখার দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। তাদের কী মুখ নেই, কান নেই, চোখ নেই?’

অধ্যাপক আহমেদ কামাল বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। আর নির্বাচনে সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালন করতেই হবে। সেজন্য সরকারকে জায়গা তৈরি করে দিতে হবে। আর গুজব তখনেই হবে যখন যখন সেখানে সত্য ঘটনা আসবে না।’

 

 

/এসএস/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
সর্বাধিক পঠিত
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