X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাল চুরি: নজরদারির অভাবের সুযোগ নিয়েছে অপরাধীরা

শফিকুল ইসলাম
২১ এপ্রিল ২০২০, ২৩:০২আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২০, ২৩:৩৮

চাল চুরি: নজরদারির অভাবের সুযোগ নিয়েছে অপরাধীরা বিতরণ পর্যায়ে নজরদারির অভাবে অপরাধীরা চাল চুরির সুযোগ নিয়েছে মনে করছে খাদ্যবান্ধব (ওএমএস) কর্মসূচির চাল চুরির ঘটনায় গঠিত সরকারি তদন্ত কমিটি। এ সমস্যা নিরসনে বিতরণ পর্যায়ে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটির সব সদস্যদের, বিশেষ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সশরীরে বা তাদের প্রত্যেকের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থেকে কার্যক্রমে নজরদারি বাড়ানোসহ ১২টি সুপারিশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটি ইতোমধ্যে তাদের প্রতিবেদন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে অনলাইনে জমা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) চাল আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মজিবুর রহমানকে আহ্বায়ক, অতিরিক্ত সচিব মো. তাহমিদুল ইসলাম ও যুগ্ম-সচিব মো. হাবিবুর রহমান হোছাইনীকে সদস্য করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কমিটিকে খাদ্য কর্মসূচি পরিচালনার জন্য প্রণীত নীতিমালা পর্যালোচনা ও মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ ও সুনির্দিষ্ট সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

তদন্ত কমিটি ১৪ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত এই তিন দিন বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকসহ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে একটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে, যা গত ১৭ এপ্রিল ই-মেইলের মাধ্যমে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুমের কাছে পাঠানো হয়। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে অফিস আদালত খুললে তা লিখিতভাবে দাখিল করা হবে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, আমরা তদন্ত শেষ করে প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন সচিব বরাবর দাখিল করেছি। তবে কমিটির তিন জন একসঙ্গে বসতে পারলে প্রতিবেদনটি আরও উন্নত হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা এ কাজটি টেলিফোনেই সেরেছি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা তিন জন একসঙ্গে বসে প্রতিবেদনটি পুরোপুরি তৈরি করবো এবং তা লিখিতভাবে জমা দেবো।

অতিরিক্ত সচিব মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, সরকারের এ কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সম্পৃক্ত করে জেলা, উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করে দেওয়া আছে। তদন্তে দেখা গেছে, বেশিরভাগ স্থানেই স্থানীয় এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন কার্যক্রমের বিষয়ে নজরদারির ক্ষেত্রে অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের নজরদারির অভাবেই দুর্নীতিবাজরা চুরির সুযোগ নিয়েছে। মাঠপর্যায়ে কঠোর নজরদারি থাকলে এমন ঘটনা ঘটতো না। তাই আমরা আমাদের সুপারিশে এ কর্মসূচিতে মনিটরিংয়ের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ওএমএস-প্রাপ্তদের বিদ্যমান তালিকাটি ২০১৬ সালে তৈরি করা। সেখানেও নানা প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। সেটি আপডেট করা হয়নি। অপরাধীরা এ সুযোগও নিয়েছে। সে কারণে আমরা তালিকাটি হালনাগাদ করারও সুপারিশ করেছি। তিনি জানান, আমরা তিন জন একসঙ্গে বসতে পারলে আরও কিছু ফাইন্ডিংস বের করা সম্ভব হবে।

খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম জানিয়েছেন, আত্মসাতের সব অভিযোগ সঠিক নয়। তবে যেহেতু মামলা হয়েছে, সেহেতু মামলার তদন্তেই বেরিয়ে আসবে কারা কারা এসবের সঙ্গে জড়িত বা কী পরিমাণ চাল চুরি বা আত্মসাৎ হয়েছে। সারা দেশে এ সংক্রান্ত ৩৯টি মামলা হয়েছে জানিয়ে খাদ্য সচিব বলেন, চালের বস্তায় ‘খাদ্য অধিদফতর’ লেখা মানেই এই চাল ওএমএস কর্মসূচির না। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গুদাম থেকে দেশের বিভিন্ন বাহিনীর রেশনের চালও যায়। সেসব বস্তায়ও ‘খাদ্য মন্ত্রণালয়’ লেখা থাকে। আবার সরকারের কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির কাজও করা হয় চাল বিক্রির টাকা দিয়ে। সেই চালের বস্তায়ও ‘খাদ্য মন্ত্রণালয়’ লেখা থাকে। কাজেই ‘খাদ্য মন্ত্রণালয়’ লেখা চালের বস্তা মানেই চুরি করা চাল না। কারণ, ওই সব চাল বস্তা ধরেই বিক্রি করে দেওয়া হয়, যা কোনও না কোনও ব্যবসায়ী কিনে নেন। অনেকেই শত্রুতার জেরেও সেই চালকে চুরি করা চাল বলে পুলিশে বা র‌্যাবে ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আমরা এ সিস্টেমটি বদলানোর জন্য কাজ করছি। আশা করছি আগামী ৩ মাসের মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করা সম্ভব হবে। এতে অনিয়ম দূর হবে। একইসঙ্গে সরকারি চালের বস্তায় কোন কর্মসূচির চাল বা কোন বাহিনীর রেশনের চাল তা লিখে দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। যদিও বিষয়টি আর্থিক এবং সময় সম্পর্কিত।

সচিব জানান, ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনায় নজরদারি বাড়ানোর বিকল্প নেই। কমিটির সবাই যদি নজরদারি বাড়ায় তাহলে এমন অভিযোগ আর থাকবে না।

উল্লেখ্য, ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি পরিচালনার জন্য যথাক্রমে ২০১৫ সালে প্রণীত ওএমএস নীতিমালা ও ২০১৭ সালে প্রণীত খাদ্যবান্ধব নীতিমালা রয়েছে। বিশেষ ওএমএস পরিচালনার জন্য আরও কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। বর্ণিত নীতিমালাগুলোতে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির খাদ্যশস্য বিক্রি, বিতরণ ও তদারকির বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও নির্দেশনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারির পরও কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১০ টাকা কেজি দরের বিশেষ ওএমএসের চাল এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে। বর্তমানে কর্মসূচিটি স্থগিত রয়েছে। এসব আত্মসাতের ঘটনায় ২৪ জন জনপ্রতিনিধিকে সাসপেন্ড করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছেন ১৮ জন। তাদের মধ্যে দুজন ক্ষমতাসীন দলের নেতাও রয়েছেন বলে জানা গেছে।

/এসআই/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন