X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
২২ আগস্ট ২০১৯, ০২:১২আপডেট : ২২ আগস্ট ২০১৯, ০২:১৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি-বাসস) ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার জন্য খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ তৎকালীন জোট সরকারকে ফের অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই জঘন্য ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ ধরনের হামলা কোনোদিনও ঘটা সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘এটা একটি প্রমাণিত সত্য যার জন্য মামলা করে এতদিন পরে আমরা একটা রায়ও পেয়েছি যা এখন উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সে যাবে এবং আমরা আশা করি, এর বিচার হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (২১ আগস্ট) বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় হতাহতদের স্মরণে আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয় নাই। কিন্তু তার তো প্রচ্ছন্ন সহযোগিতা রয়েছে। কারণ তিনি তো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তার যে সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব রয়েছে সেটা তো অস্বীকার করা যায় না। আর তিনি তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন এবং লুৎফুজ্জামান বাবর তো স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, উল্টা তারা দোষারোপ শুরু করলো এটা আওয়ামী লীগ নিজে নিজেই করেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন- আওয়ামী লীগ কেন এটা করবে? আমরা কি সুইসাইড করতে এসেছিলাম সেখানে?
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দিন পুলিশের তৎপরতায় বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে কোথাও মিটিং করতে চাইলে আওয়ামী লীগকে মিটিং করতে দেওয়া হতো না। হাজার হাজার পুলিশ দিয়ে মিটিংয়ের জায়গা ঘিরে রাখা হতো। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সেদিন পুলিশের কোনও তৎপরতাই ছিল না। সেদিন পুলিশের কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থাই ছিল না। পুলিশ ছিল নীরব। এমনকি আওয়ামী লীগের নিজস্ব ভলান্টিয়ারদের পর্যন্ত বিএনপি সরকার আশপাশের ভবনের ছাদে উঠে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে দেয় নাই। নিজস্ব কোনও নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করতেও সেদিন দেয়নি। তিনি প্রশ্ন তোলেন- কেন দেয়নি? প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাবতে অবাক লাগে যে এতবড় একট ঘটনা ঘটার পরেও সেখানে কোনও পুলিশি তৎপরতা বা আহতদের উদ্ধারের কোনও তৎপরতা ছিল না। উপরন্তু যেসব নেতাকর্মী আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাচ্ছিলো পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং উপর্যুপরি টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।’ মামলার আলামত সংরক্ষণ না করে উল্টো সিটি করপোরেশন থেকে পানির ট্রাক এনে আলামত ধুয়ে নষ্ট করে ফেলা হয় বলেও সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বিচারিক আদালতে রায়ের পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত দুটি মামলা হাইকোর্টে শুনানির পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে এখন মামলার বৃত্তান্ত (পেপার বুক) তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মামলায় রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের ফাঁসি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সেই সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আওয়ালী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং ৫শ’ নেতাকর্মী আহত হন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টার লেগে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার শ্রবণ ইন্দ্রিয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীরবিক্রম), সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এবং আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসনাত এবং ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাদেক খান বক্তৃতা করেন। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভা পরিচালনা করেন। সভার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং ১৫ আগস্টের সকল শহীদ এবং ২১ আগস্টের নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মানবঢাল তৈরি করে তাকে রক্ষার কথা উল্লেখ করে দুঃসহ এ ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহৃত ‘আরজেস গ্রেনেড’ দিয়ে জনসভায় হামলা হলো। গ্রেনেডের স্প্লিন্টার এসে হানিফ (মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) ভাইয়ের গায়ে ঢুকছে আর সেখান থেকে রক্ত বেয়ে আমার গায়ে পড়ছে। তিনটা গ্রেনেড মারার পর একটু বিরতি। তারপর আবার গ্রেনেড হামলা, একটার পর একটা গ্রেনেড মারতে শুরু করলো। এই ধরনের একটা পরিস্থিতি দিনে-দুপুরে কীভাবে ঘটতে পারে?”
