X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘সাংবাদিকতায় সততা-দায়িত্বশীলতার আলো ছড়িয়েছেন গোলাম সারওয়ার’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
৩০ আগস্ট ২০১৯, ২৩:৪২আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০১৯, ২৩:৫৯

গোলাম সারওয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় এক মিনিট পালন করছেন বিশিষ্টজনরা ‘বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় সততা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার আলো ছড়িয়ে গেছেন গোলাম সারওয়ার। সেই আলোর রেখায় পথ চললে প্রতিকূলতা অতিক্রম করে পেশাগত উৎকর্ষ অর্জনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হবে এ দেশের সাংবাদিকতা। সমকালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় এ কথা বলেছেন বিশিষ্টজনরা।  শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় টাইমস মিডিয়া ভবনের প্রধান মিলনায়তনে এ স্মরণসভার আয়োজন করে 'গোলাম সারওয়ার নাগরিক স্মরণ পরিষদ'।  ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট  গোলাম সারওয়ার প্রয়াত হন। এ বছর ওই তারিখে ঈদের ছুটি থাকায় স্মরণসভার আয়োজন করা হয় এদিন।

ভাষা সৈনিক, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ স্মরণসভার আলোচনায় অংশ নেন দেশের রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, আইনজ্ঞ, সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনরা। তারা প্রয়াত এই গুণী সাংবাদিককে স্মরণ করে বক্তব্য রাখেন। 

সভাপতির বক্তব্য দিচ্ছেন জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গোলাম সারওয়ারের মতো একজন ছাত্র পেয়ে আমি শিক্ষক হিসেবে গর্বিত। ১৯৬৩ সালে বাংলা বিভাগ “হাজার বছরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য” উৎসব পালন করে। তখন যে কজন ছাত্র চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করেছেন তাদের অন্যতম গোলাম সারওয়ার। সারওয়ার যে নেই এ কথাটা আমার মনেই হয় না। আমার মনে হয়, সারওয়ার ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। কারণ, তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন।’

এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘গোলাম সারওয়ার যত বড় মানের সাংবাদিক ছিলেন, তার চেয়েও বড় মাপের মানুষ ছিলেন। তিনি আজীবন লড়াকু ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। রাজনীতিকদের প্রশংসা করতেন, আবার কড়া সমালোচনাও করতেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘গোলাম সারওয়ারের মধ্যে যে সততা দেখেছি ও দৃঢ়তা দেখেছি তা ভোলার নয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে রিপোর্ট করেছেন। তিনি উঁচু মাপের একজন মানুষ ছিলেন। তার দেখানো পথে দেশের সাংবাদিকতা আগামীতে প্রতিটি ক্রান্ত্রিকাল পেরিয়ে স্ব-মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা আজকাল এমন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, অতীতের যে মূল্যবোধ নিয়ে গর্ববোধ করতাম সে মূল্যবোধগুলো হারাতে বসেছি।  এটা যেন স্থায়ী না হয়।’

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী  নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘গোলাম সারওয়ার সাংবাদিকতায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত করেছেন। তার দেখানো পথ নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাহায্য করবে। ’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘একজন নির্ভীক ও নিরপেক্ষ সাংবাদিক হিসেবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গোলাম সারওয়ারের তুলনা হয় না। তিনি বড় হৃদয়ের মানুষ। তিনি রিপোর্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কৌশলী ছিলেন। বিরোধী মতের প্রতিও তিনি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। সমাজ থেকে যখন সত্য গুম হয়ে যায়, মানবিক মূল্যবোধ যখন উধাও হয়ে যায়, তখন গোলাম সারওয়ারের মতো একজন উঁচু মাপের সাংবাদিক প্রয়োজন হয়।’

সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠায় নির্ভীক-নিরপেক্ষ সাংবাদিক অপরিহার্য। এমনই একজন সাংবাদিক ছিলেন গোলাম সারওয়ার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল ছিলেন তিনি। তিনি মাথা থেকে পা পর্যন্ত বাঙালি ছিলেন এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। সারওয়ার তরুণ প্রজন্মের সাংবাদিকদের প্রশিক্ষিত করেছেন। তারা আজ বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করছে।’

ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ বলেন, ‘সারওয়ার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে গভীরভাবে ধারণ করতেন এবং এ চেতনায় দেশ গড়ায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ভালো সাংবাদিকের পাশাপাশি একজন ভালো মানুষ ছিলেন। দু’দিক দিয়েই তিনি অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন।’

লেখক ও সাংবাদিক  আবেদ খান বলেন, ‘গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছি ইত্তেফাকে। তার সঙ্গে অনেক স্মৃতি। এখন সাংবাদিকতাকে স্থবির হতে দেখছি, প্রচণ্ড ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। গোলাম সারওয়ারকে অনুসরণ করে তা যদি ক্যামেরা এবং ভাষায় প্রয়োগ করা যায়, তাহলেই কেবল এই ক্ষয় রোধ করা সম্ভব।’

অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘কৌশল এমন একটি শিল্প যে, আপনি কাজ করবেন কিন্তু শত্রু তৈরি হবে না। এই আদর্শের সার্থক মানুষটি ছিলেন গোলাম সারওয়ার। তিনি কাজ করেছেন সারাজীবন, কিন্তু কারও বিরাগভাজন হননি।  তিনি শুধু সাংবাদিক কিংবা সম্পাদক ছিলেন না, তিনি ছিলেন শিক্ষক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘একজন ভালো মানুষই একজন ভালো, সাংবাদিক, ভালো সম্পাদক, ভালো রাজনীতিতিবিদ। ভালো মানুষ বলতে যা বোঝায় তার নির্যাস ছিলেন গোলাম সারওয়ার। সংবাদ প্রকাশ, উপস্থাপন এবং সৃজনশীল শিরোনাম দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অনন্য।’

ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘গোলাম সারওয়ারের প্রতি সম্মান জানানোর একটিই উপায়, তা হচ্ছে– হচ্ছে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রসার, সাংবাদিকতার মূল্যবোধ ও স্বাধীনতকে সুদৃঢ় করা এবং দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ হয়ে সত্য কথা বলায় দৃঢ়তা নিয়ে আসা।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘গোলাম সারওয়ার ভাই একসময় ইত্তেফাকে ছিলেন তখন ইত্তেফাক পড়তাম। এরপর তিনি যুগান্তরে গেলেন, যুগান্তর পড়তে শুরু করলাম। এরপর সমকাল প্রতিষ্ঠা করলেন, তখন সমকাল পড়তে শুরু করলাম। এর অর্থ গোলাম সারওয়ার যেখানে যেতেন, পাঠকরাও সেখানে যেতেন।’

বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলাল বলেন, ‘গোলাম সারওয়ার অভিভাবক ছিলেন। তার কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছি। তিনি বলতেন, যাকে ঘৃণা করা হয় সে যতটা ঘৃণিত হন, তার চেয়ে যে ঘৃণা লালন করে, তার দহন হয় বেশি।’

সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘গোলাম সারওয়ার যথার্থ অর্থে সম্পাদকের পাশাপাশি সাংবাদিকতার শিক্ষক হয়ে উঠেছিলেন। সাংবাদিকতার সংকট, উৎকর্ষের কথা সবকিছুতেই মনে পড়ে সারওয়ার ভাইয়ের কথা।’

তথ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুল মালেক বলেন, ‘জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পিআইবির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন গোলাম সারওয়ার। সেই সূত্রে গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে সখ্যতা। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তার সুবিশাল ব্যক্তিত্বের স্নেহ, ভালোবাসা পাই।’

সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘সামাজিক, ধর্মীয় ও পারিবারিক  মূল্যবোধের অবক্ষয় চলছে। তা রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কে কোন পেশার তা বড় কথা নয়। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশে সংঘাত, হানাহানি নিরসনে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।’

কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, ‘গোলাম সারওয়ার আমার পরিবারের বন্ধু ও সুহৃদ। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক যখন গুরুতর অসুস্থ ছিলেন, তখন তিনি পাশে ছিলেন, সাহস জোগাতেন। সারওয়ারের অভয় দেওয়ার সাহস ছিল।’ সেই সাহস নিয়ে সাংবাদিকতা করতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। গোলাম সারওয়ারের নামে পদক প্রবর্তনেরও অনুরোধ জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি। এ সময় সমকালের প্রকাশক ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ ও আতাউর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সেনাল, এসিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীর, অভিনেতা আজিজুল হাকিম, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি ইলিয়াস হোসাইন, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, জাসদ নেতা শরীফ নুরুল আম্বিয়া, বুদ্ধিজীবী বিনায়ক সেন, কবি কামাল চৌধুরীসহ অনেকে উপস্থিতি ছিলেন।

 

/এসএমএ/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি