X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১
তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের আট বছর

আগুন নেভেনি এখনও

উদিসা ইসলাম
২৪ নভেম্বর ২০২০, ১০:০০আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৫৬

তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ড

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর। আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন গার্মেন্টসে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। পুড়ে মারা যান ১১২ শ্রমিক। ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও স্বজন হারানো শ্রমিকের মনে এখনও জ্বলছে ছাইচাপা আগুন। আহত শরীরে কর্মহীন জীবনে, সম্মানজনক ক্ষতিপূরণের অধিকার আদায়ের যে আন্দোলন; সে আগুনও জ্বলছে আট বছর ধরে।

তাজরীনের মালিকসহ বিচারের মুখোমুখি হওয়া কর্মকর্তারা আছেন জামিনে। আদালতে দিনের পর দিন সাক্ষী হাজির না হওয়ায় ঝুলে গেছে মামলা। অগ্নিকাণ্ডের আট বছর হতে চলছে। এখনও ভুক্তভোগী ২৫ পরিবার গত ৬৭ দিন ধরে (১৮ সেপ্টেম্বর থেকে) ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন দাবি নিয়ে।

অগ্নিকাণ্ডের পর কিছু আর্থিক অনুদান ছাড়া কোনও ক্ষতিপূরণ পায়নি পরিবারগুলো। বাংলাদেশের শ্রম আইনের ক্ষতিপূরণের ধারাটি পরিবর্তন সাপেক্ষে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবি নিয়ে হাজির হয়েছেন তারা। অভিযুক্ত মালিকের বিচারের অগ্রগতিও হয়নি। সাক্ষ্যগ্রহণের নামে চলছে টালবাহানা।

কেউ কেউ তালিকা নিয়ে যায়

অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা তাজরীন ফ্যাশনের পাঁচতলার সুইং অপারেটর জরিনা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'আমি আজ পঙ্গু। আমরা ন‌্যায্য দাবি নিয়ে এসেছি, কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করছে না। কেউ কেউ আসে। তালিকা নিয়ে যায়। কিন্তু কেন তালিকা নেয় তা জানায় না।

জরিনা আরও বলেন, আমার ঘর নাই। পরিবার নিয়ে যেন চলতে পারি সেই মোতাবেক ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক, এটাই আমাদের মূল দাবি।

ভবনের চারতলা থেকে লাফ দেওয়ায় গুরুতর আহত সোলাইমান হোসেন বলেন, ১৫ দিন আগে বিজিএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের তালিকা নিয়ে গেছে। কিন্তু তারা তালিকা নিয়ে কী করলো সে বিষয়ে আমরা জানি না। ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ায় মেরুদণ্ডে আঘাত পান সোলাইমান। ভেঙে যায় ডান পা। এখনও সেই ক্ষত নিয়ে চলছেন। এ পর্যন্ত কোনও ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, চার বছর নিজের খরচে চিকিৎসা করিয়েছি। চার বছর পরে কিছু টাকা পেয়েছিলাম। কিন্তু ততদিনে তারচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। আমাদের দাবি, আমাদের পুনর্বাসন করা হোক। সম্মানজনক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক।

বিচার শেষ হবে কবে?

তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাত বছর পরও রাষ্ট্রপক্ষ শুনানিতে সাক্ষী হাজির করতে পারছে না বলে মামলায় অগ্রগতি নেই।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। সেই ঘটনায় করা মামলায় কয়েকদিন পর পর নতুন করে শুধু শুনানির দিনই ধার্য হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ছিল। বিচারক উপস্থিত না থাকায় আদালত বসেনি। অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিকদের অনেকে যারা গত ক্ষতিপূরণের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করছেন তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তী শুনানির তারিখ আগামী বছরের ১৩ জানুয়ারি।

পরের তারিখে সাক্ষী হাজির করা সম্ভব হবে উল্লেখ করে তাজরীনের মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এম এ মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যিনি সমন্বয়নের দায়িত্বে ছিলেন তিনি অন্য দায়িত্ব নিয়ে চলে যাওয়ায় কিছুটা স্থবিরতা এসেছিল। নতুন একজনকে দায়িত্ব দিয়ে প্রসিকিউশন টিম করে দেওয়া হয়েছে। আগামী তারিখে আমরা সাক্ষী হাজির করতে পারব বলে আশা করছি।

এতদিন সাক্ষী হাজির করতে না পারার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বেশিরভাগই ভাসমান। এক জায়গায় থাকে না। ফলে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

কবে নাগাদ মামলা শেষ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মামলা নিয়ে আমিও বিপদে আছি। ১০৪ জন সাক্ষী, আসামি একাধিক। আসামিদের পৃথক পৃথক আইনজীবী থাকলে তারা প্রত্যেকে সাক্ষীদের জেরা করবেন। ফলে সময় লাগবে।

ক্ষতিপূরণের আইন পরিবর্তনের দাবি যে কেউ তার জায়গা থেকে তুলতেই পারে। আইনানুযায়ী শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে উল্লেখ করে শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এ এম মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আইন পরিবর্তনের ইস্যু নিয়ে আমরা কথা বলতে পারি না। সেটি মন্ত্রণালয় করবে। আর মনে রাখতে হবে এটি একটি লম্বা প্রক্রিয়া। এ বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি করোনাক্রান্ত হওয়ায় কথা বলতে পারেননি।

উল্লেখ্য, রাজধানীর অদূরে সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ১১২ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যান। এছাড়া অসংখ্য শ্রমিক গুরুতর আহত হন। ওই ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা হয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এ কে এম মহসিনুজ্জামান খান ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে তাজরীন ফ্যাশনের এমডি দেলোয়ারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটভুক্ত বাকি আসামিরা হলেন, তাজরীন ফ্যাশনের চেয়ারম্যান মাহমুদা আকতার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুলাল, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনারুল, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল-আমিন, স্টোর ইনচার্জ আল-আমিন ও লোডার শামীম মিয়া।

/এফএ/আপ-এনএস/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
গরমে পানির সংকট রাজধানীতে, যা বলছে ওয়াসা
গরমে পানির সংকট রাজধানীতে, যা বলছে ওয়াসা
গরমে নাকাল পথচারীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করলো ফায়ার সার্ভিস
গরমে নাকাল পথচারীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করলো ফায়ার সার্ভিস
বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়