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ঘটনার পর তাদের ধারণা ছিল আমি মারাই গেছি। কিন্তু যখন নেমে গাড়িতে উঠতে যাবো ঠিক তখনই আবার হামলা করা হলো। সেখানে মাহবুব (আওয়ামী লীগ সভাপতির নিরাপত্তারক্ষী) ছিল, তার গায়ে গুলিটা লাগলো। গাড়িতেও গুলি লেগেছিল।’ তিনি বলেন, ‘গ্রেনেড ট্রাকের ভেতরে পড়তে পারতো কিন্তু সেটা ট্রাকের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে ভেতরে না পড়ে বাইরে পড়ে যায়। গ্রেনেডটা যদি ট্রাকের ভেতরে পড়ে তবে সবাই কিন্তু আমরা সেখানে শেষ হয়ে যাই।’
গ্রেনেড হামলা চালানোর জন্য কারাগার থেকেও অপরাধী আনা হয়েছিল অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জেলখানায় একটা গ্রেনেড পাওয়া গেছে। যাদের দিয়ে আক্রমণ করিয়েছিল সেই ক্রিমিনালদের কিছু তারা জেলখানা থেকেও সংগ্রহ করেছিল। তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসে আবার তাদের ফেরত নিয়ে যায়। কত গ্রেনেড ছিল তাদের কাছে?’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আলামত ধ্বংসের অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এত বড় একটা ঘটনার পর সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে আলামত সংগ্রহ করার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। সেখানে যে অবিস্ফোরিত গ্রেনেড পাওয়া যায় সেটা রাখতে চাওয়ায় সেই অফিসারের চাকরি চলে যায়। এই ঘটনার কোনও আলামতই যেন না থাকে সেই চেষ্টাটাই তারা করেছে।’
বহুল আলোচিত ‘জজ মিয়া নাটকের’ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের চাপে একজন বিচারককে দিয়ে একটা তদন্ত কমিটি করা হয়। সেই তদন্ত কমিটির যে রিপোর্ট সেটা তো তাদের ফরমায়েশি রিপোর্ট।’ তিনি বলেন, ‘সেখানে একটা সাধারণ মানুষ ধরে নিয়ে আসে, তার নাম জজ মিয়া, তাকে আসামি করা হয়। জজ মিয়ার নাটক সাজানো হয়। কীভাবে জজ মিয়াকে নিয়ে আসে। সাধারণ গ্রামের মানুষ সে এত গ্রেনেড কোথা থেকে কিনবে?’
খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ঘটনা, কোটালিপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে রাখা, প্রতিটি আক্রমণের আগে খালেদা বলতো আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এই ঘটনার আগে বলতো শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, জীবনে বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না। ওরা তো আমাকে মেরেই ফেলবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহর মাইর, দুনিয়ার বাইর, বলে একটা কথা আছে। যে অভিশাপ তিনি আমার জন্য দিয়েছিলেন, সেটা এখন তার (খালেদা জিয়া) কপালে জুটে গেছে।’
‘স্বাধীন বাংলাদেশ যাতে বিশ্বে মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে সেজন্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হলো। আমি ও আমার ছোট বোন রেহানা, আমাদেরকেও হত্যা করা হতো। আমাদের বাসায় গুলি করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা দুই বোন জার্মানিতে গিয়েছিলাম। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে এতিম হয়ে যাই। সব হারিয়ে আমরা আর দেশে আসতে পারিনি। পাসপোর্টটাও জিয়াউর রহমান সরকার রিনিউ করতে দেয়নি।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড এবং ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তুক ঘটনার জন্য জিয়াউর রহমানকে অভিযুক্ত করে বলেন, ‘জিয়া প্রত্যক্ষ অপরাধী। জিয়াউর রহমান ছিলেন মোস্তাকের বিশ্বস্ত সহযোগী। তিনি ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে ১৫ আগস্ট হত্যার বিচারের রাস্তা বন্ধ করেছিলেন। অপরাধীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন।’
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মৃত্যু আসবে, সেটা অবধারিত জানি, কিন্তু সেই মৃত্যু ভয়ে আমি বসে থাকবো না। জাতির পিতা যেভাবে ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন, সেভাবেই দেশের সেবা করে যাবো। জাতির পিতার আদর্শে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, সেটাই আমার চাওয়া।’ সূত্র- বাসস

 

 

/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সফল হয়নি, এখন আবোল-তাবোল বলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সফল হয়নি, এখন আবোল-তাবোল বলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
মেঘলা আকাশ থেকে ঝরতে পারে বৃষ্টি, বাড়বে গরম
মেঘলা আকাশ থেকে ঝরতে পারে বৃষ্টি, বাড়বে গরম
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়