পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে একইভাবে বিবেচনা করাকে অসম্মানজনক এবং আগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে এখন দুই দেশের মধ্যে এটি নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার এবং বাংলাদেশকে এর ফল আন্দাজ করে ভবিষ্যতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
গত মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ভারতের লোকসভায় এবং বুধবার রাজ্যসভায় দেশটির নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী পাস হয় । এটি পাস করার সময়ে ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে জানিয়ে বলেছেন, অভিবাসীরা ভারতে নাগরিকত্বের আবেদন করলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদেরটি বিবেচনা করা হবে।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হুসেন বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য অসম্মানজনক যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে আমাদেরকে একই পাল্লায় মাপা হয়েছে।’
নির্বাচনি প্রচারণায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এর আগে অনেকবার যথেষ্ট অপমানকর কথাবার্তা বলেছেন এবং আমরা এতে আহত এটি তাদেরকে জানানো দরকার বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আইন নিয়ে আমাদের বলার কিছু নাই। আমাদের জন্য যেটি আপত্তিকর সেটি হচ্ছে ভারত বিদেশিদের তালিকা বানালো এবং বাংলা ভাষীরা যদি সেখানে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত হয়, তবে বিষয়টি দাঁড় করানোর চেষ্টা হবে যে তারা বাংলাদেশ থেকে সেখানে গেছে। কারণ, তারা তো অস্ট্রেলিয়া বা অন্য দেশ থেকে যায়নি। আমাদের আপত্তির জায়গা সেখানে।’
অন্য ধর্মের লোকদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অমিত শাহ এখানে চালাকির আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলছেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ে হিন্দুরা নিরাপদ ছিল এবং শেখ হাসিনার সময়ে নিরাপদ। মাঝখানে বিএনপি সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা অত্যাচারিত ছিল এবং তারা তখন সেখানে গেছে। এর সত্য মিথ্যা যাচাই করার প্রয়োজন নেই, কিন্তু দেশ হিসাবে আমরা অভিযুক্ত হচ্ছি। তাহলে উনি বলুক, বিএনপি সরকারের সময়ে যারা গেছে তাদের উনি নাগরিকত্ব দেবেন, কিন্তু সেটি তিনি বলেননি।’
ভারতের গণতান্ত্রিক মূল বিষয়গুলো পরিবর্তিত হচ্ছে জানিয়ে ভারতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত টিকে হায়দার বলেন, ‘এখানে ধর্মনিরপেক্ষতা স্থান হারাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা যা বলছে সেটি ঠিক নয় এবং অগ্রহণযোগ্য। তারাই তো বলে আমরা তাদের বেস্ট ফ্রেন্ড, তাহলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে আমাদের এক কাতারে কিভাবে ফেলে? যদি কোনও সমস্যা থাকে তবে যৌথভাবে আলোচনা করে সমাধান করা যায়। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে যারা আসছে তারা ফেরত যেতে পারবে না, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কেউ গিয়ে থাকলে সেটি ম্যানেজ করা সম্ভব।’
‘বিএনপির আমলে নির্যাতন হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করছে এবং সেটাকেই ধরে নিয়ে তারা বিল পাস করেছে কিনা জানি না কিন্তু, তারা বলছে এখনও হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে’,মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘যদি বাংলাদেশের আশেপাশের রাজ্যগুলোতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, তবে জান বাঁচানোর জন্য তারা এমনিতেই বাংলাদেশে চলে আসবে এবং এর জন্য ভারত সরকারের কিছু করা লাগবে না।’
বর্ষীয়ান ওই কূটনীতিক মনে করেন, ‘আমাদের আলোচনা শুরু করা দরকার। আমাদের প্র্যাকটিকাল অ্যাপ্রোচ নেওয়া উচিত এর কনসিক্যুয়েন্স বিবেচনা করে।’