বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ার ইমেরিটাস স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে শােক প্রকাশ করেছেন দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্র্যাক এই তথ্য জানিয়েছে।
ব্র্যাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তার শোক বার্তায় বলেছেন, ‘স্যার ফজলের জীবন মানবতার জন্য এক বিরাট উপহার। ব্র্যাকে ৫০ বছরের নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ ও তার বাইরে কোটি মানুষের জীবন আমূল বদলে দিয়েছেন। একইসঙ্গে উন্নয়ন সম্পর্কে বিশ্বের ভাবনাকেও তিনি বদলে দিয়েছেন।’
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘তার কর্মের বিপুল বিস্তৃতি ও প্রভাব এবং যে পরিপূর্ণ বিনয় সহকারে কাজগুলাে তিনি সম্পন্ন করেছেন, উভয়ই আমাদের শিক্ষার পাথেয় হয়ে থাকবে।’
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মেলিন্ডা গেটস বলেন, ‘১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে প্রত্যাগত শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য ১০ হাজার ৪০০ ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত আরও অর্থ সংগ্রহ করে তিনি ১৬ হাজার ঘর
করেছিলেন। তারপরও কিছু অর্থ উদ্বৃত্ত থেকে গিয়েছিল, যা দিয়ে পরের প্রকল্প শুরু করেন। এমনই এক মহৎ ও মানবতাবাদী লোক ছিলেন তিনি। তার কাজ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’
নােবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জী এবং এস্তার দুফলো বলেন, ‘ফজলে হাসান আবেদের মতন মানুষ কয়টা হয়? তার অবস্থানে আমরা সবাই একটু ছােট হয়ে গেলাম।’
ব্র্যাক বাংলাদেশের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘স্যার ফজলে হাসান আবেদ অসাধারণ দায়িত্ববােধ, সহমর্মিতার গভীর জীবনদর্শন ও নিরলসশ্রমের এক অবিস্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষটারও ভাগ্য পরিবর্তনের
সম্ভাবনা থাকে, এই বিশ্বাসে ভর করেই তিনি সফলভাবে গড়েছেন বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ যা সারা বিশ্বে সমাদৃত। কিন্তু এই
সাহস একেবারেই শেকড় থেকে আসা। চলে যাওয়ার বেদনার এই মুহূর্তেও পরপার থেকে তার স্মিত হাসি ভরসা দিচ্ছে সহমর্মিতা, দায়িত্ববােধ ও শ্রম আঁকড়ে ধরে আরও বহুদূর যাওয়ার, যেতে হবে। কারণ পৃথিবীতে ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের সংখ্যা এখন অগণিত। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বিদায়।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান তার শোক বার্তায় বলেন, ‘দেশ ও দেশের বাইরে দরিদ্রবান্ধব বেসরকারি উন্নয়নে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রাণপুরুষ। একজন গবেষক হিসেবে ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে আমি তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি। বিশ্ব তাকে উন্নয়নক্ষেত্রে বহুমাত্রিক এবং ব্যয়সাশ্রয়ী অনেক সমাধান উদ্ভাবনের জন্য মনে রাখবে। তার এসব সমাধান সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, বিশেষত নারীর অগ্রযাত্রায় সহায়ক হয়েছে। গরিব মানুষের কাছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আর্থিক খাতে সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার নেতৃত্ব অবিসংবাদিত।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘স্যার ফজলে ছিলেন শ্রেষ্ঠতম সামাজিক উদ্ভাবকদের একজন। বাংলাদেশ ও আরও অনেক স্বল্পোন্নত দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত কোটি মানুষের অবস্থা পরিবর্তনে তার অসামান্য অবদানকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। এই স্বপ্নদ্রষ্টা নেতা তার গভীর প্রজ্ঞা ও গন্ডির বাইরের চিন্তাভাবনা দিয়ে সিপিডির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দিকনির্দেশনা দিয়ে এসেছেন। তার মৃত্যুতে ব্র্যাক, সিপিডি, বাংলাদেশ তথা বিশ্বের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।’
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, ‘দেশের সীমানা পেরিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকার ১০টি দেশে ব্র্যাকের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটিয়ে তিনি আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। আমরা, ইউনিসেফের সকলেই তার উন্নয়ন ভাবনাগুলাের অনুপস্থিতি গভীরভাবে অনুভব করি।’
দেশ-বিদেশ থেকে আরও শােকবার্তা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমদ, ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি তােমু হােজুমি, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অশােকা-র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিল ড্রেইটন, পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত কলামিস্ট নিকোলাস ক্রিস্টফ, যুক্তরাজ্য সরকারের বৈদেশিক সহায়তা বিভাগ (ডিএফআইডি), অস্ট্রেলিয়া সরকারের বৈদেশিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় (ডিএফএটি), সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউকে-র প্রধান নির্বাহী কেভিন ওয়াটকিনস, বিপি হাব, ওয়ার্ টয়লেট অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক সিম, যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী সাইদা রশীদ, টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) সাহল আফজা চৌধুরী, ব্রিটিশ রেড ক্রসের সাফেনা লালানি, ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির গবেষক জিবাহ নােয়াকো, সাজিদা ফাউন্ডেশন, জাগাে ফাউন্ডেশন, ড. চঞ্চল খান, কামরুল মুরাদ প্রমুখ।
২২ ডিসেম্বর আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা, বনানীতে দাফন
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মাদ মুসা জানিয়েছেন, ২২ ডিসেম্বর, রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্যার ফজলে হাসান আবেদের মরদেহ ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। দুপুর সাড়ে ১২টায় সেখানেই জানাজা সম্পন্ন হবে। পরে তাকে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
শোকবই
স্যার ফজলে হাসান আবেদ স্মরণে ২২ ডিসেম্বর রবিবার দুপুর ২টা থেকে মহাখালীর প্রধান কার্যালয় ব্র্যাক সেন্টারে একটি শােকবই খেলা হবে। এছাড়া আড়ং, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আগামী সােমবার (২৩ ডিসেম্বর) এবং সারা দেশে ব্র্যাকের আঞ্চলিক অফিসগুলোতে আগামী মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শোক বই খােলা থাকবে। এই শােকবই খোলা থাকবে ৩০ জানুয়ারি বিকাল ৫টা পর্যন্ত।