পদ্মা সেতু যারা চায় না, তারাই ‘শিশুবলি’ ও ‘ছেলেধরা’ গুজবের হোতা বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বুধবার (২৪ জুলাই) সচিবালয়ে নিজের দফতরে সাংবাদিকদের এ মন্তব্য করেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি, গত কয়েক দিন ধরে সমগ্র বাংলাদেশে ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে অনেক নিরীহ মানুষকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এগুলো সবই হত্যাকাণ্ড। যারা এই কাজগুলো করছে, তারা সবাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে। একইসঙ্গে এ ধরনের গুজব যাতে না ছড়াতে পারে, তার জন্য নানাবিধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আপনারা জানেন, ঘটনার সত্যতা হচ্ছে—পদ্মা সেতুতে ‘শিশুবলি দিতে হবে’ বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতেই কিছু ডালপালা ছড়িয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ছেলেধরা বলে অনেকের ওপর হামলা করা হয়েছে, যা অত্যন্ত অনভিপ্রেত, ন্যক্কারজনক ও আইনবহির্ভূত। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। পদ্মা সেতুতে শিশুবলি দিতে হবে বলে তারাই গুজব ছড়িয়েছে, যারা পদ্মা সেতু চায় না। গুজব ছড়ানোর কারণে এরইমধ্যে ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। গুজবকারীদের অনেকের রাজনৈতিক পরিচয় জানা গেছে। এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা গুজব প্রতিরোধে নানাবিধ ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জনগণকে সতর্ক করার জন্য তথ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে তথ্য বিবরণী দেওয়া হয়েছে। রেডিও, টেলিভিশনে এগুলো প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে সবাইকে অনুরোধ জানাবো, এ ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য। এ পর্যন্ত ছেলেধরার যে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে, তার একটি ঘটনাও সত্য প্রমাণিত হয়নি। সুতরাং এ ধরনের কাজ যাতে কেউ না করে, সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
দলীয়ভাবে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক গতকাল (মঙ্গলবার) দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। যারা আতঙ্ক ছড়াতে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দলীয়ভাবেও ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমিও দলের প্রচার সম্পাদক হিসেবে দলের সব নেতাকর্মীর কাছে এ বিষয়ে অনুরোধ জানাবো।’
সরকারিভাবে প্রতিরোধে দেরি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কথাটি সঠিক নয়, প্রথম থেকেই কিন্তু মাইকিং করা হচ্ছিল। যেখানে যেখানে গুজব ছড়িয়েছে, সেখানে মাকিং করা হয়েছে। এবং পদ্মা সেতুতে শিশুবলি দিতে হবে বলে গুজব যখন ছড়ানো হয়, তখন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছিল।’
গণপিটুনির ঘটনায় গ্রেফতার ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি যেহেতু তদন্তাধীন, সেহেতু এ বিষয়ে এখন কথা বলতে চাই না।’
বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সরকারের তৎপরতা নিয়ে সমালোচনার জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গণফোরাম একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য তাদের যে উদ্যোগ ও আয়োজন, সেটি প্রেস ক্লাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বন্যার্ত মানুষের জন্য বিএনপিরও যে উদ্যোগ ও আয়োজন সেটিও প্রেস ক্লাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দল এরই মধ্যে বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকার জন্য টিম গঠন করা হয়েছে। নেতারা বিভিন্ন এলাকায় গেছেন। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই দলের পক্ষ থেকে কাজ শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকেও শুরু থেকেই বিভিন্ন জায়গায় পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।’
জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মানতে চান না রওশন এরশাদ, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটা পর্যবেক্ষণ করছি। কিন্তু এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওয়েজবোর্ডের সভা হবে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই)। মন্ত্রিসভা কমিটিরও সভা হবে। সেই সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। ঘোষণা দেওয়ার বিষয়ে সরকারি কিছু বিধিবিধান আছে। বৃহস্পতিবারের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সেটা আবার মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা কালকেই বিষয়টি চূড়ান্ত করতে পারবো।’