X
বুধবার, ০১ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশ থেকে নারীকর্মী ফেরত আসার হার কমছে

সাদ্দিফ অভি
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:২৩আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:০৭




সৌদি ফেরত নারীকর্মী (ফাইল ছবি) চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসা নারীকর্মীর সংখ্যা কমছে। বিগত বছরগুলোর সঙ্গে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান যাচাই করে এই তথ্য পাওয়া যায়। অবশ্য নারীকর্মী ফেরত আসার হার কমবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। বিশেষ করে গত বছরের নভেম্বর মাসে সৌদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকের পর এই হার কমেছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা।

তবে কী পরিমাণ নারীকর্মী দেশে ফিরে এসেছেন, তার সঠিক হিসাব অবশ্য কারও কাছে নেই। কয়েকটি সংস্থা থেকে প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী ফিরে আসার হার কমেছে বলে ধারণা পাওয়া যায়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে পাওয়া তথ্যমতে ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে নানা কারণে ফিরে আসা নারীকর্মীর সংখ্যা ছিল ৯৭৮ জন। এরপর ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৫৩০ জন নারীকর্মী বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসেন। বাকি ৮ মাসে ফেরত এসেছেন ১৮৭ জন।

অর্থাৎ ২০১৯ সালে দেশে ফিরেছেন ৭১৭ জন নারীকর্মী। তবে ফিরে আসার সংখ্যা কিছুটা বেশি হতে পারে বলে ধারণা প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কর্মকর্তাদের।

কারণ হিসেবে জানা যায়, অনেক নারীকর্মী ফ্লাইট থেকে নামার পর ইমিগ্রেশন পার হয়ে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক পর্যন্ত না এসে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে যান। এ কারণে ফেরত আসাদের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে প্রবাসী ডেস্কের তথ্য থেকে নারীকর্মী ফেরত আসার হার কমে যাওয়ার বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়।

অন্যদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যমতে ২০১৫-১৭ সালে শুধু সৌদি আরব থেকে দূতাবাসের সেফহোমের মাধ্যমে দেশে ফিরেছেন চার হাজার ৫৬৫ জন নারী, ২০১৮ সালে দুই হাজার ৭১৩ এবং ২০১৯ সালে এক হাজার ২২৯ জন নারীকর্মী। এই হিসেবেও ফিরে আসা নারীকর্মীর সংখ্যা কমে আসার ধারণা পাওয়া যায়।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সৌদি থেকে নারীকর্মী দেশে ফিরছেন এক হাজার ২৫০ জন। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে ফিরেছে প্রায় এক হাজার ৩৫৩ জন নারীকর্মী। আর এই বছরের শুধু জানুয়ারি মাসেই এসেছেন ১৭৫ নারীকর্মী।

তবে আগের মতো গণহারে এখন আর নারীকর্মীরা আসছেন না। অল্প সংখ্যায় দেশে ফিরছেন তারা। এই বছরের প্রথমদিকে ৪ ও ৫ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন ১৫ নারীকর্মী, ৬ জানুয়ারি এসেছেন ৮ জন। এভাবে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এসেছেন ৪০ জন নারীকর্মী।

নারীকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে গেলো বছরের নভেম্বর মাসে সৌদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছে সৌদি আরবের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বাংলাদেশের দূতাবাসের কাছে জবাবদিহি থাকা, গৃহকর্মীদের আনতে হলে দূতাবাসে আবেদন করতে হবে এবং দূতাবাস নিয়োগকর্তার পারিবারিক তথ্য যাচাই-বাছাই করে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোকে (বিএমইটি) জানানোর পর সেই এজেন্সি কর্মী আনার অনুমতি পাবে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবে আরও বলা হয়, কোনও গৃহকর্মী নিয়োগকর্তা কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে পুলিশের কাছে আশ্রয় নিলে নিয়োগকর্তার কাছে ফেরত না পাঠিয়ে বিষয়টি শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়া হবে অথবা দূতাবাসের সেফহোমে আশ্রয় দিয়ে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিকে ১৫ দিনের মধ্যে ওই গৃহকর্মীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

নামমাত্র প্রশিক্ষণ না দিয়ে বিদ্যমান প্রশিক্ষণকে আরও কার্যকর ও সময়োপযোগী করে তুলতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ প্রশিক্ষণ দিয়ে নারী গৃহকর্মীদের বিদেশ পাঠালে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।

এছাড়া বৈঠকে সৌদি শ্রম আদালতের মামলা দায়েরের বিষয়টি সহজ করা নিয়ে আলোচনা হয়। শ্রমিকেরা যেন নিয়োগকর্তাদের সম্পাদিত চুক্তির কপি পেতে পারেন, ব্যাপারটি নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এই বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানানো হয়। সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্য বিমা আরও কার্যকর করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় বৈঠকে।

এছাড়া সৌদি আরব থেকে ওই বৈঠক শেষে দেশে ফিরে সচিব বলেছিলেন, যে নারীকর্মীরা কাজ ত্যাগ করে পলাতক হয়েছেন, তাদের পুলিশ কোনোভাবেই নিয়োগকর্তার কাছে হস্তান্তর করবে না। নারীকর্মী যতদিন কর্মরত থাকবেন, ততদিন তার দায়িত্ব বাংলাদেশ ও সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সি বহন করবে। যে নারীকর্মী দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন তাদের দেশে না ফেরা পর্যন্ত তাদের আবাসন ও অন্যান্য দায়িত্ব রিক্রুটিং এজেন্সি বহন করবে।

নারীকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরবে না বলে জানিয়েছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি বলেছিলেন, ১ ডিসেম্বর থেকে নারীকর্মী ফেরত আসার সংখ্যা আর ৩০ নভেম্বরের আগ পর্যন্ত ফেরত আসা নারীকর্মীর সংখ্যার একটু তুলনামূলক চিত্র দেখা দরকার। যেভাবে বিগত ১০ মাসে সৌদি থেকে আমাদের নারীকর্মীরা ফেরত এসেছেন, তার সঙ্গে ডিসেম্বরে ফেরত আসার সংখ্যার তুলনা করে দেখবেন। আমি বিশ্বাস করি, মারাত্মক একটি ব্যবধান পাওয়া যাবে। আমাদের সচিবের নেতৃত্বে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গত নভেম্বর মাসে জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির মিটিং হয়। সেখানে অনেক শক্ত শক্ত কথা বলা হয়েছে। ফলাফল হলো আমাদের নারীকর্মীরা যারা বিদেশে আছেন, আগের থেকে অনেক সুরক্ষিত অবস্থায় আছে। এই অবস্থা আরও ভালো হবে, একটু সময় দিন।

নারীকর্মীদের ফিরে আসার হার কমে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত নভেম্বর মাসে সৌদি আরবে জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির মিটিংয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে কিছু কাজ সৌদি কর্তৃপক্ষ করেছেন আর কিছু আমরা করেছি। যার ফল এই ফিরে আসার হার কমে যাওয়া।

নারীকর্মীদের ফিরে আসা প্রসঙ্গে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জানুয়ারি মাসে ১৭৫ জন নারীকর্মী ফেরত এসেছেন। আগে যেমন একসঙ্গে অনেক আসতেন, এখন একসঙ্গে হয়তো অনেক আসেন না। একটি জিনিস ইতিবাচক, গত নভেম্বর মাসে সৌদি আরবে যে মিটিং হয়েছে, সেখানে নিপীড়ন সংকট তুলে ধরা হয়েছে। এরপর বড় আকারে ফিরে আসতে দেখিনি। কিন্তু একেবারেই যে আসছেন না, তাও কিন্তু না। গড়ে প্রতিদিন একজন-দুইজন আসেন। এই মাসে যে ১৭৫ জন ফেরত এসেছেন, এই সংখ্যা কিন্তু একেবারেই ইগনর করার মতো না। পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, আর যেই ১২ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যদি রিক্রুটিং এজেন্সি পালন করে, সরকার মনিটরিং আরও জোরদার করে, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভালো করা সম্ভব বলে মনে করি।

উল্লেখ্য, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে ২০১৯ সালে বিদেশে কাজ করতে গিয়েছেন এক লাখ চার হাজার ৭৮৬ নারীকর্মী, যা বিগত বছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালে এক লাখ এক হাজার ৬৯৫ জন নারীকর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এখন পর্যন্ত ৯ লাখ দুই হাজার ৪৮১ জন নারীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে বলেও সংস্থাটির পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়। নারীকর্মীদের সবচেয়ে বড় গন্তব্য সৌদি আরব ও জর্ডান। এরপর আছে লেবানন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান এবং কাতার।

/টিটি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে
‘দেশের মানুষের ঘাড়ে জগদ্দল পাথর চেপে বসেছে, তা নামাতে হবে’
‘দেশের মানুষের ঘাড়ে জগদ্দল পাথর চেপে বসেছে, তা নামাতে হবে’
মে দিবসে শ্রমিক জোটের সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিল
মে দিবসে শ্রমিক জোটের সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিল
সর্বাধিক পঠিত
চকরিয়ার সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী বরখাস্ত
চকরিয়ার সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী বরখাস্ত
কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে ভেঙেছে ঘরবাড়ি, ধানের ক্ষতি
কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে ভেঙেছে ঘরবাড়ি, ধানের ক্ষতি
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা