X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১
রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম!

বিভ্রান্ত না হতে বললেন মন্ত্রী

উদিসা ইসলাম
১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:০০আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৪১

বিভ্রান্ত না হতে বললেন মন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হওয়ার পরও রাজাকারের তালিকাভুক্ত হওয়ায় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ও সহযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এটিকে চরম অসম্মান অভিহিত করে তারা বলছেন, গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধারা কীসের ভিত্তিতে এই তালিকাভুক্ত হলেন, সেই জবাবদিহি সরকারকে করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষকরাও বিস্ময় প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। কেউ কেউ এই তালিকা বাতিলের দাবি তুলেছেন।
তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলছেন, একই নাম অনেকের থাকতে পারে। যারা চিহ্নিত মুক্তিযোদ্ধা তারা কেন তালিকাভুক্ত হবেন? সরকারি নথিতে যাদের তালিকা পাওয়া গেছে তাদের নামই বলা হয়েছে, নতুন করে কাউকে নথিভুক্ত করা হয়নি। একই নাম দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাসদ নেতা ডা. মনীষা চক্রবর্তী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করার পুরস্কার পেলাম আজ। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগকে। সদ্য প্রকাশিত রাজাকারদের গেজেটে আমার বাবা এবং ঠাকুমার নাম প্রকাশিত হয়েছে। আমার বাবা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা (ক্রমিক নং ১১২, পৃষ্ঠা ৪১১৩)। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে থাকেন! আজ রাজাকারের তালিকায় তিনি ৬৫ নম্বরে আছেন।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার ঠাকুরদা অ্যাডভোকেট সুধির কুমার চক্রবর্তীকে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তার সহধর্মিণী আমার ঠাকুমা উষারানী চক্রবর্তীকে রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
বিভ্রান্ত না হতে বললেন মন্ত্রী রাজশাহী এলাকার রাজাকারের তালিকায় আছেন তিন জন আইনজীবী—অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ, অ্যাডভোকেট মহসীন ও অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম। এই নাম তিনটি দেখে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আওয়ামী লীগের নেতা, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম কী করে তালিকায় এলো, সেই প্রশ্ন জনমনে।
বরগুনার পাথরঘাটার হৃদি রুবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, তার পরিবারের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবল হকের নাম তালিকায় এসেছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উনার ডাকনামও মিলে গেছে। এটি উনিই যে সেটি নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। উনি বরগুনা জেলা সংগ্রাম পরিষদের নেতা, থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। পাথরঘাটার সবাই উনাকে চেনেন। ভাগ্যিস উনি মারা গেছেন! জীবিত থাকলে এই দিন দেখে উনি খুব কষ্ট পেতেন।’
তালিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি স্তম্ভিত, বিস্মিত। এ ধরনের কিছু কী করে ঘটে? রাজশাহীতে গোলাম আরিফ নামে আর কোনও অ্যাডভোকেট আছে কি? অ্যাডভোকেট মহসীন, অ্যাডভোকেট সালামের নাম দেখেও আমি বিস্মিত। তবে এই তিনটি নামের পাশে বাবার নাম উল্লেখ নেই।’
রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘অ্যাডভোকেট মহসিন আওয়ামী লীগের চিহ্নিত নেতা, তিনি ইয়েস ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। অ্যাডভোকেট সালাম, অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ—এরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক। তাদের রাজনীতি জীবন সবার জানা।’ বাবার নাম উল্লেখ না থাকায় এটা আরও বেশি বিপদের হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিভ্রান্ত না হতে বললেন মন্ত্রী মনীষা চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি আমার বাবারই নাম। কেননা, তার বাবার নাম উল্লেখ আছে এবং হুবহু বাবার নামও মিলে গেছে—এমন ভাবার কোনও সুযোগ নেই।’
এটি পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক দাবি করে তিনি আরও বলেন, “আজকেই আমার পার্টি অফিসের পাশ দিয়ে মিছিল বের হয়েছে, ‘একাত্তরের রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়।’ যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই মন্ত্রণালয় রাজাকারের স্বীকৃতিও দিলো তাকে।’
এ তালিকার নৈতিক কোনও ভিত্তি থাকলো না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাবা মুক্তিযোদ্ধা, দাদা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, তাদের রাজাকার হিসেবে স্বীকৃতি দিলো। আমরা ক্ষুব্ধ, আমরা স্তম্ভিত।’ এই গেজেট বাতিলের দাবি জানান তিনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অন্য মানুষের নাম থাকতে পারে। আমরা নতুন কোনও তালিকা করিনি। সরকারি নথিতে যাদের নাম আছে তাদেরই নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে।’
এই অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না না সে ভিন্ন কোনও গোলাম আরিফ। একই নাম দেখে বিভ্রান্ত হবেন না।’
বিভ্রান্ত না হতে বললেন মন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ড. এম হাসান বলেন, ‘কোনও হিন্দু পরিবার একাত্তরে রাজাকার ছিল—এটা ভাবার কোনও কারণ নেই।’
তাহলে কীভাবে মনীষার পরিবার যুক্ত হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি তালিকা তৈরির ক্ষেত্র বিলম্বিত ও বিতর্কিত করবে। ভুল হয়ে থাকলে স্বীকার করে ঠিক করে নিন এখনই।’
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি থেকে আমরা অপরাধীদের তালিকা করেছিলাম। যখন বাইরের লোক সেই ইংরেজি তালিকা বাংলা করে, তখন শত্রুতা করে এর তার নাম ঢুকিয়ে দিয়েছিল। সেটি মূল তালিকায় ছিল না। সরকার বলছে, ডিসিরা তালিকার সঙ্গে যুক্ত এবং সেই তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছে। শেষ সময়ে আমি দেখা করে অনুরোধ করেছিলাম, যুদ্ধের পর যাদের বিরুদ্ধে গেজেট হয়েছিল, তাদের নাম সবার আগে দিন। এরপর প্রকাশ করা উচিত দৈনিক সংগ্রামে যাদের নাম প্রকাশ হয়েছিল, শান্তি কমিটিতে যারা ছিল।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এরকম তালিকা প্রত্যাখ্যান করি। এই তালিকা আমলানির্ভর। বাবার নাম-ঠিকানা ছাড়া কেবল গোলাম আরিফ নাম দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হবে, এটা এত সহজ কাজ নয়।’ তারা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

/এইচআই/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে ঐতিহ্যকে নষ্ট করতে দেবো না: নাছিম
সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে ঐতিহ্যকে নষ্ট করতে দেবো না: নাছিম
চলতি মাসেই বঙ্গবাজারে বহুতল মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন  
চলতি মাসেই বঙ্গবাজারে বহুতল মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন  
টানা দাবদাহের পর রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি
টানা দাবদাহের পর রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
বাজারে ক্রেতা নেই: তবু ব্রয়লারের কেজি ২৩৫, গরু ৮০০
বাজারে ক্রেতা নেই: তবু ব্রয়লারের কেজি ২৩৫, গরু ৮০০