X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজে অসমতা বেড়ে যাচ্ছে: মেনন

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১০ নভেম্বর ২০২০, ২১:৪৪আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২০, ০০:৫৯

 

রাশেদ খান মেনন মুজিববর্ষে সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ হলে শোষিতদের পক্ষে আমাদের দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এই কোভিডকালেও উন্নয়নের পথে দেশ থাকলেও সমাজে অসমতা বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গরিব মানুষ আরও গরিব হচ্ছে। কোটিপতি ধনাঢ্য হচ্ছে। করোনার ভ্যাকসিন নিয়েও ব্যবসায়িক স্বার্থসিদ্ধি হয়েছে। এর বিরুদ্ধে না দাঁড়াতে পারলে মুজিববর্ষে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আমাদের হবে না।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে আনা সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানাতে ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কেবল আওয়ামী লীগের নয়। বঙ্গবন্ধু কেবল দলের নয়। বঙ্গবন্ধু জাতির। তিনি জাতির পিতা।’

বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে এই বাম নেতা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রতিটি ইতিহাস হচ্ছে সংগ্রামের ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে তিনি ধাপে ধাপে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান। পরবর্তীকালে একটি ধ্বংসস্তূপের দেশকে তিনি পুনর্গঠন করেছিলেন, দেশকে নিয়ে গিয়েছিলেন একটি অনন্য উচ্চতায়।’

ইতিহাস বিকৃতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এরশাদ ও খালেদার আমলে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসকে বিস্মৃতির ইতিহাসে তলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস ফিরিয়েই কেবল আনেননি, এখন আরও অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়েছে।’

একসময়ের বঙ্গবন্ধুবিরোধী রাজনীতিক মেনন খান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু এই সংসদে দাঁড়িয়ে কেবল সংবিধান প্রদান করেননি, তিনি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার পথনির্দেশ দিয়েছিলেন। এটা ছিলে আমাদের জাতির মূল লক্ষ্য। যেটাকে ঝেটিয়ে বিদায় করা হয়েছিল জিয়াউর রহমানের আমলে ও এরশাদের আমলে। এরপর পঞ্চদশ সংশোধনীতে এটি পুনর্বহাল করা হলেও আমি একটি কথা বলতে চাই—এই দুটি বিষয়ে আমাদের ভাববার সময় আছে। এটা কি আমরা শুধু কাগজে রাখবো? নাকি বাস্তবে পরিণত করবো? আজকে মুজিববর্ষে এটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যখনই আমরা দেখি, ইউটিউবে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ তার ধর্মীয়করণ করা হচ্ছে। যখন দেখি আজকে হেফাজত থেকে বলা হচ্ছে—তাদের স্বার্থে দেশ চালাতে হবে। দেখি ব্লাসফেমি আইনের নতুন করে দাবি। বঙ্গবন্ধুকে সত্যিকার অর্থে শ্রদ্ধা জানাতে চাইলে এটাকে প্রাসঙ্গিকভাবে দেখতে হবে।’’

এ সময় সংসদে বঙ্গবন্ধুর শেষ ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু তার শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি হলেন। তিনি তাঁর শেষ ভাষণে এই সংসদে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে বলেছিলেন—‘বাংলাদেশে ধর্মের রাজনীতি আর হবে না। আর চলতে দেওয়া হবে না।’ এ বিষয়ে তিনি বারবার হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেছিলেন।’’

১৯৭৪-৭৫ সালের সময়কালের বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার প্রসঙ্গ টেনে মেনন বলেন, ‘ওই সময় তিনি দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠিন ও কঠোর বক্তব্য রেখেছিলেন। হুঁশিয়ারি করেছিলেন। আজকে আমার দেশে যখন দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের ধারার প্রসার হচ্ছে তখন প্রধানমন্ত্রী এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। এতে সন্দেহ নেই। সব সমাজে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

ছয় দফা নিয়ে বাম ঘরানার দলগুলোর অবস্থান ব্যাখ্যা করে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মেনন বলেন, ‘এই সংসদে আমাদের বিরুদ্ধে অনেক সময় অভিযোগ করা হয়, বলা হয়—আমরা সেদিন ছয় দফার বিরোধিতা করেছিলাম। এ বিষয়ে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই— ছয় দফাকে মুক্তির সনদ মনে করা হয়। কী মতিয়া গ্রুপ, কী মেনন গ্রুপ—আমরা এটাকে মুক্তির সনদ মনে করি নাই। আমরা আরও কিছু দাবি অন্তর্ভুক্তির কথা বলেছিলাম। আর সেই দাবিগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়ে ১১ দফায় রূপ নিয়েছিল। যার ফলে সেদিন অভ্যুত্থান ঘটেছিল। পূর্ববাংলার মুক্তির লড়াই সামনে এগিয়ে গিয়েছিল। আমরা দেখলাম ছয় দফার চেহারা পাল্টে গেল। আমরা পূর্ববাংলা বলি বলে, আমার সোনার বাংলা লিখি বলে—যে ছাত্রলীগ একদিন আমাদের যুক্তবাংলার অনুসারী বলতো, সেই ছাত্রলীগ সেদিন সামনে এগিয়ে গেল। আমরা পিছিয়ে পড়লাম। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু একক নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হলেন। বঙ্গবন্ধু তখন দলীয় নেতা ছিলেন না। ছিলেন দেশের নেতা। ছিলেন মানুষের নেতা। যে কারণে আমরা যারা তাঁর বিপরীত অবস্থানে ছিলাম, আমাদেরও সমানভাবে আদর করতেন। সবার প্রতি তাঁর সমান শ্রদ্ধাবোধ ছিল।’

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবতর্নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দুর্ভাগ্য বাহাত্তরে ফিরে এলে আমরা বঙ্গবন্ধুকে বিমানবন্দরে দেখতে যেতে পারিনি। কিন্তু পরের দিন গিয়েছিলাম তাঁর বাসভবনে। দেখেই বললেন, ‘শোন, দেশ স্বাধীন করেছি। এবার সমাজতন্ত্র করবো।’ আমরা বলেছিলাম, আপনি যদি সমাজতন্ত্র করেন আমরা আপনার সঙ্গে আছি। এরপর দীর্ঘ ইতিহাস। আমাদের অবস্থান ছিল বিরোধী দলে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর কারও থেকে আমাদের কম ছিল না।’’

বাকশাল গঠনের পর বঙ্গবন্ধু ডেকে পাঠিয়েছিলেন উল্লেখ করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘‘আমরা গেলে বন্ধু ড. ফরাসউদ্দিন বললেন— ‘তোমাদের বাকশালে যেতে বলবেন। তোমরা রাজি হয়ে যেও।’ জবাবে বলেছিলাম, আমরা কী বলবো সেটা আমরা জানি। আমাদের বঙ্গবন্ধু বললেন, সিরাতুল মুস্তাকিমের মানে উল্লেখ করে বললেন—‘শোন, সমাজতন্ত্র এবার করবো। বিয়ের প্রথম রাতে বিড়াল মারতে হয়। প্রথম রাতে বিড়াল মারতে পারিনি। এবার বিড়াল মারতে হবে।’ আমরা সম্মানের সঙ্গে বাকশালে যেতে অস্বীকার করলাম। বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, ‘ওয়েট অ্যান্ড সি।’ আমরা দেখলাম, তার সেই স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে গেলো। তাঁর ঘরের শত্রু বিভীষণরা খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করলো। সেই খুনিরা বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল আমরা তা জানি।’’

/ইএইচএস/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া