X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

যৌন হয়রানি বন্ধে ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইসের’ ব্যবহার চান বিচারপতি খায়রুল হক

বাহাউদ্দিন ইমরান
০৮ মার্চ ২০২০, ১৩:০০আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২০, ১৭:২৪

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক

আইন প্রয়োগ করে অপরাধীদের সাজা দেওয়া সত্ত্বেও দেশে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের মতো অপরাধ দিন দিন বাড়ছে। তাই এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাইকোর্ট স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষামূলক যন্ত্র ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ সরবরাহের বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের ওই নির্দেশের আলোকে দেশে এ ধরনের ডিভাইস সরবরাহ করা হলে ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রানির মতো অপরাধের মাত্রা কমবে বলে মনে করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া বিশেষ সাংক্ষাৎকারে তিনি ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: নারীর সমতায়নে এখনও আমরা কতটা পিছিয়ে?

এবিএম খায়রুল হক: সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারীর সমতায়নে আমরা অনেকটাই অগ্রসর হতে পেরেছি। ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত নারীদের অগ্রগতি দেখবার মতো। বিশেষ করে বিগত ১০ বছরে এই সমতায়নের বিষয়ে আমরা অনেকটাই এগোতে পেরেছি। ১৯২০ সালে আমেরিকায় এবং ১৯২৬ সালে ইংল্যান্ডের নারীরা তাদের ভোটাধিকার অর্জন করেছিল। অথচ আমাদের নারীরা অনেক কিছুতে পিছিয়ে থাকলেও ভোটাধিকার কিন্তু ভোট ব্যবস্থার শুরু থেকেই প্রয়োগ করে আসছে। নারীর সমতায়নের দিকটি দেখলে বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণও বহুলাংশে বেড়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন:  নারী নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়ন নাকি আইন প্রয়োগের শূন্যতা রয়েছে?

এবিএম খায়রুল হক: এ বিষয়ে আমাদের নতুন আর কোনও আইনের প্রয়োজন নেই। যথেষ্ট আইন রয়েছে। এখন এসব আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি।

বাংলা ট্রিবিউন:  নারী নির্যাতন মামলার দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া অপরাধীদের মনে কী ধরনের বার্তা দিচ্ছে?

 

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক

এবিএম খায়রুল হক: বার্তা অবশ্যই দিচ্ছে। বিচার বিলম্ব হওয়ায় অনেক সময় সাক্ষী পাওয়া যায় না, বা সাক্ষীরা সাক্ষ্য দেওয়া নিয়ে স্মৃতিগত সমস্যায় পড়েন। এদিকে বিচার বিলম্বিত হওয়ায় অনেক সময় আসামি পক্ষ সাক্ষী বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখাতে সক্ষম হয়। এসব বার্তার কারণেই নারী নির্যাতনের মামলায় সাজার হার খুবই নগণ্য।

বাংলা ট্রিবিউন:  আমাদের দেশে নারী নির্যাতন মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তদের সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে কী কী কারণ রয়েছে বলে মনে করেন?

এবিএম খায়রুল হক: তদন্তকারী সংস্থা বা এ বিষয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ানো ও উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রসিকিউশনকে শক্তিশালী করা এবং বিচারক নিয়োগের সংখ্যা বাড়ানো খুব জরুরি। নয়তো অপরাধীরা তদন্তের বা প্রসিকিউশনের দুর্বলতার ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাবে। এই মুহূর্তে আমাদের দেশে পাঁচ হাজার বিচারক প্রয়োজন,কিন্তু আছে মাত্র এক হাজার ৬০০ জন। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী নির্যাতন মামলার নিষ্পত্তিও সময় সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।

বাংলা ট্রিবিউন:  নারী নির্যাতন বন্ধে আইনের প্রয়োগ, নাকি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ওপর দেশের নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ?

এবিএম খায়রুল হক: আমাদের সমাজে ভিকটিমকেই সবাই দোষারোপ করতে থাকে। এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বদলাতে হবে। বিশেষ করে যারা যৌন হয়রানির অপরাধে অপরাধী— তারা বিকৃত যৌন মানসিকতায় ভোগে। মানসিক, সামাজিক, মাদক বা ইন্টারনেটের অনৈতিক ব্যবহার এ ধরনের অপরাধকে প্রবৃত্তি করে। উন্নত দেশের মিডিয়াগুলোতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবস্থা রয়েছে। এতে করে শিশুরা অনেক পর্নোগ্রাফি বা বিকৃত বিষয় দেখতে পায় না। এটি আমাদের দেশেও করা যেতে পারে। 

বাংলা ট্রিবিউন:  দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। এর পেছনে কি ‍দৃশ্যমাণ বিচারের অভাব রয়েছে? কিংবা বিচারহীনতাও কি এর জন্য দায়ী নয়?

 

এবিএম খায়রুল হকের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদক বাহাউদ্দিন ইমরান

এবিএম খায়রুল হক: সরকার ধর্ষণ বা যৌন হয়রানি বন্ধে চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু তা শুধু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের দেশে এখনও নারীরা নির্বিগ্নে চলাচল করতে পারে না। তাই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপদকালীন পন্থা হিসেবে আমাদের দেশে ইংল্যান্ডের মতো ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইসের’ অ্যালার্ম ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ধরনের ইমার্জেন্সি অ্যালার্মের ফলে মেয়েরা অনেকাংশে আশপাশের মানুষের সহযোগিতা সহজেই পেতে পারবে। আমাদের চারপাশ যতক্ষণ না নিরাপদ করতে পারছি, ততদিন পর্যন্ত এসব ডিভাইসের সরবরাহ করা উচিৎ। এবং এসব ডিভাইস ট্যাক্স ফ্রি এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা উচিৎ।

বাংলা ট্রিবিউন:  আগামী আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আগে দেশে কোন বিষয়টির বিশেষ পরিবর্তন চান?

এবিএম খায়রুল হক: সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো না পর্যন্ত নারীদের আত্মরক্ষার শক্তি বাড়াতে হবে। পুলিশ বা অন্য কেউ তাকে রক্ষা করতে না আসা পর্যন্ত, হয়রানকারীকে প্রতিহত করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। এর ফলে অপরাধী সহজেই তার অপরাধমূলক কাজ করতে বাধাপ্রাপ্ত হবে এবং এতে সময় ক্ষেপণ হবে। ফলে ওই সময়ের মধ্যে কেউ নিশ্চয়ই মেয়েটিকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে। এজন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদের আত্মরক্ষার ক্ষমতা বাড়ানোর চর্চা করানো উচিৎ। মানসিক দিক দিয়ে মেয়েরা যত সমৃদ্ধ হতে পারবে, তারা মানসিকভাবে ততটাই সাহসি হয়ে উঠতে পারবে।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

 

 



 



/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে বাস উঠে পড়লো রেললাইনে, ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার
ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে বাস উঠে পড়লো রেললাইনে, ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…