X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

বেবিচকের অনীহায় রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সে নেই কাস্টমসের প্রবেশাধিকার

চৌধুরী আকবর হোসেন
১৬ অক্টোবর ২০২০, ১০:০০আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২০, ১৫:১৯

বেবিচকের অনীহায় রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সে নেই কাস্টমসের প্রবেশাধিকার কাস্টম আইন অনুসারে হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম এলাকায় দায়িত্ব পালনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা কাস্টম হাউজ। বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন ও আমদানি কার্গো ভিলেজে দায়িত্ব পালন করলেও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সহযোগিতা না পাওয়ায় রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সে ঢুকতে পারছেন না শুল্ক কর্মকর্তারা। ফলে রফতানি কার্গো এলাকা কাস্টমসের নজরদারির বাইরে থাকায় মিথ্যা ঘোষণায় রফতানি, রফতানি নিষিদ্ধ পণ্য রফতানি, মুদ্রাপাচারের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সের স্ক্যানিং মেশিন রুমে শুল্ক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে সহায়তা চেয়ে বিমানবন্দরের পরিচালক ও বেবিচক চেয়ারম্যানকে একাধিকবার চিঠি দিয়েও কোনও সুরাহা করতে পারেনি ঢাকা কাস্টম হাউজ। কাস্টমসের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সাল থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরের রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সের স্ক্যানিং মেশিন রুমে শুল্ক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়ে আসছে ঢাকা কাস্টম হাউজ। শুরুতেই রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সের স্ক্যানিং মেশিন রুমে প্রবেশে বাধাগ্রস্ত হন শুল্ক কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে প্রবেশের সুযোগ মিললেও স্ক্যানিং মেশিন রুমে তাদের বসার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। বিমানবন্দরের পক্ষ থেকে চেয়ার সরবরাহ না করায় কাস্টম হাউজ নিজস্ব উদ্যোগে চেয়ার আনার ব্যবস্থা করে। কিন্তু সেই চেয়ার রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সে প্রবেশ ও স্ক্যানিং রুমে রাখার অনুমতি দেয়নি বিমানবন্দরের পরিচালক। এ বিষয়ে সুরাহা করতে একাধিকবার বিমানবন্দরের পরিচালক, বেবিচক চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়। রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সে প্রবেশ ও স্ক্যানিং রুমে বসার অনুমতি না থাকায় দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না শুল্ক কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, কাস্টম অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর সেকশন ২ (i) অনুযায়ী, রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সটি মূলত একটি কাস্টম এলাকা। এ আইনের সেকশন ৪ অনুসারে সেই এলাকায় দায়িত্ব পালনের জন্য শুল্ক কর্মকর্তাদের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তারা সেখানে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সে বেবিচকের নিরাপত্তা কর্মীরাই স্ক্যানিং মেশিন অপারেট করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শুল্ক কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দরে বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে। বেবিচকের স্ক্যানিং মেশিন অপারেটররা নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নজরদারি করেন। কোন চালানে পান আছে, সেটা নিরাপত্তার দৃষ্টিতে কোনও বাধা নয়, বেবিচকের নিরাপত্তাকর্মীরা তা আটকাবেন না। কিন্তু সরকার পান রফতানি নিষিদ্ধ করলে সে বিষয়টি কাস্টমকে অবহিত করে এবং পান যেন রফতানি না হয়, সেটি মনিটরিংয়ের দায়িত্ব কাস্টমসের। একইভাবে ইলিশ মাছ বেবিচকের নিরাপত্তা কর্মীদের নজরে বিপজ্জনক নয়, তবে রফতানি নিষিদ্ধ হওয়ায় তা কেউ রফতানি করেছ কিনা, সেটা দেখার দায়িত্ব কাস্টমসের। কিন্তু কাস্টম যদি স্ক্যানিং মেশিন মনিটরিং করতে না পারে, এ বিষয়গুলো নজরদারি সম্ভব হবে না।
হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্ক্যানিং মেশিন পরিচালনা করতো। এ কারণে ২০০৭ সালের ২৩ মার্চ বিমানবন্দরের তৎকালীন পরিচালক কাস্টম হাউজকে স্ক্যানিং মেশিনরুমে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানায়। যদিও পরবর্তীতে পরিচালক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই সিদ্ধান্ত বদলে যায়।

বেবিচকের অনীহায় রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সে নেই কাস্টমসের প্রবেশাধিকার
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুল্ক কর্মকর্তারা রফতানি কার্গোতে প্রবেশে বাধাগ্রস্ত হলে বিষয়টি সুরাহা করতে তারা কাস্টম কমিশনারকে অবহিত করেন। কাস্টম হাউজের রফতানি পরীক্ষা ইউনিটের সহকারী কমিশনার নাছির আহাম্মদ ২০১৮ সালের ৭ জুলাই কমিশনারকে চিঠি দিয়ে জানান, রফতানি কার্গোতে প্রবেশ করতে গেলে সেখানে দায়িত্বরত সিকিউরিটি অফিসার (ডিএসও) জানিয়েছেন, প্রবেশের ক্ষেত্রে বিমানবন্দরের পরিচালকের অনুমতি লাগবে। ২০০৭ সালের বিমানবন্দর পরিচালকের একটি চিঠি দেখানো হলে ডিএসও নাসিমা আক্তার জানান, ২০০৭ সালের পরিস্থিতি আর বর্তমান পরিস্থিতি এক নয়। ২০০৭ সালে স্ক্যানিং মেশিন পরিচালনা করতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বর্তমানে বেবিচকের নিজস্ব কর্মীরা সেই কাজ করেন। ফলে স্ক্যানিং মেশিনের কার্যক্রম তদারকি করতে হলে বিমানবন্দর পরিচালকের অনুমতি প্রয়োজন। বিমানবন্দরের পরিচালকের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিতে ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনারকে চিঠি দিতে অনুরোধ করেন সহকারী কমিশনার নাছির আহাম্মদ।
২০১৮ সালের ১ অক্টোবর কমিশনারের পক্ষে রফতানি পরীক্ষা ইউনিটের সহকারী কমিশনার জুলফিকার আলী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠি দেন। সেখানে বলা হয়, স্ক্যানিং মেশিন রুমে বসার কোনও ব্যবস্থা নেই। কাস্টম হাউজ থেকে চেয়ার সরবরাহ করা হবে। সেগুলো কার্গো কমপ্লেক্সে প্রবেশ ও স্থাপনের বিষয়ে সিকিউরিটি ম্যানেজারকে নির্দেশ দিতে অনুরোধ করা হলো।
সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠি লিখে কোনও সুরাহা না পেয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন কাস্টম কমিশনারের পক্ষে অতিরিক্ত কমিশনার মো. তাসনিমুর রহমান। ওই চিঠিতেও উল্লেখ করা হয়, রফতানি পরীক্ষা ইউনিটে স্ক্যানিং মেশিনে দায়িত্ব পালনের জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা না থাকায়, কাস্টম হাউজ থেকে চেয়ার সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই চেয়ারগুলো কার্গো ভিলেজে প্রবেশ ও স্থাপনের ব্যবস্থা করতে সিকিউরিটি ম্যানেজারকে নির্দেশ প্রদানের জন্য বিমানবন্দরে পরিচালককে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নিতে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর কাস্টম হাউজের কমিশনারের পক্ষে পুনরায় অনুরোধ জানিয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধ জানান অতিরিক্ত কমিশনার তাসনিমুর রহমান।
ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বেবিচককে জানিয়েছি। তারাও একটি সরকারি সংস্থা, আমরাও সরকারি সংস্থা। সরকারের রাজস্ব আয় সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা আশা করছি, সরকারি দায়িত্ব পালনে আমরা বেবিচকের সহায়তা পাবো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রফতানি কার্গোতে প্রাথমিকভাবে কী মালামাল যাচ্ছে, তা কাস্টম থেকে ক্লিয়ারেন্স নিয়েই আসে। এখানে কাস্টমসের অফিসও আছে। কাস্টম চাচ্ছে সিকিউরিটি স্ক্যানিংয়ের সময় থাকতে। এক সংস্থার কাজে যদি অন্য সংস্থা ইন্টারফেয়ার করে তখন কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এক্ষেত্রে সময়ও বেশি লেগে যাবে। এই জায়গায় একটা কনফ্লিক্ট কাজ করছে। আশা করি, কনফ্লিক্ট থাকবে না, যদি আমরা যার যার কাজ ঠিক মতো করি।’
মফিদুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে যা ডিক্লিয়ার করা হয়েছে, এর বাইরে কোনও পণ্য ধরা পড়লে কাস্টমসকে ডাকা হয়। তারা (কাস্টম) চাচ্ছে নিজেরাও সম্পৃক্ত থাকতে। এটা নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব আছে, তবে এ দ্বন্দ্ব যুক্তিযুক্ত না। কারণ, কাজগুলো একটা প্রসিডিউরের মাধ্যমে আমরা করছি। আমাদের বর্তমান প্রক্রিয়া ঠিকই আছে। ভবিষ্যতে যদি কাস্টমকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা আসে, তখন আমরা সবার সঙ্গে বসে বিষয়টি দেখবো।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন