X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সব সময় আমি ভবিষ্যতের জন্য নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে চেয়েছি: ফজলে হাসান আবেদ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৭ আগস্ট ২০১৯, ১৪:৫৯আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০১৯, ১৫:৩২

ফজলে হাসান আবেদ, ছবি: সংগৃহীত

স্যার ফজলে হাসান আবেদ বুধবার (৭ আগস্ট) ব্র্যাকের চেয়ারপারসন পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। ৪৭ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে তিনি ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সৃষ্টির বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন। এমনকি ভবিষ্যতে ব্র্যাককে কোন অবস্থানে দেখার স্বপ্ন দেখেন তিনি, বিদায়ের মুহূর্তে একটি চিঠির মাধ্যমে কর্মীদের সেকথাও জানিয়েছেন। চিঠিটি ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ’র কাছ থেকে বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে।

ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির বিষয়ে ওই চিঠিতে তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে আমি ব্র্যাকে আমার পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়ে অনেক ভেবেছি এবং সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি। ব্র্যাকের জন্য এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার, যাতে আমার অবর্তমানেও ব্র্যাক তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারে। আমি একটি পেশাদার এবং সুশৃঙ্খল পালাবদল নিশ্চিত করতে চাই।’

চিঠির ভাষ্যানুযায়ী, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির বিষয়টি তার মাথায় আসে ২০০১ সালে যখন তিনি ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ করেন। তিনি লিখেছেন, ‘তখন ঠিক করলাম, ব্র্যাকের নেতৃত্ব অন্যদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। আমি  নির্বাহী পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। ব্র্যাকের কাজ পরিচালনা করার জন্য তখন নতুন একজন নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হলো। আমি ব্র্যাকের বোর্ড সদস্য হলাম। সে সময় ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ছিলেন সৈয়দ হুমায়ুন কবীর। তিনি প্রস্তাব করলেন, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতারই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারপারসন হওয়া উচিত। তখন থেকেই আমি ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হলাম।’

তিনি বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৮৩ বছর। আমি মনে করি, চেয়ারপারসন হিসেবে ব্র্যাক এবং ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের বোর্ডের সক্রিয় ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়াবার এটিই সঠিক সময়। তাই আমি ব্র্যাক বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল সুপারভাইজরি বোর্ডের চেয়ারপারসনের পদ থেকে অবসর নিচ্ছি। ব্র্যাকের পরিচালনা পর্ষদ আমাকে ব্র্যাকের চেয়ার ইমেরিটাস নির্বাচিত করেছেন। আমি এখনও নিয়মিত অফিসে আসবো। তবে আগামী কয়েক মাস আমি ব্র্যাকের ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল এবং পরিচালনা কাঠামো নির্ধারণের বিষয়ে মনোযোগ দেবো।’

আগামী দিনের ব্র্যাক

আগামী দিনের ব্র্যাক কেমন হবে বলতে গিয়ে কর্মীদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, ‘‘ব্র্যাক তার যাত্রা শুরু করেছিল ‘বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি’ এই নাম নিয়ে। এখন কেউ আমাকে যখন জিজ্ঞাসা করেন ব্র্যাক মানে কী? আমি তাদেরকে বলি—ব্র্যাক শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নাম নয়, ব্র্যাক একটি স্বপ্ন, একটি প্রচেষ্টা। এটি এমন একটি পৃথিবীর প্রচেষ্টা, যেখানে সব মানুষ তার সম্ভাবনা বিকাশের সমান সুযোগ লাভ করবেন।’’

‘আগামী ১০ বছরে আমরা আমাদের কাজের প্রভাব পৃথিবীর আরও বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৫০ মিলিয়ন মানুষের কাছে ব্র্যাক যেন পৌঁছে যায়, সেটিই আমার প্রত্যাশা। আমি স্বপ্ন দেখি—ব্র্যাক আগামীতে আরও বড় হবে, নতুন উদ্ভাবন চালিয়ে যাবে এবং নতুন দিনের প্রয়োজনে নতুন সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসবে।’ চিঠিতে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।

তুমিই ব্র্যাক!

ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করলেও তিনি বিশ্বাস করেন—ব্র্যাককে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসার পেছনে সব পরিশ্রম করেছেন ব্র্যাকের কর্মীরা। তিনি চিঠিতে লেখেন, ‘আমার একার পক্ষে কখনোই সম্ভব হতো না। জীবনভর যে আস্থা, বন্ধুত্ব, সহযোগিতা, সমর্থন এবং অঙ্গীকার তোমাদের কাছ থেকে আমি পেয়েছি, তার জন্য শুধু ধন্যবাদ দিয়ে তোমাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা আমি বোঝাতে পারবো না। তোমরা তোমাদের সীমাহীন সাহস দিয়ে সবসময় আমার স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে এগিয়ে এসেছো। আনুষ্ঠানিকভাবে ব্র্যাক বোর্ডের চেয়ারপারসন পদ থেকে অবসর নিলেও, আমি তোমাদের পাশেই আছি। আগামী দিনগুলোতে আমি ব্র্যাকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বিশ্বব্যাপী আমাদের অবস্থান কীভাবে আরও শক্তিশালী করা যায়, তা নিয়ে কাজ করে যেতে চাই।’

সরকার, সমমনা পৃষ্ঠপোষক, দাতা এবং সমধর্মী প্রতিষ্ঠানকে পাশে পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘২০০২ সালে আমরা আফগানিস্তানে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কর্মসূচি শুরু করি। এরপর থেকে এশিয়া ও আফ্রিকার ১০টি দেশে আমাদের কার্যক্রমের বিস্তার ঘটিয়েছি। ব্র্যাক এমন একটি অনন্য সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যার আওতায় রয়েছে—সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ, মাইক্রোফাইন্যান্স, উচ্চশিক্ষা, বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন কর্মসূচি। এসব কিছু পরিচালিত হচ্ছে একটি অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে।’

শোনালেন ব্যক্তি জীবনের গল্পও
‘আমার গল্প’ নামে অংশে চিঠিতে তিনি তার জীবনের ‍শুরুর সময়ের কথা সহকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। তিনি শিক্ষাজীবনের কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন, ‘১৮ বছর বয়সে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে আমি লন্ডনে চলে যাই। সেটি ছিল ১৯৫৪ সাল। সেই থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত টানা ১৪ বছর আমি লন্ডনেই ছিলাম। সেখানে প্রথমে আমি চার্টার্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনটেন্ট হিসেবে লেখাপড়া শেষ করলাম। তারপর বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে অ্যাকাউনটেন্ট হিসেবে চাকরি করলাম। এক সময় যোগ দিলাম শেল অয়েল কোম্পানির অ্যাকাউন্টস সেকশনে।’ এরপর শেল-এর হয়েই তিনি ফিরে আসেন দেশে—চট্টগ্রামে। ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ অকপটে বলেন, ‘তরুণ বয়সে এনজিও গড়ে তুলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে কাজ করবো, এরকম কোনও ভাবনা আমার একেবারেই ছিল না। যথেষ্ট সচ্ছল পরিবেশে আমি বড় হয়েছি। একেবারেই ভিন্ন ধরনের বিলাসী জীবন ছিল আমার। ব্র্যাকের শুরুটা আমার জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়ার গল্প।’

আরও পড়ুন:
ব্র্যাক থেকে অবসর নিলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ

/ইউআই/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
চিকিৎসক ছাড়াই রক্ত ট্রান্সফিউশনের সময় হাজির ম্যাজিস্ট্রেট
চিকিৎসক ছাড়াই রক্ত ট্রান্সফিউশনের সময় হাজির ম্যাজিস্ট্রেট
অশ্রু ঝরিয়ে বৃষ্টির প্রার্থনা
অশ্রু ঝরিয়ে বৃষ্টির প্রার্থনা
নাইজেরিয়ায় বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কারাগার, পালালো শতাধিক বন্দি
নাইজেরিয়ায় বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কারাগার, পালালো শতাধিক বন্দি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না