X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১
বর্জ্যবিদ্যুৎ প্রকল্প

ক্ষতিপূরণ এড়াতে ৩ হাজার টন বর্জ্য জোগাড় করতেই হবে ডিএনসিসিকে

শাহেদ শফিক
১২ নভেম্বর ২০২০, ২৩:৫৯আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২০, ১৪:৫৮

ময়লা নিয়ে যাচ্ছেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী (ফাইল ছবি) নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিনামূল্যে নিজের মালিকানাধীন জমির পাশাপাশি প্রতিদিন তিন হাজার টন বর্জ্য দেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এর চেয়ে কম বর্জ্য সরবরাহ করলে প্রতি টন ঘাটতির জন্য স্পন্সর কোম্পানিকে এক হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আবার যথাযথ সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও ডিএনসিসির বর্জ্য গ্রহণ না করলে প্রতি টন ঘাটতির জন্য উল্টো এক হাজার টাকা হারে ক্ষতিপূরণ পাবে ডিএনসিসি। দুই পক্ষকে এমন কঠিন শর্তে বেঁধেই ইনসিনারেশন পদ্ধতিতে বর্জ্যবিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিএনসিসি এলাকায় দিনে তিন হাজার মেট্রিক টনের মতো বর্জ্য উৎপাদন হয়। এমন বিধান রাখায় ডিএনসিসি বর্জ্য সংগ্রহে আগ্রহী হবে। কোথাও ময়লা পড়ে থাকবে না। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু প্রকল্পটি বাণিজ্যিক তাই এতে ডিএনসিসির জন্য রাজস্ব রাখা উচিত ছিল।

ডিএনসিসি জানিয়েছে, ইনসিনারেশন পদ্ধতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন ও প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সরকারের এ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী চলতি বছরের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে ১০ শতাংশ তথা দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরইমধ্যে সৌরবিদ্যুৎ এবং বায়ু বিদ্যুতের ওপর প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ডিএনসিসির আমিন বাজার ল্যান্ডফিল-এ বিদ্যুৎ বিভাগের এই প্রস্তাব অনুমোদন করে। প্রকল্প অনুযায়ী ডিএনসিসি স্পন্সর কোম্পানিকে তার ল্যান্ডফিলের নির্ধারিত ৩০ একর জমি ও দিনে ৩ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য সরবরাহ করবে। তবে ৩০ একরের বেশি জমির প্রয়োজন হলে তা স্পন্সর কোম্পানি নিজ উদ্যোগে ক্রয় বা দীর্ঘমেয়াদে লিজ নেবে। প্রকল্পে বর্জ্য পুড়ে তৈরি হওয়া ছাই রাখার জন্য আঙিনা নির্মাণের জন্য অতিরিক্ত ২০ একর জমির প্রয়োজন হবে। প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরকারই কিনে নেবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত নেন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের। এ জন্য দফায় দফায় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সভা করেন। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে এমন কয়েকটি দেশও ভ্রমণ করেন তিনি।

মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানিয়েছে, গত বছরের ২০ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কমিটি ডিএনসিসিতে দাখিলকৃত ১৭টি প্রস্তাব যাচাই করে ৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবসহ যাবতীয় কাগজপত্র বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠায়।

প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং প্রক্রিয়াকরণ কমিটির সুপারিশের আলোকে বেসরকারি খাত বিদ্যুৎ উৎপাদনের নীতি ১৯৯৪-এর আওতায় চায়না মেশিনারিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএমইসি) কর্তৃক ডিএনসিসিতে ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইনসিনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। আগামী ২০ মাসের মধ্যে সিএমইসি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। চুক্তির মেয়াদ হবে ২৫ বছর।

স্পন্সর কোম্পানি নিজ ঝুঁকিতেই প্লান্ট স্থাপন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বহন করবে। বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রির মাধ্যমে ব্যয় নির্বাহ করবে তারা। সিটি করপোরেশন প্লান্ট স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান এবং নিয়মিত বর্জ্য সরবরাহ করবে।

ময়লা তোলার কাজ করছেন একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্লান্টটি চালু হলে সেখানে প্রতিদিন তিন হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য সরবরাহ করতে হবে। এই পরিমাণ বর্জ্য সরবরাহ করতে না পারলে উত্তর সিটি করপোরেশনকে প্রতি টন ঘাটতি বর্জ্যের জন্য এক হাজার টাকা হারে স্পন্সর কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। অপরদিকে সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও ডিএনসিসি কর্তৃক সরবরাহকৃত বর্জ্য গ্রহণ না করা হলে প্রতি টন ঘাটতি বর্জ্যের জন্য একই ভাবে ডিএনসিসিকেও স্পন্সর কোম্পানি ক্ষতিপূরণ দেবে। এ কারণে বর্জ্য সংগ্রহে বাড়তি তাগিদ থাকবে ডিএনসিসির। এ পরিমাণ বর্জ্য নিয়মিত সংগ্রহ করতে হলে দেখা যাবে আর কোথাও ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকবে না।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন কোনও স্বার্থ ছাড়া জমি দেবে আবার বর্জ্যও দেবে, এটা হতে পারে না। বর্জ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তো করপোরেশনের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। যেহেতু এটা বাণিজ্যিক প্রকল্প সেহেতু সিটি করপোরেশনের স্বার্থটাও দেখা দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্প থেকে সরকার প্রযুক্তিগত কিছু শিখতে পারবে কিনা সেটাও দেখা দরকার। দক্ষ জনবল তৈরি হবে কিনা এমন বিষয়টাও থাকতে হবে যাতে এখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে অন্য সিটি করপোরেশন এলাকায় অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগানো যায়।’

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পটি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের। আমরা তাদের জমি ও বর্জ্য দেব। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। আমরা যদি এখান থেকে রাজস্ব আয়ের চিন্তা করি তবে বিদ্যুতের খরচ বাড়বে।’

ডিএনসিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের জন্য ডিএনসিসি এখন দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য সরবরাহ করতে পারবে। ভবিষ্যতে সম্প্রসারিত এলাকা থেকে বর্জ্য অপসারণ পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হলে এ বর্জ্যের পরিমাণ প্রতি বছর ৫ থেকে ১০ শতাংশ করে বাড়বে।

মেয়র আরও বলেন, ‘প্রকল্পটির কাজ শুরু হতে আরও অন্তত দেড়-দুই বছর লেগে যাবে। এর মধ্যে আমাদের নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে পুরোদমে বর্জ্য সংগ্রহ শুরু হলে বর্জ্যের পরিমাণ বাড়বে। আমাদের এখন বিপুল পরিমাণ বর্জ্য আমিন বাজারে রয়েছে। এ ছাড়া সাভার থেকেও ময়লা সংগ্রহ করতে পারি। আমাদের ময়লার কোনও ঘাটতি হবে না। সুতরাং ক্ষতিপূরণও দিতে হবে না। তবে তারা যদি আমাদের ময়লা গ্রহণ না করে তবে আমরা ক্ষতিপূরণ পাবো।’

এই প্রক্রিয়ায় বর্জ্য প্রায় সম্পূর্ণ পুড়িয়ে বর্জ্যের আয়তন ৯০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব বলে মনে করছে সিটি করপোরেশন। এর ফলে পৌর-বর্জ্য রাখার জন্য জমির চাহিদাও হ্রাস পাবে। আবার ইনসিনারেশন প্রযুক্তি প্রয়োগে বর্জ্যের দহনে সৃষ্ট গ্যাসীয় নিঃসরণও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে বিশ্বে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হওয়ায় মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বেড়েছে ভোগ ও বর্জ্যের পরিমাণও। কিন্তু এসব বর্জ্য নিষ্পত্তির কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় নদ-নদী, খাল-বিল, ড্রেনে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন হলে দেশের সকল সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং জেলা পর্যায়ে ইনসিনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে সরকার।

/এফএ/
সম্পর্কিত
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
রানা প্লাজার ভুক্তভোগীর আক্ষেপ‘কত সাহায্য চাওয়া যায়? আমাকে এখন দেহ ব্যবসা করার কথাও বলে’
মুগদায় উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করলেন হাইকোর্ট
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক