X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধুর মুখে বাংলা ভাষণ শুনতে চাইলেন ভারতের জনগণ (ভিডিও)

তানজিমুল নয়ন
১০ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:২৪আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:১২

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঠিক আগে দিল্লি বিমানবন্দরে স্বাধীন বাংলাদেশের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। দিল্লি বিমানবন্দরে এ উপলক্ষে আয়োজিত অভ্যর্থনা সভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের ২৫ দিন পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দিল্লি হয়ে বিকাল চারটায় দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশে ফেরার আগে দিল্লি বিমানবন্দরে রাখা সংক্ষিপ্ত ভাষণে বাংলাদেশের জনগণ ও তার জন্য অকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও ভারতের জনগণের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। তবে সেই ভাষণ শুরুর সময়ে ঘটে মজার ঘটনা। বিদেশের মাটিতে বক্তৃতার কারণে রীতি অনুযায়ী ইংরেজিতে ভাষণ শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু, স্বাধীন বাংলার পাশে থাকা ভারতীয় জনগণ শুনতে চাইলেন স্বাধীন বাংলার রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখে বাংলায় উচ্চারিত ভাষণ। ভারতীয় জনতার এই দাবি শুনে স্মিত হেসে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাতেই ভাষণ দেওয়ার অনুরোধ জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও। 

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সরাসরি লন্ডনে চলে যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখান থেকে ফের ৯ জানুয়ারি রাতে রওনা হয়ে ১০ জানুয়ারি দুপুরে দিল্লিতে পৌঁছান তিনি। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাকে অভ্যর্থনা জানান। শেখ মুজিব মুক্তি পেয়ে আসার খবর শুনে দিল্লি বিমানবন্দরের পাশে হাজার হাজার ভারতীয় নারী-পুরুষ  মুজিবকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত অভ্যর্থনা সভায় বক্তব্য রাখেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দিল্লি বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বক্তৃতা করেন ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের (ডিএফপি) আর্কাইভে সংরক্ষিত ভারতীয় নথিপত্রের সঙ্গে এই ভাষণটির ভিডিওটিও সংরক্ষিত আছে। সেই ভিডিওতে দেখা গেছে, ইন্দিরা গান্ধী হিন্দিতে দেওয়া তার ভাষণে বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তাঁর শরীরকে জেলখানায় বন্দি করে রাখা হলেও তাঁর আত্মাকে কেউ বন্দি করে রাখতে পারেনি। তাঁর প্রেরণায় বাংলাদেশের মানুষ সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। তিনি প্রেরণা দিতে এখন ভারতে আমাদের কাছে এসেছেন। এই যুদ্ধের সময় আমরা ভারতের পক্ষ থেকে তাদের জন্য তিনটি কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এক. যে শরণার্থীরা ভারতে আছে তারা সময় হলে ফিরে যাবে। দুই. আমরা মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করবো ও বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াবো তিন. শেখ সাহেবকে (শেখ মুজিবুর রহমান) আমরা দ্রুত জেল থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করবো। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রেখেছি।’   

এরপর স্বাধীন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ভাষণ শুরু করে ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান প্রেজেন্ট...’ বলতে না বলতেই উপস্থিত হাজার হাজার ভারতীয় দর্শক একসঙ্গে সমস্বরে চিৎকার করে তাকে বাংলায় ভাষণ দেওয়ার অনুরোধ করতে থাকেন। তাদের দাবির মুখে খানিকটা বিব্রত হয়ে পাশে দাঁড়ানো ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দিকে তাকালে তিনিও স্মিত হেসে বলেন, ‘দে নিড বেঙ্গলি’। তিনিও বঙ্গবন্ধুকে বাংলায় বক্তৃতা করার আহ্বান জানান।

এরপরে বঙ্গবন্ধু তার মেঘস্বর কণ্ঠে বাংলায় বক্তৃতা শুরু করেন। তিনি ‘ভাই ও বোনেরা’ বলতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে ভারতের অভ্যর্থনা সভার জনস্রোত। এই ভাষণে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা দেওয়া এবং আশ্রয় নেওয়া বাঙালিদের পাশে সার্বক্ষণিক থাকার জন্য ভারত ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। একইসঙ্গে তার ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে মিলের বিষয়গুলো এবং আগামীতে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে তার বিশ্বাসের কথাগুলো এই ভাষণে তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু। পরবর্তীতে রচিত বাংলাদেশের সংবিধানেও বঙ্গবন্ধুর এই বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখা যায়।

তার এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘‘আপনাদের প্রধানমন্ত্রী, আপনাদের সরকার, আপনাদের সৈন্যবাহিনী, আপনাদের জনসাধারণ যে সাহায্য ও সহানুভূতি আমার দুখী মানুষকে দেখিয়েছে চিরদিন বাংলার মানুষ তা ভুলতে পারবে না। ব্যক্তিগতভাবে আপনারা জানেন, আমি পশ্চিম পাকিস্তানের অন্ধকার সেলের (কারাকক্ষ) মধ্যে বন্দি ছিলাম কিছুদিন আগেও। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আমার জন্য দুনিয়ার এমন জায়গা নাই যেখানে তিনি চেষ্টা করেন নাই আমাকে রক্ষা করার জন্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার সাড়ে সাত কোটি মানুষ তার কাছে এবং তার সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার জনসাধারণ ভারতবর্ষের জনসাধারণের কাছে কৃতজ্ঞ। আর যেভাবে এক কোটি লোকের খাওয়ার বন্দোবস্ত এবং থাকার বন্দোবস্ত আপনারা করেছেন...আমি জানি ভারতবর্ষের মানুষ খুব দুখী আছে সেখানে, তারাও কষ্ট পাচ্ছে, তাদেরও অভাব অভিযোগ আছে—তা থাকতেও তারা সর্বস্ব দিয়েছে আমার লোকরে সাহায্য করার জন্য, চিরদিন আমরা তা ভুলতে পারবো না।

‘আমরা আশা করি, আপনারা জানেন বাংলাদেশ শেষ হয়ে গেছে, আমি সকল প্রকার সাহায্য সহানুভূতি আশা করি এবং এও আশা করি দুনিয়ার শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক যে মানুষ আছে তারা এগিয়ে আসবে আমার মানুষকে সাহায্য করার জন্য।

‘আমি বিশ্বাস করি সেক্যুলারিজমে, আমি বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে, আমি বিশ্বাস করি সোশ্যালিজমে।

‘আমাকে প্রশ্ন করা হয়, শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আপনার আদর্শে এত মিল কেন? আমি বলি, এটা আদর্শের মিল, এটা নীতির মিল, এটা মনুষ্যত্বের মিল, এটা বিশ্ব শান্তির মিল।...’’

ইতিহাসের অমর এই ভাষণ দুটির অংশ বিশেষ বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগ্রহ করে নিজের ফেসবুক পেজে আপলোড করেছেন রেজওয়ান ইউরেকা। তার অনুমতি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য ভিডিও দুটির লিংক দেওয়া হলো।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণ:

ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ:

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা