X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

চার কমিশনারের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া কমিশন সভায়: সচিবালয়ের কর্তৃত্ব ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন

এমরান হোসাইন শেখ
১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০১:৪১আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০১:৪৫

নির্বাচন ভবন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে সম্প্রতি নিম্নতর গ্রেডের কর্মচারী নিয়োগ ইস্যুতে বুধবার (১১ ডিসেম্বর) কমিশন সভায় উত্তাপ ছড়িয়েছেন চার কমিশনার। ইসি সচিবালয়ের ওপর কর্তৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই চার কমিশনার। লিখিত বক্তব্যে তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিবের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও তোলেন। একজন মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তার স্বাক্ষরে ইউও নোটের (আনঅফিসিয়াল নোট) জবাব দেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও দেখান। এ সময় তারা কমিশন সচিবালয়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ও অপমান করার মতো গুরুতর অভিযোগও তুলেছেন। বিক্ষুব্ধ কমিশনারদের কেউ কেউ অভিযোগের সঠিক সুরাহা না পেলে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে, চার কমিশনারের এসব বক্তব্যের সময় নিশ্চুপ ছিলেন প্রধান কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। বিষয়টি নিয়ে তারা ৫ কমিশনার আলাদা বৈঠক করবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির ৫৬তম কমিশন সভায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে। বিকাল ৩টায় সিইসির সভাপতিত্বে কমিশন সভা শুরু হয়ে চলে সোয়া ৫টা পর্যন্ত।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এ বৈঠকের এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বক্তব্য দেন চার কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, কবিতা খানম, মো. রফিকুল ইসলাম ও মাহবুব তালুকদার। বক্তব্যে তারা নিয়োগ নিয়ে ইতোপূর্বে তাদের দেওয়া ইউও নোট এবং ওই ইউও নোটের বিষয়ে সচিবালয়ের জবাব নিয়ে কথা বলেন। কথা বলেন ইসি সচিবালয়ের নানা কর্মকাণ্ড নিয়েও। তাদের বক্তব্যের পর সিইসি তাদের উদ্দেশে বলেন, এসব বিষয় নিয়ে আমরা (কমিশনাররা) নিজেরা আলাপ করবো। এখন এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনা করুন। পরে কমিশন সভার পাঁচ এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের পরেও ওই চার কমিশনারকে একত্রে বেরিয়ে তাদের কার্যালয়ের সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। এ সময় বৈঠকে ‘বলিষ্ঠ’ ভূমিকা রাখার জন্য একে অপরকে ধন্যবাদ দিতে শোনা গেছে। একজন কমিশনারকে উদ্দেশ করে অন্য একজনকে ‘ওয়েল ডান’ বলতেও শোনা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের (নির্বাচন কমিশনারদের) কিছু বক্তব্য কমিশন সভায় তুলে ধরেছি। আমরা কমিশনাররা পরে আবার বসবো। অপরদিকে বৈঠকে কমিশনারদের বক্তব্যের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর। তিনি বলেন, বৈঠকের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলার কোনও সুযোগ নেই। এটা একেবারেই গোপনীয় বিষয়, ইন্টারনাল বিষয়।
এব প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজ করতে গেলে অনেক বিষয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। তবে, আপনারা যদি এটাকে ইসির মধ্যে বিভক্তি হয়েছে বলতে চান তাহলে বলবো এ ধরনের কিছু হয়নি। কমিশনের সব কাজ সুষ্ঠুভাবে চলছে। বলতে পারেন মতপার্থক্য আছে, কিন্তু বিভক্তি নেই।
সিইসি ও কমিশনারদের মধ্যকার দূরত্বে সচিব হিসেবে বিব্রত কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, সচিব হিসেবে বিব্রত হওয়ার সুযোগ নেই। আইন কানুন, রুলস রেগুলেশন অনুযায়ী আমি ও আমার কর্মকর্তারা কাজ করি। এখানে বিব্রত বা দ্বন্দ্বের সুযোগ নেই।
সভায় কমিশনারদের কেউ কেউ দায়িত্ব ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন কিনা- এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, এটা কমিশন সভার অভ্যন্তরীণ ও গোপনীয় বিষয়। এটা নিয়ে কিছু বলা যাবে না।
এর আগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ৩৩৯ জন কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চেয়ে চার জন নির্বাচন কমিশনার সিইসি বরাবর ইউও নোট দেন। ওই ইউও নোটে তারা কমিশনের এখতিয়ার ও কর্তৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। পরে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিং করেন। ওই ব্রিফিংয়ের পরই ইসির সিনিয়র সচিবও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও অনিয়ম হয়নি। এবং নিয়োগ কার্যক্রম কমিশনারের এখতিয়ারভুক্ত নয়। পরে ইউও নোটের জবাব গত ৯ ডিসেম্বর কমিশনারদের দেওয়া হয়। ওই জবাবে কমিশনের একজন কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেন। এ বিষয়টি নিয়ে বুধবার কমিশন সভায় ক্ষুব্ধ বক্তব্য রাখেন চার কমিশনার।
জানা গেছে সভায় একজন কমিশনার তার বক্তব্যে বলেন, নিয়োগ নিয়ে আমার এক ইউও নোটের উত্তরে কমিশন সচিবালয় থেকে যে উত্তর দেওয়া হয়েছে তা নির্বাচন কমিশনারদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা মাত্র। চিঠির এ ধরনের জবাব নির্বাচন কমিশনারদের প্রতি অপমানজনক। ইসির একজন যুগ্মসচিবের অনুরোধে আমি যুগ্মসচিবকে (প্রশাসন) একটি রোল নম্বর প্রদান করেছিলাম। সিকিউরিটি গার্ড পদের ওই প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়নি, কোনও পর্যায়ে বহিষ্কার করা হয়নি। নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় পাস করায় তাকে ভাইভায় ডাকা হয় এবং প্রার্থী ভাইভা পরীক্ষা দেন। তাকে পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখানো হয়। এ বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে আমার একান্ত সচিবকে জানানো হয়েছে বলে সচিবালয়ের চিঠিতে যে দাবি করা হয়েছে তা মিথ্যাচার মাত্র।
ওই কমিশনার আরও বলেন, চিঠিতে নির্বাচন কমিশনারদের সুপারিশকৃত প্রার্থীরা নির্বাচিত না হওয়ায় তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন উত্থাপিত হয়- সচিবালয়ের এই বক্তব্য নির্বাচন কমিশনারদের অপমান করা এবং নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ ও চ্যালেঞ্জ করার শামিল।
নির্বাচন কমিশনারদের সংবাদ সম্মেলনের পর সচিবালয়ের সিনিয়র সচিবের পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি এটাকে নির্বাচন কমিশনারদের প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেকে জাহির করা বলেও অভিযোগ তোলেন ওই কমিশনার।
এমন অবস্থা চলতে থাকলে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয় জানিয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বৈঠকে বলেন, নির্বাচন কমিশন ও কমিশন সচিবালয়ের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে কোনও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে সচিবালয়ের বর্তমান স্বেচ্ছাচারিতা ও মিথ্যাচারের বিহীত না হলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন প্রায় অসম্ভব।
ওই সভায় ইসি সচিবালয়ের চিঠি প্রসঙ্গে আরেক নির্বাচন কমিশনার বলেন, তাদের চিঠির জবাবটিতে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সরাসরি কমিশনারদের মুখোমুখি করার একটা প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়েছে। তিনি বলেন, কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের অনুস্বাক্ষরসহ অত্যন্ত আপত্তিকর ভাষায় যে উত্তর দেওয়া হয়েছে তা সকল কমিশনারকে হতবাক করেছে। কেননা উল্লেখিতপত্রে কমিশনারদের প্রদত্ত ইউও নোটকে সম্পূর্ণরূপে পাশ কেটে অপ্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে।
এ কমিশনার বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করার বিষয়টি আড়াল করে নির্বাচন কমিশনারদের হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে যা মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হলে নির্বাচন কমিশনের সব কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
এ কমিশনার বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কমিশনের সভাপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি সব সময় সংবিধানসহ বিদ্যমান সকল আইন ও বিধি অনুযায়ী পরিচালিত হবে এটাই কাম্য। সিইসি সকল নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বিদ্যমান সকল আইন অনুসরণ করে কমিশনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন- এমন প্রত্যাশা করেন এ কমিশনার।

 

 

/ইএইচএস/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সরকার বদ্ধপরিকর
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সরকার বদ্ধপরিকর
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’
‘ভারত কিংবা অন্য কোনও দেশে এমনটি দেখিনি’
‘ভারত কিংবা অন্য কোনও দেশে এমনটি দেখিনি’
পশ্চিম তীরে ১০ যোদ্ধাকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
পশ্চিম তীরে ১০ যোদ্ধাকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
সর্বাধিক পঠিত
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও