করোনার কারণে অনুষ্ঠান করার সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করছে। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) সকাল বেলায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের সূচনার পরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়া এ উপলক্ষে দেওয়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। মিশনগুলোতে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় ও রাজনৈতিক জীবনের ওপর আলোকপাত করে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।
দিল্লিতে অনুষ্ঠান ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ ইমরান আলম আলোচনা সভায় বলেন, ‘আততায়ীর হাতে বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু তার দর্শন ও জীবনাদর্শ সবসময়ে বাঙালি জাতিকে উজ্জ্বীবিত করবে।’
জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মিশনে শিশুদের চিত্রাঙ্কান ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ওই মিশন বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ওপরে একটি কফিটেবিল বই প্রকাশ করবে বাংলাদেশ মিশন।
কলম্বোয় আলোচনা শ্রীলঙ্কাতে বাংলাদেশ মিশন বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর আলোকপাত করে রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ সবাইকে ‘সোনার বাংলা’ গঠনের জন্য বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার আহ্বান জানান।
জন্মশতবার্ষিকীর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আগামী ২২ মার্চ বাংলাদেশ দূতাবাস শ্রীলঙ্কার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে একশ শিশুকিশোরকে কলম্বোতে সমবেত করছে, যারা প্রত্যেকে ক্যান্সারে তাদের পিতা-মাতা হারিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার ক্যান্সার কেয়ার সংগঠনের সহযোগিতায় ওই অনুষ্ঠানে ১০০ শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তাদের আগামী এক বছরের শিক্ষা খরচের একাংশ।
এদিকে, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসেও বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযোগ্য মর্যাদায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে।
প্যারিসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ ও তার কর্মময় সংগ্রামী জীবনের ওপর আলোচনা করেন । তিনি বলেন, পুরো বিশ্বের পাশাপাশি ফ্রান্সও এখন করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। এ সংকটকালে জনসমাগমের ওপর বিধিনিষেধ এবং প্রবাসীদের সুরক্ষার স্বার্থে দূতাবাস সকল অনুষ্ঠান স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়ে প্যারিসে ও ইউনেস্কো সদর দফতরে বিভিন্ন আয়োজনে মুজিববর্ষ যথাযথ আড়ম্বরে পালন করতে দূতাবাস সক্ষম হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, দূতাবাসের পূর্ব নির্ধারিত সেমিনার ও শিশু কিশোর উৎসব স্থগিত করে ঘরোয়া আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
এছাড়াও সৌদি আরবে মুজিববর্ষের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন দেশটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ। পরে দিবসটি উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের জন্য দোয়া কামনা করে মোনাজাত করা হয়। দেশ ও জাতির অগ্রগতি কামনা করা হয়। বাংলাদেশীসহ সকল মুসলমানদের করনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্যও বিশেষ দোয়া করা হয়।
এছাড়াও শ্রীলঙ্কায় মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে কলম্বো মিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সুইজারল্যান্ডে রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান দূতাবাস প্রাঙ্গণে আয়োজিত আলোচনা সভায় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথ পরিক্রমায় সংঘটিত বিভিন্ন রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণ নেতৃত্ব ও তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কথা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন।
তিনি বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শ বিশ্ব পরিমণ্ডলে যথাযথভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে বাঙ্গালি জাতিসত্তাকে বিশ্ব দরবারে সুপরিচিত করার জন্য বাংলাদেশি প্রবাসীদের সচেষ্ট থাকার অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে জেনেভায় বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন বছরব্যাপী কর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর ধারাবাহিকতায় সুইজারল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশি প্রবাসী এবং বিদেশি কূটনীতিকদের অংশগ্রহণে একটি আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষের উদ্বোধন করার পরিকল্পনা থাকলেও মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে সুইজারল্যান্ড সরকার সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করায় এ অনুষ্ঠানের আকার ও প্রকৃতিতে পরিবর্তন করে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
চীনে করোনা ভাইরাসের কারণে সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করার পরিপ্রেক্ষিতে দূতাবাসে সংক্ষিপ্ত আকারে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামান তার বক্তব্যে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত ও শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক অবদানের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশের সংবিধানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে।’