X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

কোনও পরিবারের ১০০ বিঘার বেশি জমি থাকবে না: বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:০০আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:০০

ভোলার দৌলতখানে জনসভায় বক্তব্য রাখছেন বঙ্গবন্ধু

একটি পরিবার মাত্র ১০০ বিঘা সম্পত্তি রাখতে পারবে। প্রয়োজনে এটা আরও কমানো হতে পারে। ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এই ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন নোয়াখালীর রামগতিতে এক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু লক্ষাধিক লোকের জনসভায় বক্তৃতা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া ব্যক্তির জমি এবং সরকারের হাতে থাকা খাস জমি সঙ্গে সঙ্গে ভূমিহীন কৃষকদের বণ্টন করা হবে।’ বঙ্গবন্ধু সেখানে এও জানান— ‘দেশ পুনর্গঠনের জন্য তাকে দিনে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে।’ সবাইকে আবারও ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে সতর্ক করে দেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর হুঁশিয়ারি

বঙ্গবন্ধু তার বক্তব্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘অতীতের মতো পোষ্যদের নামে জমি ভাগ করে দিয়ে ১০০ বিঘার বেশি জমি রাখা, বা এই ঘোষণাকে ফাঁকি দেওয়া, বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া চলবে না।’ তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের অবিলম্বে কাজ শুরুর নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ যথাযথ কার্যকর করতে ব্যর্থ হলে তাদের জেল খাটতে হতে পারে বলেও জানিয়ে দেন। সভায় খন্দকার মোশতাক আহমদও উপস্থিত ছিলেন।

কোনও পরিবারের ১০০ বিঘার বেশি জমি থাকবে না: বঙ্গবন্ধু

কৃষি বিপ্লবের ডাক

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে কৃষি বিপ্লব সাধনের জন্য কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই দেশের বিধ্বস্ত অর্থনীতি দ্রুত পুনর্গঠনে নিশ্চয়তা বিধান করা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার অতীতের সরকারগুলোর মতো নয়— এ সরকার জনগণের সরকার। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সরকার। আমাদের এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে হবে, যে সমাজে এই কৃষকরা, শ্রমিকরা, এই ক্ষুধার্ত জনগণ আবারও হাসতে পারবে। জনগণের প্রাণ ধারণের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা বিধান করা না গেলে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়বে। কাজেই সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। মূলত সংগ্রাম মাত্র শুরু হয়েছে। এবারের সংগ্রাম সোনার বাংলা গড়ে তোলার সংগ্রাম।’ সতর্কবাণী উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের এখনও অবসান হয়নি। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’ বিভিন্ন সমস্যার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কারও কাছে আলাদিনের প্রদীপ নেই। নিষ্ঠার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করেই এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

যারা অস্ত্র জমা দেয়নি তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দিন

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘দুষ্কৃতিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সবাই আমার আহ্বানে অস্ত্র সমর্পণ করেছে। কিছু দুষ্কৃতিকারী ও পাকিস্তান বাহিনীর দালালরা এখনও অস্ত্র রেখে দিয়েছে।’ এদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা কাজ করেন বঙ্গবন্ধু

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু নিজে এ তথ্য জানান। জনগণের প্রতি কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু তার নিজের পরিশ্রমের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘দেশ যখন অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে, তখন বিশ্রাম আমার জন্য নিষিদ্ধ।’ দৈনিক বাংলার খবরে জানানো হয়, ওইদিন বঙ্গবন্ধু উপকূলীয় এলাকা সফর শেষে ঢাকায় ফিরে যান।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মহিউদ্দিনের সাক্ষাৎ

১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পত্রিকাগুলোতে ন্যাপের বিজ্ঞপ্তির সূত্র দিয়ে জানানো হয়, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ন্যাপ নেতা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেশে চিকিৎসার বন্দোবস্তের ব্যবস্থা, বাড়ি রিকুইজিশনে অব্যবস্থা ও পরিত্যক্ত সম্পত্তি সরকারি তত্ত্বাবধানে আনার জন্য কমিশন গঠন প্রভৃতি বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন। বঙ্গবন্ধু এ ব্যাপারে শিগগিরই সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন।

কোনও পরিবারের ১০০ বিঘার বেশি জমি থাকবে না: বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরে বাংলা চালু করতে উদ্যোগ

মহান একুশে উপলক্ষে প্রতিবছর দাবি ওঠে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার। তখনও আলাপ উঠতো। নেতাকর্মীদের দাবি ছিল— বাংলা চালুর। এ কথা বারবার বলা হলেও খুব সামান্যই কার্যকর হয়েছে। সবসময় বলা হতো যে, সর্বস্তরে বাংলা চালুর মতো উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়নি। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী সব ক্ষেত্রে বাংলা চালুর প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। সেসময় সবাই বাংলায় লেখার চেষ্টা করছেন। সরকারি অফিস-আদালতে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইংরেজি নামের ফলকগুলো অপসারিত হয়েছে, বাংলায় ফাইলপত্র কিছু কিছু চালু করা হচ্ছিল। তবে যত দ্রুত কাজ হওয়া উচিত, তা হচ্ছে না বলে দৈনিক বাংলার প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়।

জনপ্রিয় হচ্ছিল বাংলা টাইপ রাইটার

বাংলা ব্যাপকহারে চালু করতে, অফিস-আদালতের কাজ বাংলায় সম্পন্ন করতে পূর্বশর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘বাংলা টাইপ রাইটার’। বাংলাদেশের যে টাইপ রাইটার দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত আছে,সেটা এমনভাবে সাজানো যে, তাতে মিনিটে ২০টির বেশি শব্দ লেখা যায় না। অনেক সময় নষ্ট হয়। আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে এই ‘কী বোর্ড’ পুনর্বিন্যাসের জন্য বেশ কয়েক বছর আগে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী। তিনি পূর্ব জার্মানির অপটিমা কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকে যে মেশিন ঠিক করেন, তাতে মিনিটে শব্দের গতি চল্লিশের বেশি হবে।

/এমআর/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
রাহমানের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’, ভিডিও করলেন মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
পদোন্নতি পেলেন বিএনপির তিন নেতা
পদোন্নতি পেলেন বিএনপির তিন নেতা
নিয়ম ভাঙায় পয়েন্ট কাটা গেলো নটিংহ্যাম ফরেস্টের
নিয়ম ভাঙায় পয়েন্ট কাটা গেলো নটিংহ্যাম ফরেস্টের
আজকের আবহাওয়া: সব বিভাগেই ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস 
আজকের আবহাওয়া: সব বিভাগেই ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস 
রাফাহতে হামলা ভুল হবে, নেতানিয়াহুকে বাইডেনের সতর্কবার্তা
রাফাহতে হামলা ভুল হবে, নেতানিয়াহুকে বাইডেনের সতর্কবার্তা
সর্বাধিক পঠিত
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা