X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার দুই বই নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ

এস এম আববাস
০৯ মার্চ ২০১৯, ০৯:৫৯আপডেট : ০৯ মার্চ ২০১৯, ১০:০৪

 

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অধীনে পরিচালিত ‘মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা)‘র দুইটি বই প্রকাশের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেশের ৪৫ লাখ নিরক্ষর ব্যক্তির জীবনভিত্তিক দক্ষতা অর্জন ও স্বাক্ষরতা নিশ্চিতে পরিচালিত ওই প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে  ‘আমাদের চেতনা-১’‘ ও ‘আমাদের চেতনা-২’ নামের দুটি‘ বইয়ের ৫৬ লাখ কপি। জানা গেছে, কাজের দায়িত্ব পাওয়া দুই প্রেস ‘বিনিময়‘ ও ‘বন শোভা’ নিম্নমানের কাগজে ও নির্ধারিত আকারের চেয়ে ছোট সাইজে বইগুলো প্রকাশ করেছে।  যে পরিমাণ বই ছাপার কথা ছিল,  ছাপা হয়েছে তার চেয়ে কম। মুদ্রণ মালিক সমিতি বলছে, বই সরবরাহের আগেই প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে সচেতন করা হয়েছিল। তবে একটি অসাধু চক্রের যোগসাজশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বইয়ের মান যাচাই না করেই মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান থেকে সেগুলো ছাড় করানো হয়েছে। সমিতির অভিযোগ, অর্থ লুটপাট করতেই প্রেস ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ত্রুটি বিচ্যুতিকে আমলে না নিয়ে ওই দুই মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দিতে চেয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এই অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে প্রকল্প পরিচালক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন কিছু বই নষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। এদিকে সংশ্লিষ্ট দুই প্রেস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এ নিয়ে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

‘সবার জন্য শিক্ষা’  অর্জনের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে  ৪৫ লাখ নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর মৌলিক স্বাক্ষরতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের জীবনভিত্তিক  দক্ষতা নিশ্চিতে উদ্যোগী হয় সরকার। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অধীনে‘মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা)‘র মাধ্যমে সারাদেশের ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর স্বাক্ষরতা অর্জনের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়।  বর্তমানে ১৩৬ উপজেলায় চলমান রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এই অগ্রধিকার প্রকল্প। দেশের ১৩৬ উপজেলার ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪৪১ জন নিরক্ষরকে স্বাক্ষরতা দিতে ও তাদের জীবনভিত্তিক দক্ষতা নিশ্চিতে এই প্রকল্পে কাজ করছে ৫০টির বেশি এনজিও। ৩৯ হাজার ৩১১টি শিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে নিরক্ষরদের পাঠদান ও দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা। সম্প্রতি এই শিক্ষণ কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রধান দুটি বই ‘আমাদের চেতনা- ১‘ ও ‘আমাদের চেতনা-২‘ ছাপা হয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ কপি।

বই দুটি ছাপার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিছে ৪২০ কোটি টাকা। ছাপার পর সেগুলো এনজিওগুলোর কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। পৌঁছে দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও। বইয়ের মান নিয়ে কোনও কথা বলেনি এনজিওগুলোও। তবে অভিযোগ স্বীকার করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-১) ড. তরুণ কান্তি শিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। কারা দায়ী তা তদন্ত শেষ করার আগে বলা যাবে না।’

বাংলাদেশ মূদ্রণ শিল্প মালিক সমিতি অভিযোগ করেছে, বইগুলোর মাপ ঠিক না রেখে কাগজের ব্যয় কমানো হয়েছে। সাদা অফসেট কাগজে বই ছাপার কথা থাকলেও ছাপা হয়েছে নিউজ প্রিন্ট কাগজে। নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে সংখ্যায় কম বই ছাপা হয়েছে। একটি অসাধু চক্রের যোগসাজসে ত্রুটি বিচ্যুতি প্রশ্রয় দিয়ে সুবিধা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সরবরাহের আগেই মূদ্রণ শিল্প মালিক সমিতি দায় নেবে না বলে লিখিত পত্রও দিয়েছে মন্ত্রণালয়ে। তবুও বইয়ের মান যাচাই না করেই প্রেসের কাছ থেকে সরবরাহ নেওয়া হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১০-২০১১ সালের একটি স্পেসিফিকেশন করা ছিলো। সেটার কারণেই টেন্ডার করবো করবো করে করা হয় না। শেষ পর্যন্ত হলো, ওরা যে পর্যন্ত দিলো (বই) সেখানে কিছু বই নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ কেউ বলছে বই সব নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা কিছু বই সংগ্রহ করেছি। অনেক বই করতে গেলে কিছু বই তো নষ্ট হয়ই।’‘বইয়ের আকার সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এই সাউজগুলো (আকারে ছোট ছাপা বইয়ের মাপ) আগের স্পেসিফিকেশনে দেওয়া ছিলো। এই টাকায় বর্তমান সাইজের (উপযুক্ত মাপ) বই দেওয়া কস্টলি।’

নিম্নমানের বই ছাপার বিষয়ে ‘বন শোভা’ প্রেসের মালিক সাইফুল কুদ্দুস মুকুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জবাব চাওয়ার পরামর্শ দেন। সাইফুল বাংলা ট্রিবিউনবে বলেন, ‘‘ছাপা ও সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে। আপনারা প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’ এদিকে‘বিনিময়‘প্রেসের মালিক ইশতিয়াক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সেলফোন রিসিভ করে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে আর কথা বলেননি। পরে একাধিকবার ফোন করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

 

/বিএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
জাবি ছাত্রলীগের সেই ৩ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ 
জাবি ছাত্রলীগের সেই ৩ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ 
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়