গাঁও-গ্রামে একটা গল্প চালু আছে—এক বকের দুই ছানা। এর মধ্যে একটি ছানা মায়ের মহা আহ্লাদের। একদিন নদী পার হতে গিয়ে মা বক আহ্লাদের ছানাকে নিয়েছে ঠোঁটে, আর অনাদরের বাচ্চাকে নিয়েছে খুব অবহেলায় পিঠে। নদীর মাঝ বরাবর এসে মা তার আহ্লাদের ছানাকে আহ্লাদ করে জিজ্ঞেস করতে গেছে যে, ও আমার আহ্লাদের ছানা তোর কষ্ট হচ্ছে নাতো? অমনি আহ্লাদের ছানা গেছে ঠোঁট থেকে নদীতে পড়ে, অনাদরে ফেলে রাখা পিঠের বাচ্চাটা পিঠে বসে বহাল তবিয়তেই নদী পার হয়েছে।
দেশ-বিদেশে বর্তমানে প্রধান সমস্যা হচ্ছে ধর্মের নামে হত্যা, এবং তারপরের যে সমস্যাটা খুব গুরুতর আকার ধারণ করেছে, তা হচ্ছে হত্যাগুলোর সমতা করার আপ্রাণ চেষ্টা। একটা হত্যা হলে হত্যা সমর্থক বা মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী, হত্যাকারীর অপরাধ লঘু করার জন্য কলম আর চাপাতিকে সমমানের অস্ত্র প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। অনুভূতির আঘাতের সঙ্গে চাপাতির কোপে হত্যার আঘাতকে এক কাতারে আনতে নিজের মনগড়া ধর্মান্ধ চিন্তাকে যুক্তি নাম দিয়ে, যুক্তি শব্দটার গণধর্ষণ করছেন। হত্যার সমর্থনে রাজনৈতিক সুবিধাবাদী নেতারা সুবিধা নিচ্ছেন মৌলবাদকে জি হুজুর করে। একইসঙ্গে সরকারও আস্কারা পাচ্ছে। রাখছে দেশকে অরক্ষিত। এ কারণে যথারীতি মৌলবাদীরাও প্রশ্রয় পেয়ে যাচ্ছেন। আর এরই সুযোগে সেতার বাদককেও মারছেন তারা। ফলে ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ বাড়ছে সুস্থ মানুষের ভেতর। ভীতি জন্মাচ্ছে জনমনে ধর্ম সম্পর্কে। বিশ্বে নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতমভাবে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সর্বশেষ ফলাফল হিসাব করলে দেখা যাচ্ছে, বকের আদরের বাচ্চার মতো নদীতে ডুবে ধর্মের করুণ মৃত্যুটা হত্যার সমর্থক বা মধ্যপন্থা অবলম্বনকারীর মহা আহ্লাদের কারণেই হচ্ছে।
আরও পড়তে পারেন: ‘যদি’ ‘কিন্তু’ বাদ দিয়ে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ করার আহ্বান
আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়োদোঁ মনে করছেন, একের পর এক হত্যাকাণ্ডের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। কাল এটা সত্যিতে পরিণত হতে সময় নেবে না। সারাবিশ্ব জঙ্গি আতঙ্কে জর্জরিত অথচ আমাদের দেশের ধর্মের নামে হত্যাগুলোর সমর্থকরা ধারণা ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছেন, দেশে ধর্মের নামে হত্যাগুলো ব্লগে লেখালেখি ও নাস্তিকতার সঙ্গে জড়িত। যারা জেগে জেগেও ঘুমায় সেই ধর্মান্ধ সমাজের কাছে কোনও আশা নেই। কিন্তু শিক্ষিত সমাজটা যতদিনে হত্যাকে সব বিবেচনার আগে ‘না’ বলতে শিখবে, ততদিনে হয়ত দেশ হয়ে যাবে মেধাশূন্য মৃত্যুপুরী।
লেখক: ব্লগার