X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

গাড়ির হর্ন থেকে মুক্তি মিলবে কবে?

সঞ্চিতা সীতু
২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৫৩আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:২০

গাড়ির হর্ন থেকে মুক্তি মিলবে কবে? রাজধানীর সড়কগুলোতে চলমান গাড়িতে প্রতিনিয়তই বিকট শব্দে হর্ন বাজতে শোনা যায়। অনেক সময় প্রয়োজনের চেয়ে অকারণেই বেশি হর্ন বাজান চালকরা। পথচারীরা বলছেন, অকারণে হর্ন দেওয়াটা চালকদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এর ফলে রাজধানীতে তীব্র শব্দদূষণ তৈরি হচ্ছে। এই শব্দদূষণ থেকে মুক্তি চান তারা। কিন্তু হর্নযন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলা সহজ বিষয় নয় বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদরা। তারা বলছেন, এ ধরনের শব্দদূষণ রোধ করতে হলে কেবল আইনের প্রয়োগই যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি সচেতনতাও জরুরি।

প্রায় দেখা যায়, রাজধানীর সড়কগুলোর বিভিন্ন মোড়ে কেবল গাড়ি চলমান অবস্থায়ই নয়, যানজটের সময়ও চালকরা অহরহ হর্ন বাজিয়ে চলেন। হর্নের শব্দে রাস্তার পাশে চলা কিংবা দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। তেমনই একটি দৃশ্য দেখা গেলো গত ২৪ ডিসেম্বর দুপুর ১টায়। মগবাজার মোড়েই হর্নের বিকট শব্দ থেকে বাঁচতে দীপা নামের এক তরুণী দুই হাত কানে চেপে ধরলেন। বিকট শব্দে হর্ন বাজানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই তরুণী বলেন, ‘আমি স্থানীয় একটি কলেজে পড়ি। এখানে চারপাশ দিয়েই গাড়ি আসে। গাড়িগুলো চলুক বা দাঁড়িয়ে থাকুক, হর্ন দিতেই থাকে। যা বিরক্তিকর। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করে কোনও লাভ নেই। আর প্রতিবাদ করবো কোথায়?’

শুধু এই তরুণী নন, এই মোড়ে এলে সবার অবস্থাই তার মতোই হতে থাকে। মগবাজার মোড়ের পাশাপাশি রাজধানীর সব সড়কে বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে চলেন চালকরা, যার বেশিরভাগই বাজানো হয় অপ্রয়োজনে। কিন্তু চালকরা মনে করছেন, বিকট শব্দে হর্ন বাজানোর প্রয়োজন আছে।

কেন অপ্রয়োজনে হর্ন বাজানো হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে জাকিউল নামের এক গাড়িচালক বলেন, ‘একই রাস্তায় রিকশা চলে আবার দ্রুতগতির গাড়িও চলে। এখানে রিকশার জন্য আলাদা কোনও লেন নেই। ফলে রিকশা সরাতেই আমাদের বারবার হর্ন দিতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, একটি রিকশাকে ১০ বার হর্ন না দিলে রাস্তা দেয় না। এখানে আমাদের দায়টা কোথায়!

রাজধানীর সড়কে হর্নজনিত শব্দদূষণ কবে নাগাদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব—এমন প্রশ্নে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক একেএম রফিক আহাম্মদ বলেন, ‘এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। আমরা কেবল শুরু করেছি। একদিনে এটা কিছু করা যাবে না। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করার চেয়ে মোটিভেশন করা জরুরি। মোটিভেশন করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘শব্দদূষণ নিয়ে এরইমধ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এটি চলমান আছে। এই প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য এখন প্ল্যানিং কমিশনে আছে। ওই প্রকল্পের মধ্যে সচেতনতার ব্যাপার আছে, প্রচার প্রচারণা আছে, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে মিটিং আছে, আইনের বাস্তবায়নও আছে।’

পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘মোবাইল কোটের্ এখন জরিমানার পাশাপাশি সচেতনও করা হচ্ছে। এরপর আরও কঠোর হবো আমরা।’ তিনি বলেন, ‘মানুষের অভ্যাস পরিবর্তন করা জরুরি। অনেক চালক অযথাই হর্ন বাজান। এটি বন্ধ করতে হলে আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি সচেতনতা জরুরি। সবাই এগিয়ে না এলে আইনের প্রয়োগ সফল হয় না। টিভি ক্যাম্পেইন হবে, ডকুমেন্টারি হবে, টকশো হবে।’ বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা রাখতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে, গত ২৫ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় ১৭ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ সচিবালয়ের চারপাশকে ‘নো হর্ন জোন’ হিসেবে কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর গত ৮ ডিসেম্বর সচিবালয়ের আশপাশে হর্ন বাজালে জেল-জরিমানা নির্ধারণ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীনে প্রণীত ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬’ অনুযায়ী ‘নো হর্ন জোন’ বলতে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বা একই জাতীয় অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান এবং এর চারদিকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে বোঝায়।

বিধিমালা (শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা) অনুযায়ী ‘নো হর্ন জোনে’ কেউ হর্ন বাজালে প্রথমবার সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পরবর্তী সময়ে একই অপরাধ করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

শব্দদূষণের বিষয়ে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’ (বাপা)-এর নির্বাহী সহ-সভাপতি ডা. আব্দুল মতিন বলেন, ‘সচেতনতা অনেক মানুষের মধ্যেই আছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই ‘বাপা’ এ বিষয়ে কাজ করছে। সভা, সেমিনার, সচেতনতা বাড়াতে র‌্যালিও করেছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। এখন শুধু সচিবালয়কে ‘নো হর্ন জোন’ ঘোষণা করলে কীভাবে হবে? রাজধানীর কিছু কিছু পয়েন্টে শব্দদূষণ অনেক বেশি।’’ সেসব পয়েন্টে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করারও পরামর্শ দেন তিনি।

/এমএনএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফসলের মাঠে সোনারঙ, তীব্র গরমেও কৃষকের মুখে হাসি
ফসলের মাঠে সোনারঙ, তীব্র গরমেও কৃষকের মুখে হাসি
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়কে ভূমিকা রাখার আহ্বান
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়কে ভূমিকা রাখার আহ্বান
আত্মীয়ের জানাজা শেষে ফেরার পথে প্রাণ গেলো মা-ছেলের
আত্মীয়ের জানাজা শেষে ফেরার পথে প্রাণ গেলো মা-ছেলের
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিভিন্ন জেলায় নামাজ আদায়
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিভিন্ন জেলায় নামাজ আদায়
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা