X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সবাই সচেতন থাকুন: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২১ মার্চ ২০২০, ১৩:১৮আপডেট : ২১ মার্চ ২০২০, ১৪:০০

সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী (ছবি: ফোকাস বাংলা) করোনা ভাইরাস সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সবাইকে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। হাঁচি, কাশি আসলে কাপড় দিয়ে নাক ঢেকে রাখতে হবে বা কনুই দিয়ে হাতটা ঢেকে রাখতে হবে। যেখানে-সেখানে যাওয়া যাবে না। আর বিদেশ থেকে যারা আসছেন তারা এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াবেন না। কারণ আপনি তো নিজে সংক্রমিত হতে পারেন, নিজের পরিবারকে করবেন, আবার আরও ১০ জনের মাঝে ছড়াবেন। কাজেই অন্যের জীবনকে এভাবে বিপদগ্রস্ত করা মোটেই সমীচীন নয়। সবাই এ ব্যাপারে সচেতন হবেন, এটাই চাই।’

আজ শনিবার (২১ মার্চ) সকাল ৯টায় রাজধানীর সিটি কলেজ কেন্দ্রে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর তিনি এসব কথা বলেন।  

জনগণ নৌকায় ভোট দেবে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনকে নৌকা মার্কায় আমি ভোট দিয়ে আসছি। আমরা চাই জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করুক। জনগণ নৌকায় ভোট দেবে। ইনশাআল্লাহ জয়যুক্ত হবো।’

একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে

তিনি বলেন, ‘এখন সারাবিশ্বে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।। বিশ্বের ১৮১টি দেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আর সেই অবস্থার মধ্যে এই নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে। যখন চীনে করোনা ভাইরাস দেখা দিলো, তখন থেকেই আমরা কিন্তু সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। সেখান থেকে ৩১৫ শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে এনে তাদের ১৪দিন কোয়ারেন্টিনে রেখে ছেড়েছি। যারাই বিদেশ থেকে আসছেন তাদের আমরা পরীক্ষা করছি। আর যার ভেতরে এতটুকু সন্দেহ আছে, তাকে কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি।’ সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন প্রধানমন্ত্রী (ছবি: ফোকাস বাংলা)

তিনি বলেন, ‘কীভাবে এই ভাইরাস থেকে আমরা জনগণকে মুক্ত রাখতে পারি, সেভাবে প্রতিদিনই এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া এবং তা প্রচারেরও ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইইডিসিআর এই ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক এবং তারা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছে। সেই দিক থেকে বলবো, বাংলাদেশ এখনও মোটামুটি ভালো আছে। তবে বিদেশ থেকে যারা আসছেন, তারা অনেক সময় এর বাহক হয়ে থাকেন। যারা বিদেশ থেকে আসছেন তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তারা নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য, সবার নিরাপত্তার জন্য ১৪টা দিন যাতে কোয়ারেন্টিনে থাকেন। তার মাধ্যমে যাতে তার পরিবারের সদস্য ও সাধারণ জনগণ কেউ যেন সংক্রমিত না হয়, সেই ব্যাপারে তাদের নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে।’

যখন যা প্রয়োজন হয় সেটা আমরা করে যাচ্ছি

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা কয়েকটি হাসপাতালও সুর্নিদিষ্ট করে দিয়েছি, যেখানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী হলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিচ্ছি। ডাক্তার, নার্সসহ ওখানে যারা কর্মরত আছেন তাদেরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা করছি। এছাড়া আমাদের দেশে প্রস্তুত করা মাস্কসহ নিরাপত্তার জন্য সবধরনের পোশাক আমরা অব্যাহতভাবে সংগ্রহ করে যাচ্ছি এবং দিচ্ছি। আমাদের ইমিগ্রেশনে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ও সেখানে আরও যারা কর্মরত আছেন সবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। সর্বোপরি নিরাপত্তার জন্য যখন যা প্রয়োজন হয় সেটা আমরা করে যাচ্ছি। কাজেই এদিক থেকে আমরা আমাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সতর্ক বার্তা দেওয়া হচ্ছে। আমি শুধু আশা করবো, আমাদের দেশবাসী যাতে এটা মেনে চলে। ইতোমধ্যে আপনারা জানেন আমাদের লোক সমাগম হয় এমন কর্মসূচি আমরা বাতিল করে দিয়েছি বা স্থগিত করে দিয়েছি। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করার জন্য অনেক কর্মসূচি আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে লোক সমাগম হবে বলে আমরা সেটাও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমরা যে এটাকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছি, সেটা আপনারা অনুধাবন করতে পারেন। আমরা তো জন্মশতবার্ষিকী একবারই পেলাম, আর তো পাবো না। কিন্তু তারপরও আমরা জনসাধারণের নিরাপত্তা, কল্যাণে এই কর্মসূচি স্থগিত করে রেডিও, টেলিভিশন আর অনলাইনে প্রচার করেছি। এছাড়া আগামীতেও যেসব অনুষ্ঠান আছে, যেখানে লোক সমাগম হয়, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেবো।’

২৬ মার্চ কর্মসূচি স্থগিত রাখতে হবে 

তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে ২৬ মার্চ সাভারে স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণের কথা। আমি আলোচনা করবো। আমরা মনে হয় সেটাও আমাদের স্থগিত রাখতে হবে। যারা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি আমরা নিজের মতো করে শ্রদ্ধা জানাবো। কিন্তু এই লোক সমাগমটা আমাদের বন্ধ করে দিতে হবে। এভাবে আমাদের যতগুলো অনুষ্ঠান আছে তা খুব সীমিত আকারে এবং যেখানে জনমাগম হবে তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে এই সংক্রামক রোগ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে না পড়ে।’

যতটুকু প্রয়োজন সেইটুকু আপনারা সংগ্রহ করেন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি কিছু লোক আতঙ্কগ্রস্ত। তারা সমানে খাবার জিনিস কিনে মজুত করছে। আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের খাদ্যদ্রব্যের কোনও সমস্যা নাই। এখনও ১৭ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য সরকারি গুদামেই মজুত আছে। সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন গম আমাদের মজুত আছে। এছাড়া আমাদের বেসরকারি রাইস মিলের কাছেও প্রচুর পরিমাণে খাদ্য মজুত আছে। এছাড়া সারা বাংলাদেশের বড় কৃষকদের কাছেও ধান, চাল মজুত আছে। তাছাড়া আমাদের ক্ষেতে ফসল আছে, কৃষক ফসল ফলাচ্ছে। তরকারি, শাক-সবজি আমাদের প্রচুর উৎপাদন হচ্ছে। আমাদের লবণ উৎপাদন প্রচুর হচ্ছে। একজনকে দেখলাম তিনি বলেছেন তিনি ৩০ কেজি লবণ কিনে রেখেছেন, এটা কতদিন খাবেন তা আমি জানি না। সেটা দিয়ে তিনি কী করবেন। আর পেঁয়াজের একবার দাম বাড়ার ফলে অনেকে প্রচুর পেঁয়াজ কিনে মজুত করেছিলেন। ফলাফল এই হয়েছিল যে পেঁয়াজগুলো পচে যাওয়াতে তা ফেলে দিতে হয়েছিল।’ সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন প্রধানমন্ত্রী (ছবি: ফোকাস বাংলা)

‘আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে যার যতটুকু প্রয়োজন সেইটুকু আপনারা সংগ্রহ করেন। এ কারণে বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হলে বাজার জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে যার টাকা আছে সে হয়তো কিনতে পারছেন, কিন্তু যারা সীমিত আয়ের তাদের জন্য তো এত কেনা সম্ভব না, তাদের কষ্ট হয়ে যায়। অন্যকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার অধিকার কারও নাই। সেক্ষেত্রে আমি বলবো, আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে এটা নজরদারিতে রাখা উচিত। সাধারণ মানুষের প্রতিও আহ্বান জানাবো আপনারা নজরদারিতে রাখেন। অহেতুক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, জিনিসপত্রের মজুত কারোই করা উচিত না। কাজেই সবাই স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারেন। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে, সবই আছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী, অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সবার সঙ্গে বসেছি। আমাদের যে রিজার্ভ আছে তাতে আগামী এক বছরের খাবার কেনার মতো সামর্থ্য আমাদের রয়েছে। কাজেই সেই দিক থেকেও দুশ্চিন্তা করার কোনও কারণ নাই।’

তিনি বলেন, ‘যারা গ্রামে যাচ্ছেন তারা একটা কাজ করতে পারেন। নিজের মাটি আছে, তাতে ফসল ফলান। তরকারি লাগান। সবাই ভিটামিন সি বেশি করে খাবেন। এখন ভিটামিন সি’র অনেক কিছুই বাজারে আছে। টমেটো, কমলালেবু, মৌসুমি ফল, টক জাতীয় ফল বেশি বেশি খাওয়া। এটা প্রচুর খেলে করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধক শক্তি শরীরের মাঝে জমা হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাইরে ঘোরাঘুরি না করে যতদূর সম্ভব নিজের ঘরে থাকুন। আর নিজেকে, পরিবার ও সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখুন। সেটাই আমি আশা করি। সবাই ঘরে বসেই দোয়া করেন। এই ধরনের একটা রোগ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, স্থবির হয়ে পড়েছে, তা থেকে যেন মানব জাতি মুক্তি পায় তার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’

আরও পড়ুন- 

ভোট দিলেন প্রধানমন্ত্রী 

 

/ইএইচএস/এফএস/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা