(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ১৩ জুলাইয়ের ঘটনা।)
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৭২ সালের ১৩ জুলাই জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করা হয়। আবদুর রবের নেতৃত্বে গঠিত দশম জাতীয় বেতন কমিশন গঠনের কথা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি জাতীয় বেতন কমিশন গঠনের নির্দেশপত্রে স্বাক্ষর করেন। বেতন কমিশন ছয় মাসের মধ্যে প্রতিরক্ষা সার্ভিসসহ সকল সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো সরকারের কাছে পেশ করবে বলেও জানানো হয়।
নবগঠিত এই জাতীয় বেতন কমিশন সরকারের বিঘোষিত সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যের প্রতি দৃষ্টি রেখে এবং দেশে এক নতুন সমাজ গড়ে তোলার জন্য সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বর্তমান বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করবেন বলে জানানো হয়। তারা প্রতিরক্ষা সার্ভিসসহ দেশের সকল সরকারি কর্মচারীদের একটি যুক্তিসঙ্গত বেতন কাঠামো পেশ করবেন।
মুজিব জাতির একমাত্র ভরসা
মুজিব জাতির একমাত্র ভরসা। আমি তাকে ভালোবাসি। দোয়া করি তার যেন কোনও অঘটন না ঘটে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিলের নিকট ন্যাপ প্রধান মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আবেগজড়িত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এই কথাগুলো বলেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুধবার বিকালে ভাসানীর বাসভবনে সাক্ষাৎ করতে যান। এই সময় মাওলানা বলেন, আমি মুজিব ও অন্যদের নিয়ে আট বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি। আমি তাদের সকলের মঙ্গল কামনা করি।
ভাসানী বলেন, দুষ্টু লোকেরা এখনও দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত। তিনি সরকার ও জনগণকে ওই ধরনের লোকদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলে আশ্রয় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অপব্যবহার এবং মজুতদার, কালোবাজারি ও অন্যান্য সমাজবিরোধী অপরাধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে। মালেক উকিলের সঙ্গে কথাবার্তার সময় মাওলানা ভাসানী তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক মনোভাব ছড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন। সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন যে তিনি গোড়া নন; বরং একজন উদার মনোভাবের মুসলমান।
ইতিহাস লিখতে কমিটি গঠন
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে তথ্য ইতিহাস রচনা ও প্রকাশনা ব্যবস্থা করার জন্য ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। সরকারের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিচালক ড. মযহারুল ইসলাম কমিটির সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সফর আলী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর যথাক্রমে সম্পাদক, সহ-সম্পাদক নিযুক্ত হন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে কমিটির সদস্যদের এই দিনে নাম ঘোষণা করা হলেও সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস রচনার জন্য ইতিপূর্বে বাংলা একাডেমিকে ২ লাখ টাকা মঞ্জুর করে। এছাড়া প্রয়োজন হলে এই ব্যাপারে আরও টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ
বিশিষ্ট ছাত্রলীগ নেতা শহীদ বুলবুল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুস সাত্তার লালুকে ১৩ জুলাই প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পরের দিন সকল স্কুল-কলেজে ধর্মঘট পালন হয়, দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন ও ডেপুটি কমিশনারের মাধ্যমে পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানান। এই তথ্য প্রকাশ করে ডেপুটি কমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু পাবনার জনগণকে শান্তিরক্ষার আবেদন জানিয়েছেন এবং দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।