করোনাভাইরাসের কারণে দেশে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার থেকে সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ হলো। লঞ্চ, রেল ও বিমান চলাচল আগে থেকেই বন্ধ। ফেরিতে করে যান ও সাধারণ যাত্রী পারাপার চলছে সীমিত পরিসরে। রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব জেলায় রাস্তায় লোক চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে রাজপথ যেন পরিণত হয়েছে বিরানভূমিতে।
আজ নগরীর টার্মিনালগুলো থেকে কোনও পরিবহন ছেড়ে যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও কোনও পরিবহন ছেড়ে আসছে না। একসঙ্গে দুই জন চলাচলও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর এ কারণেই ঢাকা এখন একেবারেই ফাঁকা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সারা দেশের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ২৪ মার্চ সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক ভিডিও বার্তায় আজ ২৬ মার্চ থেকে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেন। সরকারের এমন ঘোষণার পর আজ সকাল থেকে কোনও ধরনের পরিবহন চলাচল করছে না। নগরীর সড়কগুলোও জনমানবশূণ্য অবস্থায় রয়েছে।
সকালে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, ফুলবাড়িয়া, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে কোনও বাস ছেড়ে যায়নি। এসব টার্মিনালের শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ এরই মধ্যে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। যারা ঢাকায় রয়েছেন তারা টার্মিনালগুলোতে রান্না করে খাচ্ছেন।
সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস-মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকাল থেকে একটি বাসও ছাড়া হচ্ছে না। রাস্তাঘাটে কোনও লোকজন নেই। এমন পরিবেশ আর কখনও হয়নি। আমাদের টার্মিনালের শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছে। এখন আমি তাদের রান্না করার ব্যবস্থা করছি। গরিব এই শ্রমিকদের পাশে যেন সবাই এগিয়ে আসে সেজন্য আমি সরকার ও বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
একা অবস্থা গাবতলী টার্মিনালেও। জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোহাগ পরিবহনের পরিচালক মারুফ তালুকদার সোহেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একটি পরিবহনও চলছে না। যাত্রীও নেই। একই চিত্র দেখা গেছে ফুলবাড়িয়া, মহাখালীসহ রাজধানীর অন্যান্য পরিবহন টার্মিনালগুলোতে।’
নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) থেকে দেশের সব রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই সদরঘাট থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। টার্মিনালেও জনশূন্যতা বিরাজ করছে। আমরা কোনও লঞ্চ চলতে দিচ্ছি না। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকরাও অনেক সচেতন রয়েছে।’
গত ২৪ মার্চ থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সব রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য যাত্রীবাহী রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে সকাল থেকে কমলাপুর স্টেশন থেকে কোনও ট্রেন ছাড়া হয়নি। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ রয়েছে।’
এদিকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বিমান যোগাযোগও প্রায় বন্ধ রয়েছে। তবে চীন ও লন্ডনের সঙ্গে যোগাযোগ স্বাভাবিক আছে।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম।
আরও পড়ুন-
সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ
দেশ ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে যাচ্ছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী